ডোমারে ডাক্তারের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু, ক্লিনিক সিলগালা
প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২৫, ১৮:৪৮

নীলফামারীর ডোমারে ডাক্তারের অবহেলায় বেবি আক্তার(২৮) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় জনতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে।
মায়ের মৃত্যু হলেও নবজাতক শিশুটি সুস্থ্য রয়েছে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত বেবি আক্তার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের বড়গাছা দরগা পাড়া এলাকার নুর আলমের স্ত্রী। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
আজ রোববার (১৫ জুন) দুপুরে ক্লিনিকটি সিলগালা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শায়লা সাঈদ তন্বী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রায়হান বারী। এ ব্যাপারে নিহত বেবি আক্তারের স্বামী নুর আলম বাদী হয়ে ডোমার থানায় একটি মামলা করেছেন।
নিহত বেবি আক্তারের স্বামী নুর আলম বলেন, ‘আমার স্ত্রী অন্তসত্তা। শনিবার বিকালে প্রসব বেদনা উঠলে আমিসহ পরিবারের লোকজন তাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ডোমারের জনতা ক্লিনিকে নিয়ে আসি। সেখানে মহিলা ডাক্তার রিজওয়ানা ইয়াসমিনকে দেখালে তিনি কিছু পরীক্ষা দেন।
পরীক্ষার রিপোর্ট দেখার পর ডাক্তার রিজওয়ানা বলেন, রোগীর থলিতে পানি না থাকায় তাকে সিজার করাতে হবে।তখন আমার স্ত্রী বেবি আক্তারকে সিজারের জন্য জনতা ক্লিনিকে ভর্তি করাই। শনিবার সন্ধা ৬টায় তার সিজার হলে একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন তিনি।
সিজারের সময় ডাক্তার রিজওয়ানা, ডাক্তার নিহার রঞ্জন ও ওটি বয় বিপুল সরকার উপস্থিত ছিলেন। সিজারের পর থেকেই রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। সিজারের তিনঘন্টা পেরিয়ে গেলেও রোগীর রক্তক্ষরন বন্ধ না হলেও ডাক্তার রিজওয়ানা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এমনকি রুগির শ্বাস নিতে কষ্ট হলেও তাকে অক্সিজেন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
এক সময় রুগির রক্তক্ষরণ বাড়তে থাকে ও প্রেসার অনেক কমে যায়। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ডাক্তার রিজওয়ানা, ডাক্তার নিহার রঞ্জন সটকে পরেন।
তখন ডাক্তার সাকিব রুগিকে দেখভাল করার সময় বলেন রুগির অবস্থা ভালোনা রুগিকে রংপুর নিয়ে যান। তখন আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে রাতেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে জরুরী বিভাগের ডাক্তার রবিবার ভোরে আমার স্ত্রী বেবি আক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন।’
এর আগে রাতে ডাক্তারের অবহেলার কারনে রুগির অবস্থা আশঙ্কাজনক হবার খবর ছড়িয়ে পরলে রুগির স্বজনরা ক্লিনিকে এসে ডাক্তারের বিচার দাবি করেন। এ সময় পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে পুলিশ প্রশাসন গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চালালেও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় এক সময় সেনাবাহিনি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এ ঘটনায় ডা. নাজমুস সাকিব, সেবিকা মোছা. সুমনা আক্তার ও সাবিয়া আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত বেবি আক্তারের স্বামী নুর আলম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় জনতা ক্লিনিককে সিলগালা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সময় পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।