আবাসন ব্যবসায় প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে জেদ্দা হাউজিং কোম্পানি
প্রকাশ | ২৮ জুন ২০২৫, ১৮:৪৩

আবাসন ব্যবসার নামে এক প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে জেদ্দা হাউজিং কোম্পানি লিমিটেড। প্লট বিক্রির লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিচ্ছে এই অনুমোদনহীন হাউজিং কোম্পানি।
এবিষয়ে স্থানীয় ভুক্তভোগী আব্দুস সাত্তার মোল্লা এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ।
অভিযোগ সুত্রে জানাযায়, এই হাউসিং কোম্পানি ১০/১৫ শতাংশ জমি বায়না ও পাওয়ার মুলে মালিক হয়ে ৯শত বিঘা জমি বিক্রির জন্য বিশাল বড় বড় সাইনবোর্ড দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছে।
স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের তিন ধাপের ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসনের দায়মুক্তি সনদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার কথা থাকলেও এগুলো না নিয়ে আকর্ষনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারন মানুষের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন জেদ্দা হাউজিং কোম্পানি নামে এই আবাসন প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেদ্দা হাউজিং লিমিটেডের নামে ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া এই শর্তের একটিও পূরণ করেননি।কিন্তু বিভিন্ন আকারের প্লট করে বিক্রি করা সহ প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে দেদারসে।
আইন ও বিধিবিধান না মেনে ৯০০ বিঘা জমির লে-আউটে তৈরির মাধ্যমে ৩ কাঠা, ৫ কাঠা ও ১০ কাঠা আয়তনের প্লট দেখিয়ে বুকিং বাণিজ্য করছে প্রতিষ্ঠানটি। একই প্রকল্পে ডুপ্লেক্স, ট্রিপ্লেক্স, ভিলা এবং কন্ডোমিনিয়ামের বুকিংও নেয়া হয়। যেখানে আবাসন প্রকল্প করতে গেলে যে শর্ত মানতে হয়- তার কোনটিই নাই এ হাউজিং কোম্পানির।যেখানে কোম্পানীর নামে ১০ একর জমি থাকতে হবে, সেখানে এই কোম্পানীর ১০ শতাংশ জমিও নিজেদের নামে সাফ কাবলা কেনা নেই। অথচ লে-আউটে কৃষিজমির উপর সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ৫০/৬০ ফুট জায়গা বালু ভরাট করে গ্রাহকের কাছ থেকে বুকিংমানি নিয়ে প্লট বিক্রি করে যাচ্ছে দেদারসে ।
জেদ্দা হাউজিংয়ের বিজ্ঞাপনে বলতে শুনা যায় ৩ কাঠার প্লট মাত্র ২০ হাজার টাকায় জমির মালিক হোন, প্রতি কাঠার দাম ৬ লাখ, বুকিং করলেই ১৫% ছাড়, ৫০% ডাউন পেমেন্টে সাফ কাবলা রেজিস্ট্রেশন, ৬০ কিস্তিতে মুল্য পরিশোধ,। জেদ্দা হাউজিং লিমিটেড এর এমন আরো অনেক বিজ্ঞাপনেই ভাসঁছে নেট-দুনিয়া। ফেসবুক, ইউটিউব, সহ রাস্তার মোড়ে মোড়ে টাঙ্গানো হয়েছে কোম্পানির বড় বড় বিলবোর্ড বিজ্ঞাপন।
স্থানীয় জমির মালিকরা বলছেন আমাদের জমির সামনে পেছনে সামান্য কিছু জমি বায়না ও পাওয়ার নিয়ে বড় বড় সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই জমি আমাদের ধান উৎপাদন এর একমাত্র উৎস এই জমিগুলো আমরা বিক্রি করবো না।
প্লট দেখতে আসা ক্রেতা মোতাহার মিয়া জানান, সাইনবোর্ড লাগানো পুরো জায়গাটাই হাউজিং কোম্পানির বলে আমাদেরকে দেখানো হয়েছে, এখানে ৯০০বিঘা জমি আছে গ্রাহকের চাহিদার প্রেক্ষিতে আরও জমি ক্রয় করা হবে।
যদিও জমির পরিমাণ জানাতে পারেননি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং ম্যানেজার।
কোম্পানির প্রোফাইলে চেয়ারম্যান লেখা
হাফেজ আশরাফুল ইসলাম নিজেকে জেদ্দা হাউজিং লিমিটেড এর এমডি দাবি করেন। তবে আশরাফুল জানিয়েছেন তার এই প্রকল্পে কোনো বিনিয়োগ নেই তাকে দায়িত্ব দিয়ে বসানো হয়েছে। তার আপন ছোট বোন আসমা আক্তারকে রাখা হয়েছে পরিচালক হিসাবে
কোম্পানির সকল কাগজপত্র খোঁজেও বিনিয়োগকারীদের আর কোন পরিচয় জানা যায়নি।
গাজীপুরের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আরেফিন বাদল বলেন, তারা আমাদের কাছে কোন আবেদন করেননি। আবেদন করলেও লম্বা একটা ধাপ অতিক্রম করে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিতে হয় এর আগে আবাসন কোম্পানি করার সুযোগ নেই।
এই বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনকে সরকারি নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ কায়সার খসরু জানিয়েছেন অনুমতি না নিয়ে কাজ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।