দালালদের কাছে জিম্মি পুঠিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

প্রকাশ | ২৩ জুন ২০২৫, ১৯:৫৩

পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রাইভেট ক্লিনিক ও ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। 

রোগীরা চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসা মাত্রই করিডোরে অবস্থানরত ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা ব্যবস্থাপত্র দেখতে রীতিমতো কাড়াকাড়ি করে এবং প্রাইভেট ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা রোগীদের হাত ধরে তাদের ক্লিনিকে রক্ত পরীক্ষাসহ নানা রকম টেস্ট করানোর জন্য টানাটানি করে বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী।

সরেজমিন দেখা গেছে- সপ্তাহে তিনদিন দুপুর ২টার পর চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের দেখা করার অনুমতি রয়েছে। নির্ধারিত এ সময়ের বাইরে অন্য সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিক্রয় প্রতিনিধিরা কোনো চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। 
এমনকি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানার মধ্যেও কোনো বিক্রয় প্রতিনিধি ও প্রাইভেট ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা বা প্রতিনিধিরা অবস্থান করতে পারবেন না। কিন্তু নিয়ম মানছেন না কেউই।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুঠিয়ায় প্রায় দেড় ডজন প্যাথলজি সেন্টার ও অবৈধ ক্লিনিক রয়েছে। প্রতিটি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা এখানে কাজ করেন। 
যে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে সেখান থেকে ডাক্তার ৪০ শতাংশ কমিশন ভোগ করেন। প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহে ডাক্তারদের এ কমিশন দেওয়া হয়। একজন ডাক্তার ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন পেয়ে থাকেন।

এদিকে একমাত্র সরকারি হাসপাতাল ঘিরে শুধু পুঠিয়া সদরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতাল। সেগুলোর অধিকাংশই অনুমোদনবিহীন। 
তা ছাড়াও সেগুলোতে নেই  পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, নেই কোনো টেকনিশিয়ান ও এমবিবিএস ডাক্তার। এছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা, একই রুমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, খাওয়া-দাওয়া ও টয়লেট ব্যবহার করা হচ্ছে। 

পুঠিয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত ১৭টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক বা একাধিক দালাল ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া আছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী, মাসিক ছয়-সাত হাজার টাকা বেতন ও ৪০ শতাংশ কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করেন তারা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে জরুরি বিভাগের একজন উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বলেন, দালালদের অত্যাচারে অনেক সময় রোগীরা বিরক্ত হয়ে উঠেন। স্থানীয় দালালদের প্রভাবের কারণে আমরা কোনো প্রতিবাদ করতে পারি না।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হাসান শাওন এর সরকারী নাম্বারে ফোন করা হলে ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্যে নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোহাম্মদ জনাব আলী বলেন, হাসপাতালে দালাল আছে আমিও জানি। 
তবে কারা এখানে দালালি করে বা রোগীদের টানা হেচড়া করছে তা আমার জানা নেই। তবে আমাদের সকল স্টাফদের বলে দিয়েছি হাসপাতালে যেনো কোনো দালাল আসতে না পারে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ, কে, এম নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। তবে ভুক্তভোগী রোগী বা তাদের স্বজনদের কেউ অভিযোগ করলে মোবাইল কোর্ট করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।