শোলাকিয়ায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় লাখো মুসল্লির নামাজ আদায়

প্রকাশ | ০৭ জুন ২০২৫, ১১:৫৭

যাযাদি ডেস্ক
কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া মাঠে ঈদের নামাজ।

সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া মাঠে ঈদের নামাজ। প্রতিবছরের মতো এবারও শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির ঢল ছিল। 

শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার ১৯৮তম নামাজ। গত কয়েকদিন ধরেই থেমে থেমে বৃষ্টি। তাই মাঠ কিছুটা কর্দমাক্ত। তবে ঈদের আগেরদিন সূর্যের কিছুটা দেখা মিলে। আর তাতে স্বস্তি পায় মাঠে আসা মুসুল্লীরা। 


কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে শনিবার (৭ জুন) সকাল ৯টায় শুরু হয় ঈদের নামাজ। এতে ইমামতি করেন ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক কারণে ইমামতি থেকে বাদ দেওয়া হয় তাকে। এবার নতুন করে আবার পুনর্বহাল করায় তিনিও অত্যন্ত আনন্দিত।


নামাজ শেষে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।  


ঈদের জামাতকে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ রাখতে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয় শোলাকিয়া ও আশাপাশের এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ মাঠে।  

আকাশ মেঘলা থাকলেও ভোর থেকেই শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের দিকে যেতে থাকেন মুসল্লিরা। কেউ গাড়িতে চড়ে, কেউ ইজিবাইকে, কেউ সাইকেলে, কেউবা পায়ে হেঁটে। প্রতিবারের মতো এবারও মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধায় দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে রেল কর্তৃপক্ষ। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে, অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জে যায়। 


ঈদগাহ এলাকায় কয়েকটি মেডিক্যাল টিম ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল মোতায়েন ছিল। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিল বিপুল সংখ্যক স্কাউট সদস্য।  

অন্যদিকে, নারীদের জন্য শহরের সরযূবালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৃথক ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়। সেখানেও বহু নারী ঈদ জামাতে অংশ নেন।

নামাজ শুরুর আগে মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) কাজেম উদ্দীন।

ঈদুল আজহায় কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা থাকায় জামাতে লোক সমাগম কিছুটা কম হয়। তারপরও প্রতিবারের মতো এবারও লক্ষাধিক মুসল্লি এ জামাতে নামাজ আদায় করেছেন।

ঈদগাহ মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দুই প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যা ব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিশ্চিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোষাকে নজরদারি ছিল বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এছাড়াও শহরসহ মাঠের প্রবেশ পথগুলোতে ছিল সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচটাওয়ার। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ তল্লাশি করা হয় মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। ছিল পাঁচটি আর্চওয়ে। তাছাড়া শোলাকিয়া মাঠ ও শহরের যত অলিগলিতে, সবখানে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি।  

শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ উপলক্ষে শহরের মোড়ে মোড়ে নির্মাণ করা হয় শুভেচ্ছা তোড়ন। রাস্তার দু’পাশে টাঙানো হয় রঙ-বেরঙের পতাকা ও ব্যানার। সব মিলিয়ে কিশোরগঞ্জে ছিল বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ। 

জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত। প্রতিবছরের মতো, এবারও শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির ঢল নামবে, এমনটাই আশা স্থানীয়দের।