মাচায় ছাগল আর ঘরে স্বপ্ন, নিচে সম্ভাবনা
নারীদের দিন বদল
প্রকাশ | ২৪ জুন ২০২৫, ১৬:৫৩

একদিন যে ছাগল ছিল লোকসানের বোঝা, আজ সে-ই ঘুরিয়ে দিচ্ছে ভাগ্যের চাকা। জয়পুরহাটের খেতুপাড়া গ্রামের শ্রীমতি স্বররস্বতী রানীর গল্প ঠিক তেমনই—যেখানে বাঁশের তৈরি একটি মাচা কেবল ছাগলের ঘর নয়, বরং হয়ে উঠেছে একটি স্বপ্নময় সংসারের ভিত।
পিকেএসএফ-এর অর্থায়নে এবং এনজিও জেআরডিএম-এর কারিগরি সহায়তায় শতাধিক নারী এখন ‘মাচা পদ্ধতিতে খাসি মোটাতাজাকরণ’-এর মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছেন আত্মনির্ভরতার নতুন পথ।
'আগে দু-একটি ছাগল ছিল, কিন্তু সেগুলো রোগে মরত। এখন মাচায় রাখায় রোগবালাই নেই, আয়ও হচ্ছে'—বললেন স্বররস্বতী রানী। শুধু তিনিই নন, তার পথ ধরে নারায়ণ পাড়ার কারিমুল ইসলামও এই পদ্ধতিতে বদলে ফেলেছেন নিজের জীবনের হিসাব।
এই মাচা আসলে এক অভিনব প্রযুক্তির নাম। বাঁশের তৈরি উঁচু ঘরের মেঝেতে থাকে ছাগল, নিচে পড়ে যায় মল-মূত্র। এতে ছাগল থাকে শুকনো, উষ্ণ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে।
নিউমোনিয়া, চর্মরোগ, উকুনসহ নানা রোগের ঝুঁকি কমে গেছে অনেকটাই। আর নিচে জমে থাকা গোবর এখন কেবল দুর্গন্ধ নয়—তা হয়ে উঠেছে জ্বালানি ও জৈব সারের বিকল্প সম্পদ।
জেআরডিএম-এর নির্বাহী পরিচালক রাজিয়া সুলতানা বলেন, 'ছাগল গরিবের গাভী, আর এই মাচা সেই গরিবের স্বপ্নের সিঁড়ি। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নারীরাই হয়ে উঠছে উদ্যোক্তা।'
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দীন বলেন, 'মাচা পদ্ধতির বিজ্ঞান খুব সরল—ছাগল থাকে সুস্থ, খরচ কমে, আর লাভ বাড়ে।'
এই গল্প কেবল পশুপালনের নয়, এটি একেকটি নারীর স্বপ্ন বোনা জীবনের গল্প। মাচার নিচে পড়ে থাকা গোবর যেমন সারে রূপ নেয়, তেমনি উপরে গড়ে ওঠে সম্ভাবনার নতুন বীজ। জয়পুরহাটের অনেক ঘরেই এখন সেই বীজ অঙ্কুরিত—নাম তার ‘মাচা’।