বাগাতিপাড়ায় গেটম্যান আছে: ৭ বছরেও নির্মাণ হয়নি গেট ও ডিউটিঘর

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২৫, ১১:২৭

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি:
বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়নের ঠেঙ্গামারা রেলগেট এলাকায় একটি লেভেল ক্রসিং । ছবি: যায়যায়দিন

সাত বছর থেকে গেটম্যান আছে, নেই গেট ও তাদের থাকার ডিউটিঘর। ডিউটিঘর না থাকায় ৭ বছর ধরে গাছের নিচে ডিউটি পালন করে আসছেন নাটোরের বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়নের ঠেঙ্গামারা রেলগেট এলাকায় একটি লেভেল ক্রসিংয়ে থাকা গেটম্যান সাইফুল ইসলাম (৩০) ও আফসার উদ্দিন সোহাগ (৩২)।

গেটম্যান সূত্রেজানাযায়, ২০১৯ সালে প্রকল্পের মাধ্যমে সকল নিয়মনীতি মেনেই নাটোরের আব্দুলপুর থেকে পার্বতীপুর অভিমুখে বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়নের ঠেঙ্গামারা লেভেলক্রসিং এ গেটম্যান হিসেবে যোগদেন তিনজন গেটম্যান সাইফুল, আফসার ও রিয়াজুল ইসলাম।

কিন্তু নিয়োগ দেওয়ার সাত বছরেও নির্মাণ করা হয়নি গেট ও তাঁদের ডিউটিঘর। গেট ও তাঁদের ডিউটিঘর না থাকায় শীত, রোদ, ঝড়,বৃষ্টিতে ভিজে অতি কষ্টে ৭ বছর ধরে ডিউটি করে আসছেন তাঁরা।

প্রথমে তিনজন ডিউটি করলেও বর্তমানে ২ জনকে করতে হয় তিন জনের ডিউটি। কোনো রকম সুযোগ সুবিধা না থাকায় একজন চাকরীও ছেড়েছেন বছর দুইয়েক আগে। প্রথমে ৩ জনে ৮ ঘন্টা করে ডিউটি করলেও বর্তমানে তাদের দুইজনকে ১২ ঘন্টা করে ডিউটি করতে হয়।কিন্তু গেট ও ডিউটিঘর না থাকার ফলে দায়িত্ব পালনে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়ছেন ওই রেলগেটে থাকা ওই দুই গেটম্যান।

জানা গেছে, আব্দুলপুর থেকে পার্বতীপুর অভিমুখে বাগাতিপাড়া অংশে পাঁচটি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে মালঞ্চি লেভেল ক্রসিংয়ে আগে থেকেই গেটম্যান, গেট ও তাঁদের থাকার ঘর ছিল। আর বাকি চারটিতে কোনো গেটম্যান ছিলেন না।

প্রায় ৯ বছর আগে ইয়াছিনপুর রেলগেট পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় ভটভটির দুর্ঘটনায় নববধুসহ চারজন নিহতের ঘটনা ঘটে। এরপর ২০১৮ সালে স্বরূপপুর, ইয়াছিনপুর ও বড়পুকুরিয়া রেলগেটে গেটম্যান নিয়োগের পাশাপাশি গেট ও তাঁদের থাকার ঘর নির্মাণ করা হয়।

কিন্তু ঠেঙ্গামারা রেলগেটে তিনজন গেটম্যান ওই তিনজন কে নিয়োগ দেওয়া হলেও গেট ও তাঁদের থাকার ঘর নির্মাণ করা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ২ বছর আগে চাকুরি ছেড়েছেন রিয়াজুল ইসলাম।

আরও জানা গেছে, ওই লেভেল ক্রসিংয়ে গেটের ব্যবস্থা না থাকায় ট্রেন আসার সময় রাস্তায় চলাচলকারী মানুষ ও যানবাহন থামাতে গিয়ে বিড়ম্বনার পড়তে হয় গেটম্যানদের। এ ছাড়া শীত, রোদ, ঝড়-রৃষ্টি এবং রাতে ডিউটি পালন করতে গিয়েও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাঁদের।

গেটম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, সাত বছর থেকে ডিউটি করে আসছেন তিনি। এই গেট সম্পর্কে অনেকবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। এখানে নানা রকম ঝুঁকি নিয়ে ডিউটি করতে হচ্ছে। শীতের ও গরম একএক সময় এক একএক রকম কষ্ট সহ্য করতে হয়। এই গরমের প্রচÐ তাপাদাহে আর বৃষ্টিতে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। হয় পাশের চা স্টল আর না হয় গাছতলা।

এভাবেই সাত বছর থেকে ডিউটি পালন করে আসছেন তিনি। নিয়োগের পর থেকে ৭ বছরেও হয়নি চাকুরি জাতীয়করণ। সাত বছর আগে যে বেতনে চাকরিতে ঢুকেছেন এখনও সেই বেতনেই কর্মরত আছেন। বেতন ছাড়া কোনো রকম সুযোগ সুবিধা না থাকায় একজন চাকরিও ছেড়েছেন।

বাজারের পাশে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন তারা তিন জনের একজন চলে যাওয়ায় তাদের আরও অতিরিক্ত বেশি সময় ডিউটি করতে হয়। ফলে আরও বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। তাই দ্রুত গেট ও ডিউটিঘরের দাবি জানান তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লেভেল ক্রসিং এর পার্শে একটি বাজার রয়েছে। বাজারের নিকটেই একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়,একটি উচ্চ মাধমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিদিন এই লেভেল ক্রসিং দিয়ে পারপার হতে হয় বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের।

তাছাড়াও অন্যান্য যান বাহন ও এলাকাবাসীর ঝুঁকিনিয়েই পার হতে হয়।এলাকাবাসীর সহায়তায় গেটম্যানদের বসার জন্য একটি বাঁশের মাচা তৈরি করা থাকলেও তা ঙেঙ্গে গেছে অনেকদিন আগে।লেভেল ক্রসিং এর পাশের চা স্টল আর গাছতলা সেটিই তাঁদের ডিউটিঘর।

লেভেল ক্রসিং এর পাশে ঠেঙ্গামারা বাজারে চা বিক্রেতা কামরুল ইসলাম(৪৫) জানান, প্রায় ৭ বছর ধরে এখানে গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে গেট ও গেটম্যানদের জন্য কোনো ডিউটিঘর স্থাপন করা হয়নি।

গেটম্যানগুলো ঝড়,বৃষ্টিতে কষ্ট করে ডিউটি করে।গেটম্যানদের খাওয়া দাওয়া, গোসল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে গিয়ে যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ায় অনেক সময় পথচারীদের সঙ্গে তর্কে বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে হয়। এলাকাবাসির ও গেটম্যানদের সমস্যা কথা চিন্তা করেও এখানে গেট ও ডিউটিঘর নির্মানের দাবি জানান তিনি।

ওই এলাকার ভেনচালক আছিফুর রহমান (২৫) জানান,গেট ও ডিউটিঘর না থাকায় প্রায় তাদের সমস্যায় পড়তে হয়।অনেক সময় গেটম্যান দৌড়ায় আসতে গিয়ে ট্রেন চলে আসে তখন গেটম্যানদের সাথে রাস্তায় চলাচলকারী যাত্রীদের মধ্যে বাক বিতর্কে সৃষ্টি হয়।

এই রেললাইন দিয়ে আধা ঘন্টা এক ঘন্টা পর পরই টেন চলাচল করে। প্রায় সার্বক্ষণিক এখানে থাকতে হয়। দুর্ঘটনা ঘটতে সময় লাগে না তাই এখানে গেট ও ডিউটিঘর খুবই জরুরী।

এ বিষয়ে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জিএম আব্দুল আওয়াল ভুঁইয়া জানান , বিষয়টি সম্পর্কে তার জানা নেই।তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।