এনসিটি পরিচালনা করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

প্রকাশ | ২২ জুন ২০২৫, ১৮:০৪ | আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ১৮:০৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রাম বন্দর: ছবি যায়যায়দিন

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) নিজেই নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনা করবে। এজন্য সরকারের কাছে বন্দর কর্তৃপক্ষ মাসিক ৭ কোটি টাকা পরিচালন ব্যয়ের অনুমোদন চেয়েছে। 
প্রাথমিকভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষ আগামী ছয় মাস এনসিটি পরিচালনা করবে। পরবর্তীতে উন্মুক্ত দরপত্রে বেসরকারি অপারেটর নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিতর্কিত অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেককে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আগামী ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বন্দরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আর চুক্তি নবায়ন করবে না বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের মোট ৪টি কন্টেনার টার্মিনাল রয়েছে। চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল (সিসিটি), নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল এনসিটি, জেনারেল কার্গো বার্থ (কন্টেনার ও বাল্ক) এবং পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি)।
চারটি টার্মিনালের মধ্যে এনসিটি সবচেয়ে বড় এবং কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ আধুনিক যন্ত্রপাতিতেও সমৃদ্ধ। ২০০৭ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিলের প্রায় ৪৭০ কোটি টাকা ব্যয় করে এই টার্মিনাল নির্মাণ করে। 

টার্মিনালটির অবকাঠামোগত নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর বিদেশি একাধিক কোম্পানি নিজস্ব বিনিয়োগে ইকুইপমেন্ট স্থাপন করে টার্মিনালটি পরিচালনার আগ্রহ দেখিয়েছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক দরপত্রও আহ্বান করেছিল। 
কিন্তু পরবর্তীতে নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানের চাপের মুখে সেই দরপত্র বাতিল করা হয়। এতে করে পুরোপুরি তৈরি হয়েও চালু করা সম্ভব হয়নি এনসিটি। পরবর্তীতে সাত বছর পর বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করে এনসিটিকে ইকুইপমেন্ট সমৃদ্ধ করে। 
ডিপিএম পদ্ধতিতে এই টার্মিনালের পাঁচটি জেটিতে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেককে। 
ডিপিএম পদ্ধতিতে সরাসরি নিয়োগ পাওয়া এই প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির মেয়াদ বেশ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ বাড়ানো চুক্তির মেয়াদ আগামী ৬ জুলাই শেষ হচ্ছে। এতে করে ৭ জুলাই থেকে এই টার্মিনালে কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

১৮ জুন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক থেকে সাইফ পাওয়ারটেককে আর টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্বে না রাখতে বলা হয়। সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় টার্মিনালটি অপারেট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে ওই বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

কর্মকর্তারা জানান, বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল পরিচালনা করতে লাগবে অতিরিক্ত টাকা। এসব টাকা খরচ করতে আবার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। 
এই অনুমতি নিতে গত ১৯ জুন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠি লিখেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। এতে এনসিটি পরিচালনার জন্য আনুমানিক ৪২ কোটি টাকা বাজেট অনুমোদনের অনুরোধ জানানো হয়।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সাইফ পাওয়ারটেক দীর্ঘদিন ধরে বন্দরের সিসিটি এবং এনসিটি টার্মিনালের অপারেটর হিসেবে কাজ করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সাইফ পাওয়ারটেকের বিরুদ্ধে সমালোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে সাইফ পাওয়ারটেক নানাভাবে সরকারি উদ্যোগটি ঠেকানোর চেষ্টা করে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 
অবশেষে তাদের কাছ থেকে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মেয়াদ শেষে সিসিটির ব্যাপারেও নিশ্চয় বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ পারসোনেল অফিসার ও মুখপাত্র নাসির উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তের পর টার্মিনাল পরিচালনা করতে ব্যয় নির্বাহের অনুমতির জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। 
মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক অনুমতি পেলে চূড়ান্ত কাজ শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে বন্দরের মেকানিক্যাল এবং ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ সাইফ পাওয়ার টেক থেকে কাজ বুঝে নেওয়া শুরু করেছেন।