সুনামগঞ্জ ডিসির মানবিক উদ্যোগে হাসি ফুটলো সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত রুমেজার

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০২৫, ১৮:১৩

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে একটি ওয়াকার (সহায়ক সরঞ্জাম) পেলো ছয় বছর বয়সী সেরিব্রাল পালসি (তীব্র) আক্রান্ত শিশু মোছা. রুমেজা। বিনামূল্যে ওয়াকার পেয়ে হাসি ফুটলো তার চোখে-মুখে। 

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার মানবিক উদ্যোগে এবং জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহযোগিতায় সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে এই ওয়াকারটি বিতরণ করা হয়। 
শিশু রুমেজার পক্ষে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে এক আবেগঘন মুহূর্তে রুমেজার বাবা সবুজ মিয়া তার মেয়ের জন্য ওয়াকারটি গ্রহণ করেন। এই ওয়াকারটি রুমেজাকে চলাফেরায় সাহায্য করবে এবং তার জীবনকে আরও সহজ করে তুলবে বলে আশা তার।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার নির্দেশনায় সমাজ সেবা কার্যালয়ে ওয়াকারটি বিতরণ করেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কনসালট্যান্ট (ফিজিওথেরাপি) ডা:মো.তানজিল হক। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক তানভীর আহমেদ।

শিশু রুমেজা তাহিরপুর উপজেলার সুলেমানপুর গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়ার মেয়ে। রুমেজার বাবা সবুজ মিয়া দীর্ঘদিন ধরে তার প্রতিবন্ধী মেয়ের হাঁটা শেখার সহায়ক সরঞ্জাম হিসেবে একটি ওয়াকারের সন্ধানে উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে যোগাযোগ করছিলেন। 
কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাহায্য না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছিলেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যম সূত্রে এই বিষয়টি জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার নজরে আসে। 
তিনি কালক্ষেপণ না করে তাৎক্ষণিকভাবে রুমেজাকে একটি ওয়াকার উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান।

রুমেজার বাবা সবুজ মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন অফিসে ঘুরাঘুরি করছি, সবাই শুধু মিথ্যা আশ্বাস দিছে। কিন্তু বাস্তবে কথার সঙ্গে কোনো মিল পাইনি। 
যখনই ডিসি স্যার বিষয়টি জানতে পারলেন তখনই তিনি আশ্বস্ত করেন যে আমার মেয়েকে একটা ওয়াকার দেবেন। আজকে হাতে পেয়ে আমি ও আমার পরিবারের সকল সদস্য অত্যন্ত আনন্দিত। 
ডিসি স্যারকে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

সাংবাদিক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবন্ধী রুমেজার বাবা আমাকে তার মেয়ের সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। এই বিষয়ে আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে একটি পোস্ট করার পাশাপাশি 
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া মহোদয়ের সাথে কথা বলি। এ সময় তিনি তাৎক্ষণিক আমাকে জানিয়েছেন যে শিশু রুমেজাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি ওয়াকার প্রদান করবেন। 
আজকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় জেলা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর পিতার হাতে একটি ওয়াকার হস্তান্তর করা হয়েছে। 
ওয়াকার পেয়ে শিশুটির পরিবার সন্তুষ্টি প্রকাশ করার পাশাপাশি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।’

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসকের এই উদ্যোগটি সমাজের পিছিয়ে পড়া এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রতি সংবেদনশীলতা ও দায়িত্ববোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জেলা প্রশাসকের এই মানবিক পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে সমাজে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেবে এবং অন্যদেরও এমন সেবামূলক কাজে উৎসাহিত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

সুনামগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কনসালট্যান্ট (ফিজিওথেরাপি) ডা. মো.তানজিল হক বলেন, জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনায় আমরা প্রতিবন্ধী শিশু রুমেজাকে একটি সহায়ক সরঞ্জাম ‘ওয়াকার’ দিয়েছি। এটি রুমেজাকে চলাফেরায় সাহায্য করবে। 

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। 
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে একটি ওয়াকার প্রদানের মাধ্যমে রুমেজার চলাচলের পথ কিছুটা হলেও সুগম করতে পেরেছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের মানবিক কাজগুলো অব্যাহত রাখার কথা জানান তিনি।