টুংটাং শব্দে মুখরিত মোংলার চটেরহাটের কামারপট্টি

প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২৫, ১১:২৮

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
যায়যায়দিন

আর মাত্র একদিন বাদেই পালিত হবে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আজাহা বা কোরবানির ঈদ।

এ ঈদকে সামনে রেখে একদম শেষ মুহুর্তের ব্যস্ত সময় পার করছেন মোংলার  চটেরহাট বাজারের কামার শিল্পীরা।

দিন যতই যাচ্ছে, ততই বাড়ছে কামার শিল্পীদের ব্যস্ততা। কোরবানি ঈদে গরু, ছাগল, মহিষ, উট কোরবানির পশু হিসেবে জবাই করা হয়। ঈদের দিন সকাল থেকেই কোরবানির পশু জবাই চলে। এসব পশুর গোশত কাটতে দা, ছুরি, বঁটি, ধামা, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অপরিহার্য। যেহেতু কোরবানির পশু কাটা কাটিতে চাই এসব ধারালো অস্ত্র। তাই তো কামাররা এখন এসব তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

শুক্রবার (০৬'মে) সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কামারেরা দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি'সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহার পিটাপিটিতে টুংটাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে এসব কামারের দোকান গুলো। দম ফেলারও যেন সময় নেই তাদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন এ কামার শিল্পীরা। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের কাজ। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির মৌসুমে ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামারদের।

এ সময় অজিত কুমার দাস নামের এক কামারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ২০০-৩০০ টাকা, দা ৪৫০-৮০০ টাকা, বঁটি ৩০০-৫৫০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০-৩ হাজার টাকা, চাপাতি ৬০০-২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কেজি উপরের নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হয়। পশু জবাইয়ের সরঞ্জামাদি কিনতেও লোকজন ভিড় করছেন কামারদের দোকানে। আগে যেসব দোকানে দু’জন করে শ্রমিক কাজ করতেন, এখন সেসব দোকানে ৩-৫ জন করে শ্রমিক কাজ করছেন। কামার দোকানদারদের অভিযোগ, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লার দাম ও লোহার দাম বেড়ে গেছে। অপরদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। ছুরি শান দেওয়ার জন্য ৫০ টাকা থেকে শুরু করে কাজের গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে ১০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কামারদের বেচা-কেনা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

এ সময় মিন্টু সরদার নামের এক কামার বলেন, সারা বছর তেমন কাজ থাকে না। কোরবানি ঈদের সময় আমাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। ঈদ চলে গেলে আমাদের বসে থাকতে হয়, কাজ থাকে না। ঈদকে সামনে রেখে কাজের চাপ বেশি। কাজের চাপে কখন খাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে আমরা টেরও পাই না। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে আমাদের বিক্রি তত বাড়ছে।

মোঃ মশিউর রহমান নামের এক ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে  জানা যায়, আর মাত্র একদি পরেই কোরবানি ঈদ তাই ছুরি বানাতে কামারের দোকানে এসেছি। আগে যে ছুরি ক্রয় করতাম ৪১০ থেকে ৫৪০ টাকা। সেই ছুরি এখন নিজেদের লোহা দিয়ে বানিয়ে নিতে ১ হাজার টাকা লাগছে।

তিনি আরও বলেন,  আগের চেয়ে দাম অনেক বেশি। আগে যে বঁটি বানাতেন ২০০-৩০০ টাকা সে বঁটি এখন বানাতে হচ্ছে ৫০০-৮০০ টাকা দিয়ে। তবে কেজি প্রতি নিচ্ছে ৮০০ টাকা।

এ সবের পরেও মানুষ অতি আনন্দে ঈদ উপলক্ষে টাকা দিকে না তাকিয়ে জিনিস ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই খুঁশি।