নেত্রকোনা ২: আলোচনায় সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিন খান
প্রকাশ | ২২ জুন ২০২৫, ১৬:৪২ | আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ১৮:১৫

নেত্রকোনা-২, সদর-বারহাট্রা আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যার্শী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খানকে নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে।
বিগত দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে দেশ ও দলের জন্য সবচেয়ে বেশী ত্যাগ স্বীকার, সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং স্থানীয় জনগনের কাছে ভালো মানুষ হিসেবে সুপরিচিত সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খান নির্বাচনী এলাকায় ভোটের রাজনীতিতে বিএনপির একজন জনপ্রিয় প্রার্থী।
জানা গেছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যার্শী হিসেবে সদর ও বারহাট্রা উপজেলার তৃনমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মো. আশরাফ উদ্দিন খান। মো. আশরাফ উদ্দিন খান ১৯৪৬ সালে নেত্রকোনার চকপাড়াস্থ এক প্রাচীন মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ সমসের খান ছিলেন বর্তমান নেত্রকোনা শহরের এক বিরাট অংশের জমিদার। তিনি শুধু জমিদার ছিলেন না, ছিলেন একজন মানবপ্রেমী জনহিতৈষী।
নেত্রকোনা পৌরসভা, নেত্রকোনা মডেল থানা থেকে শুরু করে আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নিউটাউনের বড়পুকুর, বড়বাজার, কোর্ট স্টেশন, বড় স্টেশনের জায়গাসহ অসংখ্য জমি তিনি জনসেবার উদ্দেশ্যে দান করেছেন। জেলা শহরের আধুনিক রূপরেখার ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। সমসের খানের দুই পুত্র আজিম খান এবং আশরাফ উদ্দিন খানের পিতা মুজাফর খান দুজনই ছিলেন এলাকার সুপরিচিত দানবীর এবং সমাজসেবক।
আশরাফ উদ্দিন খান পড়াশোনা করেন আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি বিদ্যালয় ও নেত্রকোনা সরকারি কলেজে। কলেজ জীবনেই তিনি ছাত্র ইউনিয়নের বিপুল ভোটে ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ক্রীড়াঙ্গনে নেতৃত্ব দেন। তিনি ওই সময়ে জেলার সেরা ফুটবলার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ডাক আসলে মো. আশরাফ উদ্দিন খান সরাসরি ভারতে গমন করে প্রশিক্ষণ নেন এবং জেড ফোর্সের সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১১ নম্বর সেক্টরে ঐতিহাসিক ধানুয়া কামালপুর যুদ্ধে সম্মুখসমওে তিনি নেতৃত্ব দেন। এক অভিযানে এলএমজি দিয়ে একাই ১৯জন পাকিস্থানী সেনাকে জীবিত বন্দি করে দেশের প্রতি নিজের অশেষ সাহস ও দায়বদ্ধতা প্রমান করেন। তিনি নেত্রকোনা মহকুমা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং পরবর্তীতে ইউনিট কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৯ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৮১ সালে নেত্রকোনার প্রথম জেলা পরিষদে উপ-মন্ত্রীর পদমর্যাদায় সফলভাবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দায়িত্বে থাকাকালে জেলা শহরের ডিসি অফিস, জজকোট, এসপি অফিস, ব্রিজ-কালভার্ট, মসজিদ-মন্দির, বিদ্যুতায়নসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।
নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাব, গণগ্রস্থাগার, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাইফেলস ক্লাবসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পেছনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খানের মেধা ও নেতৃত্ব কাজ করেছে। নেত্রকোনায় বিএনপির শিকড় গড়া, বিস্তার ও রক্ষনাবেক্ষণের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খান ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খান ১৯৯৭ সালে নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সভাপতি, ২০০৯ সালে জেলা বিএনপির আহবায়ক এবং ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় জেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি পদে ১৫২৫ ভোটের মধ্যে ১১৬৮ ভোট পেয়ে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
২০০৬ সালের বাতিল হওয়া জাতীয় সংসদ এবং ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে মো. আশরাফ উদ্দিন খান প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন। জেলা বিএনপির দুঃসময়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের একজন পরীক্ষিত সৈনিকের ভুমিকা রেখেছেন তিনি। এজন্য তাকে নেত্রকোনার রাজপথে মাথার রক্ত ঝড়াতে হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দেড়দশকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খানের চকপাড়াস্থ বাসভবন গভীররাতে সবচাইতে বেশী পুলিশী তল্লাশীর শিকারে পরিনত হয়। তিনি ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুথানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর জেলা শহরের প্রতিটি পূজামন্ডপসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় পরিবারের সদস্যদের সমন্বয়ে রাতজেগে পাহাড়া দেয়ার ব্যবস্থা করেন।
এ আসনের বিশাল হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে মো. আশরাফ উদ্দিন খানের পারিবারিক ভাবে সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। নেত্রকোনা সদর এবং বারহাট্রা উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খান একডাকে ‘“আশরাফ ভাই” হিসেবে পরিচিত। তিনি জেলা বিএনপির দুঃসময়ের একজন পরীক্ষিত নেতা। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যার্শী হিসেবে তিনি ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন।