গৌরনদীতে পৌর বর্জ্যে ভরছে সরকারি জলাশয়
চরমে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি, নেই ডাম্পিং ও বিকল্প ব্যবস্থা
প্রকাশ | ২১ জুন ২০২৫, ১৪:২৪

বরিশালের প্রবেশদ্বার খ্যাত গৌরনদী এখন ভয়াবহ এক পরিবেশগত সংকটের মুখে। পৌরসভার ডাম্পিং ও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় দায়িত্বহীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উপজেলার সরকারি জলাশয় এখন বর্জ্যভর্তি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধ, মশা,মাছির উপদ্রব, আর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গৌরনদী পৌরসভায় নির্ধারিত কোনো ডাম্পিং স্টেশন কিংবা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় প্রতিদিন পৌরসভার ট্রাকযোগে বিভিন্ন ওয়ার্ডের গৃহস্থালির আবর্জনা, ক্লিনিক ও হাসপাতালের ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য এবং প্লাস্টিক ও রাসায়নিক উপাদান নির্বিচারে ফেলা হচ্ছে পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়।
বিশেষ করে দেখা যায় বর্জ্যগুলো ফেলে রাখা হচ্ছে ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড, গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক সংলগ্ন স্থান, কসবা গরুর হাটের আশপাশ এবং নীলখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকায়।
সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে নীলখোলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায়। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ময়লা সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেও সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে বরং পৌর কর্তৃপক্ষ ভেকু দিয়ে রাস্তার পাশের আবর্জনাগুলো নীলখোলা ব্রিজের উত্তর পাশে একটি সরকারি জলাশয়ে (যেটি একসময় খালের মতো ছিল) ফেলে দিয়েছে।
এতে জলাশয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ ইতোমধ্যে বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে। যার ফলে পানি দূষিত হয়ে আশপাশে ছড়াচ্ছে বিষক্রিয়া এবং দুর্গন্ধে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
এছাড়া আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে মশা, মাছির উপদ্রব। বাড়ছে ডেঙ্গু, টাইফয়েড, আমাশয় ও শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগের ঝুঁকি।
স্থানীয় গৃহবধূ সাহিদা বেগম বলেন, এমনিতেই সারা দেশে ডেঙ্গুর ভয় ছড়িয়ে আছে। তার ওপর আমাদের এলাকায় প্রতিদিন বাড়ছে ময়লা।
বৃষ্টির পরপরই চারপাশে পানি জমে যায়, আর সেই পানিতে ময়লার সাথে জন্ম নিচ্ছে লাখো মশা-মাছি। বাচ্চাদের নিয়ে ভয়ে আছি।
রহমতপুর এলাকার বাসিন্দা এবং নিয়মিত গাড়ির যাত্রী সোহেল মাহমুদ বলেন, প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরি। কিন্তু নীলখোলা ব্রিজ পার হওয়ার সময় বাসের জানালা বন্ধ করে দিতে হয় নাকে রুমাল দিয়ে কোনমতে জায়গাটা পার করি। দুর্গন্ধে পুরো বাসেই টিকতে কষ্ট হয়। বরিশালের গেটওয়ে শহর যদি এমন হয় তাহলে ভাবুন ভেতরে কী অবস্থা!
গৌরনদী পৌর যুবদল নেতা নুর উদ্দীন বুদ্ধি বলেন, এই অব্যবস্থাপনার দায় পুরোপুরি পৌরসভার। যেখানে সেখানে বর্জ্য ফেলা হলে শুধু পরিবেশ না জনস্বাস্থ্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বর্তমানে যে হারে ডেঙ্গু ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। এখনই যদি নিয়মিত স্যানিটেশন, নির্ধারিত ডাম্পিং জোন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পিত পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে পৌরসভার এই বর্জ্য থেকে সৃষ্ট মশা মাছির কারনে ডেঙ্গু আরো ভয়াবহ রুপ নিতে পারে এবং গৌরনদী অচিরেই এক বিপর্যস্ত জনপদে পরিণত হতে পারে।
এ বিষয়ে গৌরনদী পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি বলেন, এটা শুধু গৌরনদীর একক সমস্যা নয়। মাত্র দুই একটি উপজেলা ছাড়া প্রায় পুরো দেশেই একই অবস্থা।
আমাদের গৌরনদীতে এখনো কোনো নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশন নেই। আমি স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি বহু আগ থেকেই পৌরসভার বর্জ্য এসব এলাকায় ফেলা হয়ে আসছে।
তবে মহাসড়ক ঘেঁষা রাস্তাটি (নীলখোলা সংলগ্ন মহাসড়ক) যাতে চলাচলের উপযোগী থাকে, সেজন্য যতটা সম্ভব ভেকু দিয়ে ময়লা অপসারণের চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একটি স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে জমি, অর্থ বরাদ্দ এবং সরকারি নীতিমালাসহ নানা বিষয় জড়িত।
তবুও বিষয়টিকে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। অতি দ্রুত একটি উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।