মতলব উত্তরে ভিটেমাটি রক্ষায় মানববন্ধন; ভূমি রক্ষায় কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০২৫, ২০:২২

নাজমুল প্রধান, মতলব (চাঁদপুর)
ছবি: যায়যায়দিন

চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ও এখলাছপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত সাতটি মৌজার তিন হাজার একর কৃষিজমিকে বেআইনিভাবে ১নং খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়ার উদ্যোগ এবং উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কার্যক্রম চালানোর বিরুদ্ধে এলাকাবাসী এক বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

শুক্রবার (১৩ জুন) বিকেল ৩টায় মোহনপুর ইউনিয়নের বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাহেরচর, চরওয়েবষ্টার, নাছিরার কান্দি, দিয়ারা বোরচন, নাপিত মারা, উত্তর বাহেরচর ও এখলাছপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বোরচর—এই ৭টি মৌজার প্রায় ৩০৩৭.৮৫ একর কৃষিজমিকে খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য লীজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অথচ এসব জমি বহু বছর ধরে কৃষিকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং তা নিয়ে উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা (Status-quo) আদেশও বলবৎ রয়েছে।

চাঁদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সেলিমুস সালাম বলেন, সরকার উন্নয়নের নামে সাধারণ কৃষকের জমি কেড়ে নিচ্ছে। হাজার হাজার কৃষক পরিবার চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ভূমি রক্ষায় আমরা শেষ পর্যন্ত আইনি ও সাংবিধানিক আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরীফ মাহমুদ ফেরদৌস শাহীন। তিনি বলেন, এই জমি নিয়ে হাইকোর্ট একটি স্পষ্ট Status-quo আদেশ দিয়েছেন, যার মানে হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি বজায় রাখতে হবে। এই আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় কোনো ধরনের ভূমি অধিগ্রহণ, বন্দোবস্ত বা উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা আদালত অবমাননার শামিল।
যদি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই আদেশ অমান্য করে কার্যক্রম চালায়, তাহলে তা সরাসরি সংবিধান ও আদালতের প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা প্রয়োজনে আদালত অবমাননার মামলা করবো। জনগণের স্বার্থে আইনি লড়াই চলবে।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন প্রফেসর রূপ নারায়ণ, ইউপি সদস্য মো. শাহাদাত হোসেন, নজরুল ইসলাম, খোকন বেপারী, আনছার সৈয়াল, মো. মিলন মুন্সি, বোরহান মিয়াজি, ইকবাল মাঝি, রানু বেগম ও মনির হোসেন গাজি।

বক্তারা জানান, এই এলাকাগুলোতে বছরে চারটি ফসল উৎপাদন হয়। প্রায় ২০-২২ হাজার মানুষের বসবাস। আছে কবরস্থান, স্কুল, মাদ্রাসা, বাজার। তারা বলেন, “আমাদের গায়ে এক বিন্দু রক্ত থাকতেও কেউ আমাদের ভিটেমাটি দখল করতে পারবে না।”

মানববন্ধন শেষে বক্তারা ঘোষণা দেন, অবৈধ লীজ প্রক্রিয়া ও আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে, প্রয়োজনে ঢাকায়ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।