শ্যামনগরে চেতনানাশক স্প্রে দুই পরিবারের সর্বস্ব লুট
প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৫, ১৫:৫৭

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় রাতের আঁধারে চেতনানাশক স্প্রে করে দুটি পরিবারে দূর্ধ্বর্ষ চুরি সংঘটিত হয়েছে।
এ সময় একটি বাড়ি থেকে প্রায় ১০ ভরি স্বর্ণ,নগদ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে অপর একটি বাড়ি থেকে কি কি চুরি গেছে পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতার কারণে জানা সম্ভব হয়নি।
মঙ্গলবার (০১ জুলাই) দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১১ টার দিকে শ্যামনগর পৌরসভার বাদঘাটা গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
গ্রামবাসী সূ্ত্রে প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, বাদঘাটা আইসিএম কৃষি ক্লাবের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য, বাদঘাটা গ্রামের মৃত হরেকৃষ্ণ মন্ডল এর পুত্র দেবীরঞ্জন মন্ডল (৬৫) ও তার কাকাতো ভাই মৃত প্রাণকৃষ্ণ মন্ডল এর পুত্র সাবেক ইউপি সদস্য চিত্তরঞ্জন মন্ডল (৬০) এর বাড়ীতে এই ঘটনা ঘটে।
পারিবারিকভাবে জানা যায়, প্রতিদিনকার ন্যায় রাতের খাবার শেষে পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে পড়েন। তবে দেবীরঞ্জন মন্ডলের কন্যা শিউলী মন্ডল (২৫) রাত্র সাড়ে ১১ টার দিকে তার স্বামী পলাশ মজুমদার (৩৫) এর সাথে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বলারত অবস্থায় হঠাৎ করেই গোঙাতে থাকেন এবং বলেন তার মাথা ঘুরাচ্ছে ।
কিছুক্ষণ পরেই মাথা ঘুরানোর কথা বলতে না বলতেই হাত থেকে মোবাইল ফোন টা পড়ে যায়। ফোনকল চালু থাকা অবস্থায় শিউলীর প্রান্ত থেকে কোন কথা শুনতে না পেয়ে তার জামাই কিছু বুঝে উঠতে না পেরে তাৎক্ষনিক তার শশুর দেবীরঞ্জন কে মোবাইলে কল করেন। শশুরের ফোনে কোন প্রকার সাড়া না পেয়ে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে করে সে তার বাসা থেকে দূরবর্তী এক কিঃমিঃ এ অবস্থিত জামাই তার বাসা থেকে তড়িঘড়ি করে বের হচ্ছিলেন।
এমন সময় তার শ্যালক ঢাকা থেকে পলাশ মজুমদার কে ফোন করেন এবং জানান, এইমাত্র তার সাথে তার বাবা দেবীরঞ্জন মন্ডলের কথা হয়েছে। তার নাকি মাথা ঘোরাচ্ছে চোখে ঝাঁপশা দেখছেন। দেবীরঞ্জনের পুত্র ধৃতিমান মন্ডল তার জামাইবাবু পলাশ কে অনুরোধ করেন দ্রুত তাদের বাড়ীতে যাওয়ার জন্য।
পলাশ মজুমদার বলেন, আমি বাড়ীতে এসে দেখি বাড়ীর গেইটে আগে থেকে যেমনভাবে তালা মারা ছিল, ঠিক তেমনভাবেই রয়েছে। তিনি বিকল্প চাবি দিয়ে গেট খুলে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে রুমের দরজা ভাঙা দেখতে পান । আর পরিবারের সদস্যরা দেবীরঞ্জন মন্ডল, তার স্ত্রী শিখা রানী, কন্যা শিউলী মন্ডল, বোন সুমিত্রা রাণী সব অচেতন অবস্থায় রুমের মেঝেতে, খাটের উপরে পড়ে আছেন। বাড়ীর দোতলায় দেখা যায়, যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়েছে তারা বিল্ডিং এর পিছনের গাছ বেয়ে উপরে উঠেছে।
তিনি বলেন বাড়ীর চাবি দুই সেট। একটা তার কাছে আরেকটা তার স্ত্রী শিউলীর কাছে থাকে। তবে শিউলীর কাছে চাবি পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী পরিবার চিত্তরঞ্জনের বাসায় সকালে যেয়ে দেখেন তাদের মেঝেতে চাবিগুলো পড়ে আছে। আরও সেখানে দেখতে পান চিত্তরঞ্জন মন্ডল ও তার স্ত্রী নিলীমা রাণী তারাও মেঝেতে পড়ে আছেন।
জামাতা পলাশ মজুমদার বলেন ঘরের জিনিষপত্র সব এলোমেলো পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে গ্রাম্য ডাক্তার মোঃ ফারুক হোসেনকে কল করে ডেকে এনে প্রাথমিক চিকিৎসা করান এবং অনুমান করেন যে, কোন চেতনানাশক স্প্রে করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ডাক্তার তখনকার মতো বিদায় নেন।
বুধবার (০২ জুলাই) সকাল ০৮ টায় তাদের শারিরীক অবস্থার অবনতি দেখে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পর শ্যামনগর থানা পুলিশের একটি তদন্তকারি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রোগীর আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী নথিভূক্ত করেন।
পলাশ মজুমদার বলেন, তাদের বাসা থেকে ২ ভরি ওজনের সোনার কানের দুল দুই জোড়া, ২ ভরি ওজনের সোনার পাটি হার ১ টি, ৪ ভরি ওজনের সোনার চেইন ৩টি, দেড় ভরি ওজনের সোনার আংটি ৪ টি এবং নগদ এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা চুরি হয়েছে । পার্শ্ববর্তী চিত্ত রঞ্জনের পরিবারে ২ জন সদস্যের অবস্থা বেশি খারাপ ও আশংকাজনক হওয়ায় তাদের বাসা থেকে কি কি চুরি হয়েছে তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হুমায়ুন কবীর মোল্লা বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন সহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত রোগিদের সাথে কথা বলেছেন। ইতোমধ্যে তারা তথ্য উদঘাটনের কাজ করছেন।
যথোপযুক্ত প্রমাণাদি পেলেই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানানুগ প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে । তবে এ বিষয়ে ভূক্তভোগী পরিবার অসুস্থ থাকায় কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান।