জাল নিবন্ধনের দায়ে নাজনীনের কারাভোগ, বহাল তবিয়তে সালমা!
প্রকাশ | ২২ জুন ২০২৫, ১৮:২০

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ঐহিত্যবাহী সরকারি হাজী জামাল উদ্দিন অনার্স ডিগ্রি কলেজে নিয়োগ প্রাপ্ত ভূগোল বিষয়ের প্রভাষক সালমা খাতুনের "নিবন্ধন সনদ" মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাইয়ে জাল প্রমাণিত হওয়ার দীর্ঘ দিনেও এক অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে শাস্তি হয়নি।একই কলেজেই ওই অভিযুক্ত শিক্ষক চাকরি পুর্ণরবহাল হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
অথচ একই অপরাধে কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক নাজনীন নাহারকে জাল সনদের চাকুরির অপরাধে কারাভোগ করতে হয়েছে।
সরকারি হাজী জামাল উদ্দিন অনার্স ডিগ্রি কলেজটি জাতীয়করণ হওয়ায় অভিযুক্ত সালমা খাতুন এখন সরকারি কলেজের নন ক্যাডার প্রভাষকের সরকারি বেতন-ভাতার সুযোগ নিচ্ছেন। মাউশি থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অধ্যক্ষকে একাধিকবার চিঠি পাঠালেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ভূগোল বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন সালমা খাতুন। ২০১৪ সালে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কলেজটি অডিট করেন। ২০১৫ সালে প্রকাশিত অডিট রিপোর্টে প্রভাষক সালমা খাতুনসহ কলেজের তিন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ জাল ধরা পড়ে।
অডিট কর্মকর্তার সুপারিশে মাউশি ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে তৎকালীন অধ্যক্ষ শহিদুজ্জামানকে নির্দেশ দেয়। কিছুদিন পর কলেজের বাংলা বিভাগে নিয়োগ প্রাপ্ত প্রভাষক নাজনীন নাহারের নিবন্ধন সনদও জাল বলে প্রমাণিত হয়।জাল নিবন্ধনের কারণে প্রভাষক নাজনীন নাহার ও প্রভাষক সালমা খাতুনসহ চার শিক্ষক চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে তৎকালীন অধ্যক্ষ শহিদুজ্জামান প্রভাষক নাজনীন নাহারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে তিনি কারাভোগ করেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে জাল সনদধারী অন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে সালমা খাতুন নিয়োগ বোর্ডকে ম্যানেজ করে পুনরায় ২০১৬ সালের ৯ জানুয়ারি স্নাতক স্তরে ভূগোল প্রভাষক পদে যোগদান করেন। উল্লেখ্য যে,দ্বিতীয়বার নিয়োগে তিনি অন্য আরেকটি নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করেন।
এদিকে ২০১৮ সালে কলেজটি জাতীয়করণ হলে সালমা খাতুন সরকারি নন ক্যাডার প্রভাষক হিসেবে সরকারি বেতন-ভাতা ভোগ করতে শুরু করেন। অথচ সর্বশেষ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সালমা খাতুন সহ জাল নিবন্ধন সনদে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কলেজ কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠায় মাউসি।
এরপরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। উল্টো সালমা খাতুনকে স্নাতক স্তরে নতুন করে নিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়!
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কলেজ শিক্ষিকা সালমা খাতুন বলেন, ‘আমি ২০১০ সালে প্রথম নিয়োগ পাই। এরপর অডিটে আমার নিবন্ধন সনদ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আমি চাকরি থেকে রিজাইন দেই। পরবর্তীতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নতুন করে নিয়োগ পেয়েছি। এতে কোনো অসুবিধা থাকার কথা না।
এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শহিদুজ্জামান এর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, সালমা খাতুনের নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিক আছে। তার সনদও ঠিক আছে। তবে প্রথমবার নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অনিহা প্রকাশ করেন।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল লতিফ বলেন, কলেজটিতে আমি দু'বছর আগে যোগদান করেছি। তার নিয়োগ ও যোগদান সবকিছু আগের অধ্যক্ষের সময়ই হয়েছে।তার জাল নিবন্ধনের বিষয়ে মাউশি'র চিঠির জবাব দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মাউশির সহকারী পরিচালক (কলেজ-১) মুহাম্মদ সফিউল বশর বলেন, জাল নিবন্ধনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।