'মুখ বন্ধ’ রাখতে টাকার খাম ‘উপহার’ দিলেন ইউএনও

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২৫, ১৮:০৬ | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৫, ১৮:৩৩

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের সভাপতিদের পাশ কাটিয়ে নিজের মনোনীত ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং দায়িত্ব বঞ্চিত ইউপি সদস্যদের ‘মুখ বন্ধ’ রাখতে টাকার খাম ‘উপহার’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দয়ারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হা-মীম তাবাসসুম প্রভার বিরুদ্ধে।

সরকারি বিধি অনুযায়ী টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের এসব অর্থ সভাপতির তত্বাবধানে ব্যয় করার কথা থাকলেও প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন বিতর্কিত এবং নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থনীয়রা।

বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দয়ারামপুর ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে টিআরের ১৪টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ হয়েছে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮৭ টাকা।

 এ ছাড়া কাবিটার ১১ টি প্রকল্পের জন্য ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮২ টাকা, কাবিখার ৩টি প্রকল্পে ১৬ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন চাল এবং অপর ৩টি প্রকল্পে ১৮ দশমিক ০৬ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়।

টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের এসব অর্থ প্রকল্প সভাপতির তত্বাবধানে ও সরাসরি জনসম্পৃক্ততার ভিত্তিতে ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইউএনও নিজেই প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ নেন। কেনাকাটা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন সবই করেন তার পছন্দের লোক দিয়ে। প্রকল্পের অর্থ ব্যবস্থাপনাতে দেখা দেয় স্বচ্ছতার অভাব।

৪ নং দয়ারামপুর ইউনিয়নের একাধিক ইউপি সদস্য জানান, কাগজে কলমে নাম মাত্র সভাপতি রাখা হলেও প্রকল্পের কাজ করেছেন ইউএনও। স্বাক্ষর নিয়ে প্রকল্পের টাকাও তুলে নিয়েছে ইউএনও অফিস থেকে। দায়িত্ব বঞ্চিত সভাপতিদের খুশি রাখতে টাকার খাম ‘উপহার’ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি সদস্য জানান, প্রকল্পগুলো সবই ইউএনও স্যার তার লোক দিয়ে বাস্তবায়ন করছেন। আমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হলেও আমাদের কোনো কাজ নেই। স্যার কাজ করে সেখান থেকে কিছু টাকা ঈদের আগে আমাদের দিয়েছেন। আমার একটি প্রকল্প থাকায় আমার খামে ১৫ হাজার টাকা ছিলো। যাদের বেশি প্রকল্প তাদের টাকার পরিমানও বেশি।

ইউএনও’র কাছ থেকে টাকার খাম পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে আরেক ইউপি সদস্য (১নং ওয়ার্ড) ও তিনটি প্রকল্পের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঈদের আগে কাজ হওয়া প্রকল্পগুলোর থেকে কিছু টাকা ইউএনও’র কাছ থেকে পেয়েছেন। কাজ শেষে সব হিসাব সম্পূর্ন হলে আরও টাকা পাবেন বলে আশা এই ইউপি সদস্যের।

এবিষয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহ-সভাপতি মাহাবুব হোসেন বলেন, প্রসাশনের কর্মকর্তাদের এমন অনিয়ম অপ্রত্যাশিত। দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে দূদকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। সেইসাথে ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানান তিনি।

এবিষয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ৪ নং দয়ারামপুর ইউপি প্রশাসক হা-মীম তাবাসসুম প্রভা বলেন, কাজ না করতে পারলে মেম্বাররা সভাপতি হিসেবে স্বাক্ষর করছে কেন? মেম্বারদের যদি অভিযোগ থাকে সেটা তারা আমাকে বলবে।
তবে, টাকার খাম দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।