চট্টগ্রামে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চামড়া ঠাঁই হলো ময়লার ভাগাড়ে
প্রকাশ | ০৯ জুন ২০২৫, ১৩:৫১

চট্টগ্রাম নগরের অলিগলি থেকে লাভের আশায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। সরকার এবার চামড়ার দাম বাড়ানোর কারণে লাভের মুখ দেখবেন এমনটাই ভেবেছিলেন তারা।
কিন্তু কেনা দামেও চামড়া বিক্রি করতে না পেরে সে আশা এখন গুড়েবালি। শেষমেষ চামড়ার ঠাঁই হয় ময়লার ভাগাড়ে। সংগ্রহ করা কোরবানির চামড়া বেচতে না পেরে পথে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
নগরীর আতুড়ার ডিপো, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদের চৌমুহুনী এবং অক্সিজেনের নয়াহাট এলাকার সড়কে এসব চামড়া পড়ে ছিল। ন্যায্য দাম না পেয়ে ক্ষোভে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা রাস্তার পাশে বা ডাস্টবিনে রেখে যান চামড়া।
রোববার সকাল থেকে এসব নষ্ট চামড়া সরানোর কাজ শুরু করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দর না পাওয়ায় অনেকে সড়কে চামড়া ফেলে চলে গেছেন।
এ বছর সরকার চামড়ার দাম বাড়ালেও বিগত বছরগুলোর মতোই অনেক কম দামেই চামড়া কিনেছেন আড়তদাররা। ন্যায্য দাম না পেয়ে লোকসানের মুখে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়দের ভাষ্য, অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী সেখানে বিকাল থেকে চামড়া নিয়ে অপেক্ষা করেছিলেন।
কিন্তু আড়তদারদের সঙ্গে দরদামে না মেলায় রাতে অনেকেই সেসব চামড়া ফেলে চলে গেছেন।
আবার অনেক আড়তদার চামড়া কিনলেও সেগুলো শ্রমিকের অভাবে সংরক্ষণ করতে না পেরে নষ্ট হয়ে গেছে সড়কেই।
আবার আড়াতদারদের অনেকেই দাবি করেছেন, তারা চামড়া কিনলেও শ্রমিকের অভাবে লবণ দিতে পারেননি। এ কারণে তাদের অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমি বিক্রেতা কেনা দামেও চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। কেউ চামড়া পুতে ফেলেছেন। কেউ রাস্তায় ফেলে চলে গেছেন।
অবশ্য কেউ কেউ লোকসানে বিক্রি করেছেন। ঈদের দিন চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমি বিক্রেতারা চামড়া নিয়ে বসেন। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় চৌমুহনী এলাকায়। অলিগলি থেকে চামড়া কিনে এখানেই এনে জড়ো করেন মৌসুমি বিক্রেতারা। পরে আড়তদার কিংবা তাদের প্রতিনিধিরা এসে এ চামড়া নিয়ে যান।
চামড়া মূলত নিয়ে যাওয়া হয় নগরের আতুরার ডিপো এলাকায়। সেখানে রয়েছে বড় আড়ত। উপজেলা থেকেও চামড়া আসে এসব আড়তে।
নগরীর হালিশহর এলাকায় চামড়া বিক্রি করতে যাওয়া মৌসুমি ব্যবসায়ী আবদুল কাইয়ুম বলেন, প্রতি পিস চামড়া ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনেছি।
আমি প্রায় ১৭০টি চামড়া কিনেছি। এখন আড়তদারেরা চাচ্ছেন ২০০ টাকা। তারা সিন্ডিকেট করে চামড়া কিনছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে প্রতি পিস চামড়া ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছেন কোরবানিদাতারা। তবে আড়তদাররা বিকেলে প্রতি পিস গরুর চামড়া ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কিনেছে।
তবে রাত ৯টার পর নগরীর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও ট্রাকে ট্রাকে চামড়া নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায় অবস্থিত আড়তগুলোতে আসতে থাকে। তখন চামড়া প্রতি ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। পরে অনেক বিক্রেতা চামড়া বিক্রি না করে চলে যায়।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, চামড়া সংগ্রহ করার পর লবণ দিতে হয়। তাহলে ভাল দাম পাওয়া যায়। কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তা না করে চামড়া নষ্ট করে ফেলেন।
আবার অনেকে না বুঝে বেশি দাম দিয়ে চামড়া কিনে আনেন। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী বাড়তি দাম ধরে রেখেছিলেন। অথচ আমরা কিন্তু ৬০০-৭০০ টাকায়ও চামড়া কিনেছি।
কোরবানির ঈদে পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে। আর বকরির চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
২০২২ সালে সাড়ে তিন লাখ, ২০২৩ সালে চার লাখ, ২০২৪ সালে সাড়ে চার লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছিল।
এবারও সাড়ে চার লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন আড়তদাররা। এবার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করার আশা করছেন তারা।
তবে চামড়া সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রার হার বাড়লেও কমছে আড়তদারের সংখ্যা। চট্টগ্রাম মহানগরের আতুরার ডিপো এলাকায় চামড়ার আড়তগুলো অবস্থিত।
চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির তথ্যমতে, এই সমিতির সদস্যভুক্ত ১১২ জন আড়তদার রয়েছে।
সদস্যভুক্ত থাকলেও ২০২২ সালে এই ব্যবসায় জড়িত ছিলেন ৪৫ জন। বর্তমানে চামড়া আড়তদারের সংখ্যা আরও কমে ৩০ জনে ঠেকেছ। তারাই এখন চট্টগ্রামের চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। #০৯-০৬-২০২৫#