সারিয়াকান্দিতে নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রির রমরমা ব্যবসা!
প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২৫, ১৪:৪২

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় লাইব্রেরিগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট-গাইড। প্রতি বছরের মতো উপজেলার প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সকল বিদ্যালয়ে গাইড বই নিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নির্দেশনা দিয়েছে।
বিভিন্ন বিদ্যালয় ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশনীর বইয়ের কথা উল্লেখ করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনেকটা বাধ্য হয়ে এসব বই উচ্চ মুল্য কিনছে। উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলে এসব জানা যায়।
এই উপজেলায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আইন ও নিয়ম অগ্রাহ্য করে প্রকাশ্যেই বেআইনি ও নিষিদ্ধ গাইড ও নোট বই বাণিজ্য চালিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা আর ধ্বংস করছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সৃজনশীল বিকাশ।
আইন অনুযায়ী, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নোট-গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশনা, আমদানি, বিতরণ ও বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই বিধান লঙ্ঘনকারীকে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
সরেজমিন ও অনুসন্ধানে জানাযায়, উপজেলার সারিয়াকান্দি পৌরসভা, জোড়গাছা,রামচন্দ্রপুর, ছাইহাটা, ফুলবাড়ি, কুতুবপুর,কড়িতলা বাজারে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের বাণিজ্য চলছে লাইব্রেরিগুলোতে।
এ বাণিজ্যে গাইড কোম্পানী গুলো মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে দলে টেনেছে কিছু অসাধু শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাকে।
সারিয়াকান্দি জোড়গাছা গ্রামের বাসিন্দা হামিদুল ইসলাম। পেশায় একজন ভ্যানচালক তিনি বলেন, 'সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। তার ওপর মেয়েদের পড়াশোনার খরচ।
এর মধ্যে উচ্চমূল্যের গাইড বই। শিক্ষিত করার স্বপ্নে কিছুদিন আগে মেয়েকে কিনে দিয়েছি গাইড বই। শিক্ষকরা বলে দিয়েছেন কোন কোম্পানির গাইড বই কিনতে হবে। বাধ্য হয়ে গাইড বই কিনতে হচ্ছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলার পৌরসভা এলাকার একজন অভিভাবক ( নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) অভিযোগ করে বলেন, আমার দুই মেয়ে একজন ছোট ওকে ১২শ’ টাকা দিয়ে গাইড কিনে দিয়েছি।
আরেকজন ৯ম শ্রেনীতে পড়ে ওর বই কিনতে প্রায় ৫ হাজার টাকা লাগবে তাই এখন কিনতে পারনী। কিছু শিক্ষক বই বিক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি করে গাইড কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন।
বিনিময়ে বিক্রেতার কাছ থেকে নিচ্ছেন কমিশন। সুযোগ বুঝে বিক্রেতারাও বই বেশি দামে বিক্রি করছেন। আমরা আর্থিক ভাবে সচ্ছল না হওয়া এটা অনেক কঠিন চাপ সৃষ্টি করেছে।
৭ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, শিক্ষকরা নির্ধারিত প্রকাশনীর নোট বা গাইড বই কিনতে নির্দেশ দেন। অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, শিক্ষকদের কথামতো গাইড না কিনলে রাগ করেন তারা।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কর্মরত একটি পাবলিশার্সের মার্কেটিং নিয়োগ প্রাপ্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি বলেন, ‘ভাই আমার কাজ হলো শিক্ষকদের ভিজিট করা সেটা সৌজন্য কপি গাইড দিয়ে।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের গিফট থাকে নগদ অর্থ দিয়ে বিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। এই চুক্তিতে যে বিদ্যালয়ের ছাএ-ছাত্রীসংখ্যা যত বেশি সেই বিদ্যালয়ের টাকাও পাই বেশি।’
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি রমজান আলী বলেন, আমি একজন শিক্ষক ও শিক্ষক নেতা হিসেবে আমাদের নিয়মিত সভায় বলে দেয়। যেনও কোন শিক্ষক গাইড বই কিনতে ছাত্র-ছাত্রীদের না বলি।
অভিভাবকরা আমার কাছে থেকে কোন গাইড বই কিনবে সাজেশন চাইলে তাদেরকে বুঝিয়ে বলি যে গাইড বইয়ের কোনও দরকার নাই। পাঠ্য বই পড়লেই হবে।
আপনি যেটা বললেন অর্থনীতিক লেন-দেন হয় কিনা এ বিষয়ে জানিনা তবে বই কোম্পানির লোকজন শিক্ষকদের রাইচ কুকার প্রেশার কুকার প্লেট গ্লাস গিফট হিসেবে দিয়ে থাকে।
নোট ও গাইড বই বাণিজ্যে শিক্ষকদের জড়িত থাকা প্রসঙ্গে সারিয়াকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাকী মো.জাকিউল আলম ডুয়েল বলেন, আমি জানি এরকম অনেক বিদ্যালয়ে করেছে।
তবে বেশির ভাগ ক্ষেএে যারা বিভিন্ন জায়গায় প্রাইভেট পড়ায় তারাই এসব বেশি করে থাকে। অনেক শিক্ষক এস বই কোম্পানির সাথে বিভিন্ন চুক্তিতে এসে এরকম করে থাকে। আমি বিভন্ন সময় শিক্ষকদের নিয়ে সভা করে এসব করতে নিষেধ করি কিন্তু কোনও লাভ হয় না।
সারিয়াকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত) মো.তারিকুল আলম বলেন, ‘আমি খোঁজ খবর নেব। সঠিক তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নাই। খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্হা গ্রহণ করব।