নড়াইলে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি স্নাইপার রাইফেল নাকি এয়ারগান!
প্রকাশ | ১০ জুন ২০২৫, ১৭:২৭

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি স্লাইপার রাইফেল না এয়ারগান-এ নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে নেটিজেনরা নানা মন্তব্য করায় উদ্ধার হওয়া অস্ত্র নিয়ে এখন আলোচনা তুঙ্গে।
গত রোববার (৮ জুন) মধ্যরাতে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া এলাকায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ওই এলাকার সোহান মোল্যা (২৬) নামে একজন শিক্ষার্থীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তার খাটের নীচ থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
পরে সোমবার সকালে গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় নড়াইল সেনা ক্যাম্প। তাতে সেনাবাহিনী দাবি করেন, উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি একটি ৪ দশমিক ৫ ক্যালিবারের 'স্নাইপার নাইট্রো রাইফেল'।
সোমবার দিনভর সেনাবাহিনীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বিভিন্ন মিডিয়াতে সংবাদ প্রচারিত হলে 'অস্ত্রটি' নিয়ে শুরু হয় নানা মন্তব্য। অনেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটির ছবি দিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন।
মন্তব্যের ঘরে অনেকেই দাবি করেন, 'এটি কোনো স্নাইপার রাইফেল নয়, বরং একটি উন্নতমানের এয়ারগান'। অনেকেই এটিকে এয়ারগান দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখিও করেছেন। কেউ কেউ বলছেন এটি একটি 'শ্যুটিং রাইফেল।' আবার কেউ বলছেন জুলাই অভ্যুথ্যানে ব্যবহৃত অস্ত্র এটি।
এ ব্যাপারে আজ মঙ্গলবার সকালে চেষ্টা করেও নড়াইল সেনা ক্যাম্পের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
তবে গত সোমবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছিলেন, কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া গ্রামের সোহান মোল্যা নামের এক ব্যক্তি একটি অবৈধ স্নাইপার রাইফেল ব্যবহার করে স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করছিলেন বলে খবর পায় সেনাবাহিনী। এরপর গত রবিবার রাতে সোহানের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে সেনাবাহিনী। এ সময় সোহানের বিছানায় নিচে লুকিয়ে রাখা একটি ৪ দশমিক ৫ ক্যালিবারের স্নাইপার নাইট্রো রাইফেল (টেলিস্কোপ ও সাইলেন্সার যুক্ত) উদ্ধার করা হয়। তবে সে সময় সোহান বাড়িতে না থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
সরেজমিন গত সোমবার (৯ জুন) বিকেলে পুরুলিয়া এলাকায় সোহানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সোহান ও তার পরিবারের কেউ নেই। কথা হয় সোহানের আশেপাশে কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানায়, সোহান খুলনায় একটি কলেজে পড়াশোনা করে। কিন্তু কোন কলেজে পড়াশোনা করে তা তারা কেউ জানেন না। এলাকায় নানা ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটের সঙ্গে জড়িত সোহান।
তবে সোহানের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটিকে এয়ারগান দাবি করেছেন এলাকার অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই প্রতিবেশী বলেন, 'সোহানের বাড়ি থেকে সেনাবাহিনী যা উদ্ধার করেছে, তা একটি এয়ারগান। অনেক আগেও একবার সেনাবাহিনী এটি নিয়ে গিয়েছিল। তখন সোহানরা তাদের কাগজপত্র দেখিয়ে এটি ফেরত এনেছিল।'
তারা আরো জানান, 'প্রথমে এই ইয়ারগানটি পার্শ্ববর্তী এলাকার রাতুল নামে একটি ছেলের কাছে ছিল। পরবর্তীতে সোহান এটি কিনেছিল।'
তাদের কথা অনুযায়ী রাতুলের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে পুরুলিয়া মোড়ে রাতুলের বাবা মো. জাকারিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, তার ছেলে রাতুল ঢাকার একটি শ্যুটিং ক্লাবের সদস্য ছিল। রাতুল খুলনা থেকে একটি এয়ারগানও কিনেছিল। পরে যেখান থেকে কেনা সেখানেই আবার সেটি ফেরত দিয়েছিল। এরপর সেটি পাশের এলাকার সোহান কিনেছিল।
জাকারিয়া আরো বলেন, ওই এয়ারগান দিয়ে সোহান মানুষকে ভয়ভীতি দেখায় এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনেক আগে একবার সোহানের বাড়ি থেকে সেটি সেনাবাহিনী নিয়ে গিয়েছিল। সেবার আমাদের বাড়িতেও এসেছিল সেনাবাহিনী। পরে সোহানরা কাগজপত্র দেখিয়ে নিয়ে এসেছিল।
তবে গত রোববার রাতে সোহানের বাড়ি থেকে সেনাবাহিনীর উদ্ধার করা করা অস্ত্রটি সেই ইয়ারগান কি না তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি জাকারিয়া। এমনকি ছবি দেখালেও চিনতে পারেননি যে, এটিই সেটি কিনা।
রোববার রাতে উদ্ধারের পর সোমবার সকালে রাইফেলটি কালিয়া থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার বেলা ১২ টার দিকে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।
কালিয়া থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'সেনাবাহিনী হস্তান্তরের পর সেটি আমাদরের হেফাজতে রয়েছে। আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব যে, ' এটি ফায়ারিং আর্মস নাকি এয়ারগান।' এরপর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। '