অন্ধকারে আলো জ্বালালেন রাসেল

গুরুদাসপুরে ৭ লাখ টাকার অনুদানে বাঁচলো ৪ জীবন

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০২৫, ১৩:৫১

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
রঞ্জনার পরিবারের হাতে অর্থ তুলে দেন রাসেলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. রবিউল ইসলাম। ছবি: যায়যায়দিন

নাটোরের গুরুদাসপুরে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ওকলাহোমা, আমেরিকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাসেল হোসাইন। অর্থাভাবে থেমে যাওয়া চিকিৎসা, পঙ্গুত্বের ভয়, হারাতে বসা দৃষ্টিশক্তি কিংবা একাকী অসহায় জীবন এই চারটি করুণ বাস্তবতার পাশে দাঁড়িয়ে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন সহানুভূতির উষ্ণতা।

ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত রঞ্জনা রানী যখন মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ করে বাড়ি ফিরে আসতে বাধ্য হন, তখন তার কষ্টের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

তা নজরে আসে রাসেল হোসাইনের, যিনি নিজ উদ্যোগে খোঁজ নিয়ে ৬ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেন।

১৭ জুন, মঙ্গলবার গুরুদাসপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের মিলনায়তন কক্ষে এই অর্থ তুলে দেন রাসেলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. রবিউল ইসলাম ও ছোট ভাই গোলাম রাব্বানী। এই সহায়তা যেন রঞ্জনার জীবনে নতুন জীবনের  ফিরে আসা।

একইভাবে বিলহরিবাড়ী গ্রামের কৃষক বুদ্দু মিয়া গুরুতর আহত হয়ে অর্থাভাবে চিকিৎসা না করাতে পেরে ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে পড়ছিলেন। তার প্রয়োজন ছিল মাত্র ৪০ হাজার টাকা। রাসেল হোসাইন এগিয়ে এসে সেই অর্থ সহায়তা দেন, যা তার সুস্থতা ফেরানোর সম্ভাবনা এনে দেয়।

গুরুদাসপুরের নারী শ্রমিক আমেনা বেগম ধান মাড়াইয়ের সময় এক চোখে আঘাত পেয়ে দৃষ্টিশক্তি হারান। চিকিৎসকেরা জানান, মাত্র ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে চোখের আলো ফিরে পেতে পারেন তিনি। কিন্তু এই সামান্য অর্থও জোগাড় করতে না পারা আমেনার পাশে দাঁড়িয়ে রাসেল হোসাইন অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেন, এখন তিনি নতুন করে আলো দেখার স্বপ্ন দেখছেন।

এছাড়াও, সাবগাড়ী এলাকার বিধবা ও সন্তানহীন নারী সুকজান বেওয়ার জীবন কাটে চরম কষ্টে। অসুস্থ শরীরে দিনমজুরি করা তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তার অসহায় জীবনের কথা শুনে রাসেল হোসাইন ৩০ হাজার টাকার সহায়তা প্রদান করেন চিকিৎসা ও প্রয়োজন মেটানোর জন্য।

রঞ্জনা রানী আবেগভরা কণ্ঠে বলেন,“আমার চিকিৎসা থেমে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম, হয়তো আর ফিরে আসা হবে না। রাসেল হোসাইনের সাহায্য আমার জন্য নতুন জীবন। আমি তার প্রতি চিরঋণী। এমন মানুষগুলোই প্রমাণ করেনÑভালোবাসা ও সহানুভ‚তি এখনও বেঁচে আছে।”

কৃষক বুদ্দু মিয়া কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন,“আমি ভাবতাম, গরিবের কষ্ট কেউ দেখে না। মাঠে কাজ করতে গিয়ে পা হারাতে বসেছিলাম, ছেলেটাও স্কুল ছেড়ে মাঠে নেমেছে। এমন সময় রাসেল হোসাইন আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। উনি না থাকলে হয়তো কখনও হাঁটার স্বপ্নটাই ভুলে যেতে হতো। আল্লাহ উনাকে অনেক ভালো রাখুক।”

রাসেল হোসাইন বলেন,“মানুষ মানুষের জন্য’ এই বিশ্বাস থেকেই আমি কাজ করি। আমার ক্ষুদ্র চেষ্টা যদি কারও জীবন রক্ষা করতে বা নতুন করে বাঁচার সাহস দিতে পারে, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। দেশ থেকে দূরে থাকলেও দেশের মানুষের পাশে থাকতে চেষ্টা করি সবসময়। রঞ্জনা রানী সহ অন্য যারা কষ্টে আছেন, তাদের পাশে দাঁড়ানো আমার দায়িত্ব মনে করেছি।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রবিউল ইসলাম বলেন,“আমরা যে দেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, সেই দেশের মানুষ যদি কষ্টে থাকে তাহলে সেটা আমাদের সকলের ব্যর্থতা। আমার ছেলে রাসেল হোসাইন বিদেশে থেকেও দেশের মানুষকে ভালোবাসে, এটা আমার জন্য গর্বের। রঞ্জনা রানীসহ যারা আজ এই সহযোগিতা পেয়েছেন, তাদের মুখে হাসি ফিরেছে এর চেয়ে বড় শান্তি একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য আর কিছু হতে পারে।’