গোদাগাড়ীতে ঐতিহাসিক সান্তাল হুল দিবস পালিত
প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২৫, ১৩:১৯

"যেখানে অধিকার বঞ্চনা, সেখানেই হুল"—এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আজ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাকনহাটে পালিত হলো ঐতিহাসিক সান্তাল হুল দিবসের ১৭০তম বর্ষপূর্তি।
সিসিবিভিও ও ব্রেড ফর দি ওয়ার্ল্ড, জার্মানীর সহায়তায় এবং রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটি ও গ্রাম সংগঠনগুলোর আয়োজনে এদিন পালিত হয় নানা কর্মসূচি।
দিবসটির সূচনা হয় সিসিবিভিও শাখা কার্যালয় থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালির মাধ্যমে, যা কাকনবাজার প্রদক্ষিণ শেষে কাকনহাট পৌরসভার শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শেষ হয়।
পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় পথসভা ও আলোচনা পর্ব।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি সুধীর সরেন।
প্রধান আলোচক ছিলেন সিসিবিভিও’র সমন্বয়কারী আরিফ ইথার। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন রক্ষাগোলা কমিটির নেতৃবৃন্দ সুমিতা হাঁসদা, মলিন মার্ডী, বাপ্পি মার্ডী, মুকুল সরেন ও রঞ্জিত রায়।
বক্তারা বলেন, “সাঁওতাল হুল দিবস আমাদের গর্বের ইতিহাস হলেও, ১৭০ বছর পরও আমরা অধিকারবঞ্চিত। এখনো ভূমির ন্যায্য মালিকানা পাইনি, এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে সমতলের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি মেলেনি।”
তাঁরা আরও বলেন, ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন শুরু হওয়া সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল উপমহাদেশের প্রথম সংগঠিত ও সশস্ত্র গণজাগরণ।
সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরবের নেতৃত্বে ব্রিটিশ শাসক ও দেশীয় দালালদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল হাজারো সাঁওতাল। তাঁদের এই আত্মত্যাগ ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন প্রেরণা জুগিয়েছিল।
অনুষ্ঠানে স্মরণ করা হয় সাঁওতাল জাতির বীর সন্তান সিধু-কানু, চাঁদ-ভৈরব, ফুলোমনি ও ঝালোমনির বীরত্বগাঁথা।
বক্তারা দাবি জানান, সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃত ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে এই সংগ্রামের কথা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিসিবিভিও’র প্রশিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা সৌমিক ডুমরী ও সমাজ সংগঠক মানিক এক্কা।
সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন উর্ধ্বতন মাঠ কর্মকর্তা নিরাবুল ইসলাম এবং সহযোগিতায় ছিলেন সিসিবিভিও’র সমাজ সংগঠকগণ।
এই দিনে শুধু স্মরণ নয়, ছিল প্রতিবাদ ও অধিকারের প্রত্যয়ও। হুল দিবস সাঁওতাল সমাজের কাছে শুধু ইতিহাস নয়, বরং চলমান সংগ্রামের শক্তি ও অনুপ্রেরণাও।