৬ মাসে ৯৮ ভাগ মামলা নিস্পত্তি বরিশাল জেলা পুলিশের
আসামি গ্রেপ্তার ৪ হাজার
প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২৫, ১৪:৫৭

নানা সংকোটের মধ্যেও ৬ মাসে আটানব্বই ভাগ মামলা নিস্পত্তি করেছে বরিশাল জেলা পুলিশ। এক হাজার মামলার বিপরীতে আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে আট শতাধিক। অন্যদিকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আটক হয়েছে তিন হাজারের উপরে। গত ছয় মাসে হত্যা মামলার আসামী আটক হয়েছে ১৪ জন। বিগত সময়ের চেয়ে কমেছে ডাকাতি ও চুরির ঘটনা।
আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রনে বরিশাল জেলা পুলিশ বিগত অন্যান্য সময়ের চেয়ে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে। পুলিশের টহল থেকে শুরু করে বেড়েছে আসামী আটকে তৎপরতা। এতে করে কমে আসছে অপরাধ প্রবনতা। বর্তমান পুলিশ সুপার মোঃ শরিফ উদ্দীনের নেতৃত্বে ও উৎসাহে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে জেলা পুলিশের সদস্যরা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে চলতি বছর ১৫ জুন পর্যন্ত জেলার দশ উপজেলার থানাগুলোতে হত্যা, ডাকাতি, চুরিসহ বিভিন্ন ঘটনায় ১ হাজার ৫৮ টি মামলা দায়ের হয়েছে।
এরমধ্যে নিস্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৩৫ টি মামলা। এসব মামলায় আসামী গ্রেপ্তার হয়েছে ৮২৫ জন। শতকরা হিসেবে মামলা নিস্পত্তির হার ৯৮ ভাগ। অন্যদিকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেপ্তার হয়েছে ৩ হাজার ২৭২ জন। দীর্ঘ কয়েক বছরের মধ্যেও জেলা পুলিশ এ অর্জন করতে পারেনি। যা বর্তমান পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দীন যোগদানের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে করেছেন।
সূত্রটি আরও জানিয়েছেন, বর্তমান পুলিশ সুপার আইনশৃংখলার অন্যান্য দিকগুলোর পাশাপাশি মাদক নির্মূলে বিশেষ নজরদারী দিয়েছেন। এর ফলে গত ছয় মাসে জেলার থানাগুলোতে ১৬৫টি মাদক মামলা হয়েছে। আটক হয়েছে ২০৪ জন। উদ্ধার হয়েছে ৬৪ কেজি গাঁজা, ৪টি গাঁজা গাছ, ১২ হাজার ৫৯৫ পিস ইয়াবা ট্যালেট, ৫২৫ বোতল এ্যালকোহল ও ৬৫ লিটার চোলাই মদ। এসময় জেলার দশ উপজেলায় ১৭ টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নিস্পত্তি হয়েছে ১৪ টি মামলা। এসব মামলায় আটক হয়েছে ১৮ জন আসামী।
গত ডিসেম্বর থেকে কমে এসেছে ডাকাতির হার। ছয় মাসে জেলায় ৭ টি ডাকাতি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ৫ টির তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আসামী গ্রেপ্তার হয়েছে ২৩ জন। চুরির মামলা হয়েছে ৬৫ টি। চুরির মালামালসহ আটক হয়েছে ৭২ জন। এছাড়া ৫৬৬ টি মোবাইল সেট হারানোর অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ৩০৩ টি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে জেলা পুলিশ।
অন্যদিকে আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রনে হাইওয়েসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জেলা পুলিশ আগের চেয়ে টহলও বৃদ্ধি করেছে। নজরদারি বাড়িয়েছে অবৈধ যানবাহন রোধে। গত ছয় মাসে ৩১৭ টি অবৈধ যানবাহন আটকসহ ৩ হাজার ৫৪৯ টি মামলা দায়ের করেছে জেলা পুলিশ। এসব মামলা থেকে আদায় করা হয়েছে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫ টাকা। জেলা পুেিশর এ তৎপরতায় স্বস্তি ফিরে এসেছে দশ উপজেলার সাধারণ মানুষের মাঝে।
জেলার বাকেরগঞ্জ কামারখালি এলাকার বাসিন্দা সোনিয়া খানম নামের এক গৃহিণী জানান, তার পারিবারিক একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সহযোগীতা চাইলে কোন লিখিত অভিযোগের অপেক্ষায় না থেকে বাকেরগঞ্জ থানার ওসি তাৎক্ষনিক কাছাকাছি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দেন। এবং বিষয়টি নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত একাধিকবার পুলিশ সেখানে গিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালান। এ ধরণের পুলিশি তৎপরতা আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে জানান ওই গৃহিনী। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা ভিাগের এক সদস্য জানান, যদি প্রয়োজনীয় জনবল ও যানবাহন থাকতো তবে বরিশাল জেলা পুলিশ জনগণের চাহিদা অনুযায়ী আরও বেশি সেবা দিতে পারতো।
জেলা পুলিশ সুপার মোঃ শরিফ উদ্দীন বলেন, তিনি যোগদানের পর থেকে চেষ্টা করেছেন পুলিশের কর্মকান্ড দিয়ে তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে। জেলা পুলিশের সদস্যদের আন্তরিকতার কারনেই সেটা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি। আর দায়িত্ব অবহেলার কারনে যদি কোন পুলিশের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসে তবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে আইনশৃংখলা উন্নয়নে জনগণের সহযোগীতা কামনা করেছেন এই পুলিশ সুপার।