ডুমুরিয়ায় ধামালিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মেম্বারদের অনাস্থা
প্রকাশ | ২০ জুন ২০২৫, ১৭:৩২

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ১নং ধামালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল হকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎসহ স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্যানেল চেয়ারম্যানসহ ৬জন ইউপি সদস্য। চেয়ারম্যানের প্রতি তারা অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। ফলে ধামালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে চেয়ারম্যান জহুরুল হক ইউনিয়ন পরিষদকে তার একক কার্যালয় সৃষ্টি করেছে। পরিষদের মেম্বরদের সাথে কোন কিছু আলোচনা না করে নিজের খেয়ালখুশি মত কাজ করছে। বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের পর থেকে সরকারি বরাদ্দের কোন তথ্য মেম্বরদেরকে তিনি অবহিত করছেন না। বিধি বহির্ভূতভাবে ৪০ দিনের কর্মসূচীতে চেয়ারম্যান তার নিজস্ব লোকদের শ্রমিক বানিয়ে কাজ না করে বিল উত্তোলন করেছে। ভিজিডি কার্ড বিতরণেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। ৪ লাখ টাকার ল্যাম্পপোষ্ট বসানো প্রকল্পে মাত্র ১লাখ টাকায় ১২টি ল্যাম্পপোষ্ট বসিয়ে বাকি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে চেয়ারম্যান জহুরুল হকের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওয়ারেশ কায়েম সনদপত্র নিতে গেলেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। লোক বিশেষ ১ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। অথচ খাতা কলমে লেখা হচ্ছে মাত্র ২০০ টাকা। ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে গভীর নলকুপ স্থাপনে। দহকুলা এলাকায় অনেকগুলো প্রকল্পের কাজ না করে টাকা উত্তোলন করেছে।
ইউপি সদস্য বিএম মহিতুর রহমান রিপন জানান, ‘পবিত্র ঈদুল আযাহা উপলক্ষে বরাদ্দকৃত চালের ১০০ জনের বেশি কার্ডধারীরা চাল পায়নি। পছন্দের লোকের কাছে সেই চাল বিতরণ করেছে। পরিষদের ১% টাকা থেকে তিনটি ল্যাপটপ ক্রয় করে। যার একটি পরিষদে বাকি দুটি চেয়ারম্যান তার নিজস্ব একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করছে। ৪০ দিনের কর্মসুচিতে ১২জন শ্রমিকের ভুয়া নাম দিয়ে এবং নিজেদের সিম ব্যবহার করে টাকা তুলেছে। টোলনা গ্রামের আছাদ সিকদারের বাড়িতে গভীর নলকুপ স্থাপনে ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে। আর একাজে সার্বিক সহযোগিতা করেছে পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) কামরুল হাসান। সমস্ত কাজের অর্থ ৩০% সচিব এবং ৭০% চেয়ারম্যান পায়। তাছাড়া মেম্বরদের যে প্রকল্প দেয়া হয়, তার থেকেও লাখে ১০ হাজার টাকা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সচিবকে দিতে হয়।’
আ’লীগ সরকারের সময় তার চাচাতো ভাই আ’লীগ নেতা ডাঃ দ্বীন মোহাম্মদ খোকার মাধ্যমে সাবেক ভুমি মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে চেয়ারম্যান জহুরুল হকের। বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষপুত্র শেখ হেলাল উদ্দিনের সাথেও তার একান্ত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি তিনি নিজেকে বিএনপি নেতা হিসেবে দাবি করলেও দল থেকে এখনো বহিস্কার রয়েছেন।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান জহুরুল হক তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন। তিনি জানান, যারাই অভিযোগ করেছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ মেম্বর তার অনুকুলে ফিরে এসেছে।
গত ১৫ জুন দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্তের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসার ইনসাদ ইবনে আমিনের উপর দায়িত্ব রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, আগামী জুলাই মাসের প্রথম দিকে তদন্তের কাজ শুরু হবে।