প্রধান দুই আসামি পালানোর সময় গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৮:৫০

তজুমদ্দিন (ভোলা) প্রতিনিধি
তজুমদ্দিনে আলোচিত ধর্ষণ মামলার গ্রেপ্তার আসামি: ছবি যায়যায়দিন

ভোলার তজুমদ্দিনে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে রাতভর দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান দুই আসামি মো. আলাউদ্দিন ও মো. ফরিদ উদ্দিনকে পালানোর সময় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই মামলায় ছাত্রদল নেতা রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২ জুলাই) দিবাগত গভীর রাতে তজুমদ্দিন থানা পুলিশ পৃথক অভিযানে প্রধান আসামি আলাউদ্দিনকে বোরহানউদ্দিন উপজেলার একটি দুর্গম এলাকা থেকে এবং ২ নম্বর আসামি ফরিদ উদ্দিনকে হাতিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে।

এর কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে ডিবি পুলিশ তজুমদ্দিনের কামার পট্টি এলাকায় ছাত্রদল নেতা মো. রাসেলকে তার দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। 
তাকে তজুমদ্দিন থানায় এক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভোলা জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে পাঠানো হয়। মামলার এজাহারে রাসেলের পিতার নাম “অজ্ঞাত” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তারকৃত আলাউদ্দিনের আপন ছোট ভাই কলেজ ছাত্রদল নেতা রাসেল। 

রাসেলের পরিবার অভিযোগ করেছে, তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তাদের দাবি, ঘটনার সময় রাসেল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না এবং তিনি কোনোভাবেই এর সঙ্গে জড়িত নন।

এ মামলায় এর আগে মাওলানাকান্দি গ্রামের মৃত নূরুল হক মাঝির ছেলে ও মামলার ৫ নম্বর আসামি মো. মানিককে বুধবার দুপুরে ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে ঢাকাগামী লঞ্চে পালানোর সময় গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৮। বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাব-৮-এর ভোলা ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট শাহরিয়ার রিফাত অভি।

গ্রেপ্তারের আগে তজুমদ্দিন কলেজ ছাত্রদলের আহব্বায়ক মো. রাসেল ও যুগ্ম আহব্বায়ক সজীবকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল বহিস্কার করে। এরপর আলাউদ্দিন ও ফরিদকে নিজ নিজ রাজনৈতিক সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। আলাউদ্দিন ছিলেন তজুমদ্দিন উপজেলা বাস্তুহারা দলের সভাপতি এবং ফরিদ উদ্দিন ছিলেন উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। 

তজুমদ্দিন থানার ওসি মো. মহব্বত খান জানান, ঘটনার নেপথ্যে থাকার অভিযোগে এক নারীকেও এর আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে, ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার ও বুধবার তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। 
পরে বৃহস্পতিবার ভোলা সদর থানার হাটখোলা জামে মসজিদের সামনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।

ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ বর্তমানে চরম মানসিক বিপর্যয়ে ভুগছেন। স্বজনরা জানান, তিনি একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এবং কারও সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন না। 
তার স্বামী অভিযোগ করেন, আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে থানা কর্তৃপক্ষ শুরুতে গড়িমসি করে এবং ধর্ষণের আলামত পরীক্ষায় বিলম্ব ঘটায়। স্বজনদের  অভিযোগ, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল একই ঘটনায় রাসেল ও সজীবকে বহিস্কার করলেও মামলা এজহারে পিতার নাম অজ্ঞাত রেখে রাসেলকে আসামী করা হয়। 

ভোলা জেলা পুলিশ সুপার মো. শরীফুল হক বলেন, মামলার তদন্ত অগ্রগতি অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং খুব শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।