রাজৈরে প্রবাসীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় শশুরবাড়িতে গ্রামবাসীর আগুন
প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২৫, ১৭:৩২

মাদারীপুরের রাজৈরে ইতালি প্রবাসী হালিম খানকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তার দ্বিতীয় শশুরের বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে স্বজন ও গ্রামবাসী।
বুধবার (২৫ জুন) বেলা ১১টার দিকে রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের দারাদিয়া গ্রামের সোমেদ চৌকিদারের বসতবাড়িতে এ অগ্নি সংযোগ ঘটানো হয়।
এ সময় একটি রান্নাঘর, ধান রাখার গোলাঘর ও চার রুম বিশিষ্ট একটি ভবনের ভিতরে থাকা সকল জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস।
বুধবার দুপুরে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রাজৈর থানার ওসি মাসুদ খান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার (২৩ জুন) রাতে সোমেদ চৌকিদারের বাড়িতে তার মেয়ে রেশমা বেগমের দ্বিতীয় স্বামী ইতালি প্রবাসী হালিম খানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
পরে এলাকায় চিকিৎসার কথা বলে হালিমের মরদেহ রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখানেই মরদেহটি ফেলে রেখে পালিয়ে যায় স্ত্রী রেশমা ও তার পরিবারের লোকজন।
ঘটনাটি জানাজানির পর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে গ্রামবাসী। বুধবার সকালে নিহত হালিমের স্বজন ও গ্রামবাসীরা মিলে সোমেদ চৌকিদারের বসতবাড়িতে ভাংচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।
পরবর্তীতে খবর পেয়ে রাজৈর থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুনসহ পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পরই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন সোমেদ চৌকিদার ও তার পরিবারের সকল সদস্যরা।
এ ব্যাপারে মাদারীপুরের রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান ঢাকা পোস্টকে জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
গতকালকের হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন আসামি গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এদিকে আর কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা যেন না ঘটে, সে বিষয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
উল্লেখ্য, চার বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক ধরে রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের উত্তর দারাদিয়া গ্রামের সোমেদ চৌকিদারের মেয়ে রেশমা বেগম ও পাশ্ববর্তী ইশিবপুর ইউনিয়নের নগর গোয়ালদি গ্রামের ইতালি প্রবাসী হালিমের দ্বিতীয় বিয়ে হয়।
পরে পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবা সোমেদ চৌকিদারকে ৬০ লাখ টাকা দেন হালিম এবং ইতালি থেকে আসার আগে নিজের জন্য মোটর সাইকেল কিনতে টাকা পাঠান।
কিন্তু সেই মোটর সাইকেল তার শ্যালক সবুজ চৌকিদারের নামে কেনা হয়। পরে গত ৩ মাস আগে ইতালি থেকে দেশে আসলে পাওনা টাকা ও মোটর সাইকেল নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
একপর্যায়ে সব কিছু ফেরত চাইলে তার দ্বিতীয় স্ত্রী, শ্যালকসহ শশুর বাড়ির লোকজন সোমবার (২৩ জুন) রাতে হালিমকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে।
এরপর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকালে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে লাশটি ফেলে রেখেই পালিয়ে যান স্ত্রী রেশমাসহ শশুর বাড়ির লোকজন। পরে খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে লাশটি উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।