গাছ না দেয়ায় কৃষি কর্মকর্তার মাথা ফাটালেন বিএনপি নেতা
প্রকাশ | ২৪ জুন ২০২৫, ১০:৩৭

বরিশালের হিজলায় নারিকেল চারা না দেওয়ার অভিযোগে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সাতজনের নামে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী হিজলা উপজেলার উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম। সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হিজলা থানার পরিদর্শক জাহিদুল আলম।
মামলায় উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক গিয়াস দেওয়ান ও তার ছেলে হিজলা ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জিসান দেওয়ানসহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, রোববার সকালে উপজেলার বিভিন্ন সুবিধাভোগীদের মাঝে প্রণোদনার নারিকেল গাছের চারা বিতরণ করে হিজলা উপজেলা কৃষি অফিস। এ ঘটনায় গোবিন্দপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা ও বিএনপি নেতা গিয়াস দেওয়ান উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলামের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এর জেরে একই দিন রাত ৯টার দিকে ফখরুল ইসলাম টেকের বাজারে সরকারি কাগজপত্র ফটোকপি করতে গেলে গিয়াস দেওয়ান, তার ছেলে রিয়াজুল ইসলাম জিসান ও গিয়াসের ভাগিনা আজমাইন চৌধুরীসহ তিন-চারজন মিলে ফখরুল ইসলামকে মারধর করে।
এ বিষয়ে ফখরুল ইসলাম জানান, জুন ক্লোজিং উপলক্ষে কিছু কাগজপত্র ফটোকপি করতে রোববার রাত ৯টায় উপজেলার টেকের বাজারের একটি লাইব্রেরিতে যান। লাইব্রেরির পাশে চায়ের দোকানে থাকা গিয়াস দেওয়ান তাকে দেখতে পেয়ে তার অনুসারীদের নারিকেল গাছ কেন দেওয়া হয়নি জানতে চেয়ে তর্ক শুরু করে দেয়। এ সময় আরও কয়েকজন এসে তাকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করেছে। চিৎকারে স্থানীয়রা এলে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে হাসপাতালে গিয়ে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
হিজলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল গাফফার তালুকদার বলেন, ‘আমি ঢাকা ছিলাম। তবে বিষয়টি শুনেছি। বাবা ও ছেলের উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের জন্য দলের বদনাম হচ্ছে। বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হবে।’
৫ আগস্ট এর পর থেকে গিয়াস দেওয়ান ও তার অনুসারীরা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন, মাছঘাট দখল থেকে শুরু করে এমন কোন অপকর্ম নেই যে তারা না করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল জেলার উপ-পরিচালক মোসাম্মৎ মরিয়ম বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। নারিকেল গাছের চারা বিতরণকে কেন্দ্র করে হিজলা উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ফকরুল ইসলামকে মারধর করা হয়েছে। ইউএনও’র সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।’
স্থানীয় বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উপজেলা বিএনপির একটি অংশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে তাদের সেই প্রস্তাবে সায় দেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা গিয়াস দেওয়ানের মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা মেলায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলায় নামধারী তিনজন ও অজ্ঞাত আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।