ময়লা-আবর্জনায় বিষাক্ত কেরানীগঞ্জের পরিবেশ, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

প্রকাশ | ২০ জুন ২০২৫, ১০:৪৫

মাসুম পারভেজ, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
কেরানীগঞ্জে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ

যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, দুর্গন্ধে টেকা দায়! রাজধানীর কেরানীগঞ্জে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থাপনা দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে।

উপজেলার জিনজিরা, আগানগর, শুভাঢ্যা, তেঘরিয়া ও শাক্তা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নেই ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান। 

ফলে উন্মুক্ত স্থানে জমে উঠছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ; যা পথচারী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বাড়ছে মশা-মাছি, রোগবালাই কিন্তু দীর্ঘদিনেও এর কার্যকর সমাধান আসেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। 

সরজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ব্যস্ততম ঝিলমিল আবাসন প্রকল্পের মূলসড়কে প্রতিদিন জমে থাকা আবর্জনার স্তূপ যেন এক পরিচিত দৃশ্য। 

কখনো কখনো রাস্তার অর্ধেক অংশ দখল করে ফেলে রাখা হয় ময়লা-আবর্জনা, যা পথচারীদের চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা সৃষ্টি করে। 

শুধু ঢাকা-মাওয়া সড়ক নয়, উপজেলার নবাবগঞ্জ-দোহার আঞ্চলিক মহাসড়কে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ছোট গাড়ির মাধ্যমে ময়লা সংগ্রহ করে তা ফেলে দেয়া হয় সড়কের দু'পাশে। 

আগানগর, জিনজিরা বুড়িগঙ্গা নদী পাড়, কালিন্দী ইউনিয়নের নেকরোজবাগ, শাক্তার সালাম সড়ক ও রামেরকান্দা সড়কসহ বহু এলাকায় উন্মুক্ত স্থানে আবর্জনা ফেলা হয়। 

এতে হাটবাজার, সড়কের পাশ, অলিগলি থেকে মহাসড়কের পাশ যেন হয়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়।

এভাবে বর্ষা মৌসুমে পরিবেশদূষণ ও মশা-মাছি বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আহ্বায়ক অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ। 

তিনি বলেন, শুধু কেরানীগঞ্জ নয় এভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যদি সঠিকভাবে করতে না পারে, তাহলে জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের কাজটা কী? 

মানুষ তো ট্যাক্স দেয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য। 

এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা একধরনের অপরাধও। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এসব বিষয়ে কঠোর হওয়া দরকার।

এদিকে জুলাই ছাত্র-জনতা আনদোলনের পর উপজেলা ও ইউনিয়ন প্রশাসন নির্ধারিত সময়ে বাসাবাড়ি ময়লা অপসারণের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয় না। 

কখনও কখনও নির্ধারিত সময়ে বাসাবাড়ির ময়লা না সরানোর কারণে সেগুলো পচে যায় এবং বাসার গলি ও ছোট রাস্তার আশপাশে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ ধরনের পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোকে, যারা এসব এলাকার আশপাশে বসবাস করেন। শিশু ও বৃদ্ধরা নানা ধরনের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। 

কালিন্দী ইউনিয়নের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, আমাদের দোকানের পাশে প্রতিদিন ময়লার স্তূপ জমে ওঠে। ক্রেতারা যখন আসে, তখন দুর্গন্ধে টিকতে পারেন না। ফলে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। জিনজিরা পরিচ্ছন্নতাকর্মী হারুন সরদার বলেন, আমরা প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে ময়লা অপসারণের চেষ্টা করি। 

তবে জনবল ও পরিবহনের সংকটের কারণে আমরা পুরোপুরি সফল হতে পারছি না। আর কোথায় ময়লা ফেলবো নেই জায়গা। শুভাঢ্যা বাসিন্দা আলী বাবু বলেন, আমরা কর দিই, নাগরিক সুবিধা চাই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি কেরানীগঞ্জ চাই। সেই মৌলিক চাহিদাটুকু এখন যেন সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে। দুর্গন্ধের দুর্ভোগে আমাদের দিন কাটাতে হচ্ছে। এমন উপজেলা আমরা চাইনি। তিনি বলেন, উপজেলার দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধান না হলে জনস্বাস্থ্য চরম হুমকির মুখে পড়তে পারে। বৃষ্টির জলাবদ্ধতা, মশাবাহিত রোগের বিস্তার এবং বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়ার কারণে কেরানীগঞ্জবাসী মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এবিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মোকাদ্দেস বলেন, ময়লা-আবর্জনা থেকে মশার বংশবিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে। 

এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসন ও লোকজনসহ সবাইকে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে।