৫০ বছর পর দখলমুক্ত হলো টাঙ্গাইলের একটি খাল

জলাবদ্ধতা নিরসনে খনন কাজ শুরু

প্রকাশ | ১৮ জুন ২০২৫, ১৪:৫৮

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে দখলমুক্ত খালে খনন কাজ চলছে: ছবি যায়যায়দিন

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌর এলাকার শিয়ালকোল ব্রিজ থেকে শিয়ালকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি গুরুত্বপূর্ণ খাল অবশেষে দখলমুক্ত করে খনন কাজ শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। দীর্ঘ ৫০ বছর পর খালটি পুনরুদ্ধার হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

বৃষ্টিপাত ও বর্ষা মৌসুমে এ এলাকার দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়তো। ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট ও হাটবাজারে দেখা দিত ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। 
এ অবস্থার স্থায়ী সমাধানে শিয়ালকোল-পশ্চিম ভূঞাপুর সংযোগ খালটি পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনাতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, একসময় শিয়ালকোল হাট থেকে পশ্চিম ভূঞাপুর হয়ে খালটি লৌহজং নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। ঐতিহ্যবাহী শিয়ালকোল হাট ছিল তৎকালীন সময়ে একটি ব্যস্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র, 
যেখানে বড় বড় নৌকা চলাচল করতো এই খালের মাধ্যমে। কিন্তু কালের বিবর্তনে খালটি ভরাট হয়ে যায় এবং একে একে দখল হয় দুই পাড়। কোথাও কোথাও বহুতল ভবন নির্মাণ করায় খালের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যায়।

দীর্ঘদিনের এই অব্যবস্থাপনার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ তুলেছেন পরিবেশবাদীরা। তাদের দাবি, বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রশাসনের অবহেলা এবং প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় খালটি দখল হয়ে যায়। 
ফলে ভূঞাপুর বাজার, ঘাটান্দি, ফসলান্দি, এবং আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়ে ওঠে নিত্যদিনের দুর্ভোগ।

সাম্প্রতিক সময়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে খালটি পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়া হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এই খাল খনন কাজের উদ্বোধন করেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক। 
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু আব্দুল্লাহ খান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারিকুল ইসলাম এবং ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ একেএম রেজাউল করিম।

স্থানীয় কৃষক সোনা উল্লা বলেন, বর্ষা এলেই আমাদের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যেত এবং পানি দীর্ঘ দিন থাকায় জমির মাটি নষ্ট হয়ে নোংরা হয়ে যেতো। 

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, সামান্য বৃষ্টি এলেই বাসা থেকে বের হতে পারতাম না। আমাদের এলাকা এখন মুক্ত বাতাস পাবে। এতদিন যা শুধু দুর্ভোগ ছিল, এখন তা উন্নয়নে রূপ নেবে।

পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম অবস্থায় এই খালটি উদ্ধার করা হলো। পর্যায়ক্রমে আমরা সকল দখলকৃত খাল উদ্ধার করব।

এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. আবু আব্দুল্লাহ খান বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এই খালটি বেদখল ছিলো। শহরের বিভিন্ন জায়গাতে জলাবদ্ধা সৃষ্টি হতো। 
আর খালটি পুনরুদ্ধার করে জনদুর্ভোগ কমাতে আমরা খাল খনন করি। এছাড়াও খালের পাশ দিয়ে আমরা গাছ লাগাবো যাতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়।