রোববার, জানুয়ারী ১৪, ২০১৮: মাঘ ০১, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ: ২৬ রবিউস সানি, ১৪৩৯ হিজরি ১২ বছর, সংখ্যা ২১৫ |
গুগল ওয়েব অনুসন্ধান | অনুসন্ধান |
![]() |
নবপ্রাণের উচ্ছ্বাসে শুরু
হোক নতুন পথচলাএবারের পহেলা বৈশাখের আনন্দ উৎসবে আমাদের প্রত্যাশা সুন্দর সমৃদ্ধ সুখী বাংলাদেশের। যেখানে বঞ্চনা, সংঘাত হানাহানি, লোভ-লালসা, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, ক্রসফায়ার, ঘুষ, দুর্নীতি, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, লঞ্চডুবি, সড়ক দুর্ঘটনার আতঙ্ক, আর্তনাদ আর বেদনা ভরা শোকের মাতম থাকবে না। সবাই একসঙ্গে শান্তি সৌহার্দ্য সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আবদ্ধ থাকবে। শুভ নববর্ষরেজাউল করিম খোকন
![]() প্রকৃতির নিয়মে দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এলো বাংলা সন ১৪২৩। বসন্তের শেষে গ্রীষ্মের ছোঁয়া লেগেছে প্রকৃতিতে। রোদের তাপদাহ বাড়ছে দিন দিন। আকাশে মেঘ জমছে। হঠাৎ বৃষ্টি, ঝড় শুরু হয়ে গেছে। প্রকৃতি তার আপন বৈশাখীরূপে সেজে উঠছে। সেই ছোঁয়া লেগেছে শহর, গ্রাম আর শহরতলীতে। সবাই নিজ নিজ ভাবনায় প্রস্তুতি নিচ্ছে কীভাবে বরণ করবে পহেলা বৈশাখকে। কৃষিকাজের সুবিধার্থে বাংলা সন প্রবর্তনের হাত ধরে পহেলা বৈশাখের যাত্রা শুরু। দিন কয়েক পরেই বাংলা নববর্ষের আগমন। চৈত্রের বিদায়ে বৈশাখের নবযাত্রা। আর পহেলা বৈশাখ মানে ঐহিহ্যের আবাহন। বাঙালিয়ানা ধরে রেখে চিরচেনা আনন্দে নববর্ষবরণ। প্রাণের সুরে আরও একবার মেতে ওঠা বাঙালি উৎসবে। পহেলা বৈশাখে জরাজীর্ণ, পুরাতনকে ছেড়ে নতুনের আহ্বানে ভেসে যাবে সবাই। ব্যর্থতা, না পাওয়ার গ্লানি, দুঃখ শোক, বঞ্চনার ক্ষোভ দুঃখ সবই ভুলে আবার নতুন করে জীবনের পথচলার প্রত্যয় নিয়ে শক্তভাবে দাঁড়াবে নারী-পুরুষ শিশু-কিশোর তরুণ-বয়স্ক সবাই। বৈশাখের রঙে নতুন চেতনায় সাজবে সবাই। বাঙালি যেন আকুল হয়ে প্রতীক্ষা করে বৈশাখী উৎসবের। কেননা আবহমানকাল থেকে বাঙালির চিরন্তন সর্বজনীন পার্বণ বাংলা নববর্ষ। বাঙালি আর বাংলা নববর্ষ এক বিকল্পহীন অভিযাত্রা। এই সময়ে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আনন্দে উদ্বেল হয় নববর্ষের আহ্বানে। মঙ্গল শোভাযাত্রা, হালখাতা, কারুশিল্প লোকসংস্কৃতির বর্ণচ্ছটা, নতুন রঙিন পোশাক, হলুদ ফুলের সাজসজ্জা এবং ভোরের আলোয় নববর্ষের সুর্যোদয় সবই উদযাপন করার আকাঙ্ক্ষায় থাকে প্রতিটি মানুষ। এই সময়ে আমাদের ফ্যাশনভুবন আন্দোলিত হয় নতুন আনন্দে। পোশাকের আয়োজনে আসে নতুন সংযোজন। ডিজাইনে আসে নতুনত্ব। বৈশাখ মানেই লাল-সাদার চিরায়ত রূপ। আগেও নববর্ষের দিন নতুন শাড়ি পরার চল ছিল। উৎসবের নতুন পোশাক হিসেবে সবাই সাধারণত লাল পাড়ের সাদা শাড়ি বেছে নিত। এর পেছনেও কারণ ছিল। পহেলা বৈশাখ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সর্বজনীন একটি উৎসব। এই দিনে সবাই নতুন প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভেসে যেতে যেতে অনুভব করে বাঙালিত্বের অনাবিল বিচিত্র স্বাদ। বৈশাখ মানেই ষোলো আনা বাঙালিয়ানা। তাই বৈশাখকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে এখন সাজসাজ রব। ঐতিহ্য আর রঙের সংমিশ্রণে এসেছে নতুন নতুন ডিজাইন। পহেলা বৈশাখের ছোঁয়া লাগছে মানুষের পোশাকে, অন্দরে, খাবার থেকে সবখানে। তারুণ্য এই বৈশাখে সেজে উঠবে রঙে রঙে। কীভাবে? পোশাকে ও ফ্যাশনে। গত কয়েক দিনে বাজার ঘুরে অনুমান করা গেছে এবার তরুণদের বৈশাখী পোশাকে দেখা যাবে নানা ডিজাইনের খেলা। বিশেজ্ঞরাও এমনটাই আভাস দিলেন। সাদা, লাল রঙের পাশাপাশি অন্যান্য রঙের পোশাকও এবার পরবে তরুণ-তরুণীরা। পোশাকের কাটছাঁটেও থাকবে বৈচিত্র্য। সুতি শাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির ঐতিহ্য। পহেলা বৈশাখের এত রঙিন পোশাকের আয়োজনের মধ্যে এতটুকু কমেনি সুতি শাড়ির আবেদন। বরং কপালে টিপ, চুলের বাঁধনে ফুলের বাহার আর হাতভর্তি রঙিন চুড়ি-চিরায়ত বাঙালির চমৎকার এই সাজ পোশাক এদিন ছড়িয়ে দেয় ষোলো আনা বৈশাখীবার্তা। সবাই যেন নিজের মানের মাধুরীতে তুলে ধরেছে বৈশাখী আমেজ। এখন দোকানগুলোয় আনাগোনা বাড়ছে ক্রেতাদের। বিভিন্ন ধরনের পোশাক কিনছে মানুষ। বিশেষ দিনে সাজটা হওয়া চাই মনের মতো। শুধু পোশাক কিনেই বৈশাখী আয়োজন শেষ হচ্ছে না। ফ্যাশন সচেতন নারীরা ছুটছেন পার্লারে। নারীর সৌন্দর্যকে নববর্ষের উৎসবে নতুন রঙে রাঙাতে চলছে কত অফার কত আয়োজন। বাঙালির শ্রেষ্ঠ, বৃহৎ এবং সর্বোচ্চ অসাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠান হলো বৈশাখের প্রথম দিনে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা। এ অনুষ্ঠানের আনন্দ এবং উচ্ছ্বাস এখন আর গ্রামে-গঞ্জে সীমাবদ্ধ নেই। বাঙালি হয়ে জন্ম নিয়ে বাংলায় কথা বলা, বাংলায় বেড়ে ওঠার কি যে আনন্দ, কি যে মজা তা সবাই আমরা অনুভব করি। দেশের মাটি, দেশের সংস্কৃতি যেন আমাদের গর্ব, আমাদের অহঙ্কার। সংস্কৃতি মানেই সুন্দরভাবে, বিচিত্রভাবে আর মহৎভাবে বাঁচা। আর প্রতিনিয়ত মরতে মরতে বেঁচে থাকাটার নামই অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতিতে বাংলা ও বাঙালির প্রতিটি বৈশাখেরই মৃত্যু হচ্ছে। এ মৃত্যু দৈহিক নয়। আত্মিক ও মানসিক। অসুন্দরের উপসনা করে, অকল্যাণের হাত ধরে বেঁচে থাকাটাই অপসংস্কৃতি। এখন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে চলছে অপসংস্কৃতির প্রচ- দাপট লোভ-লালসা, ষড়যন্ত্র, হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অপরাজনীতি, জঙ্গিবাদের চর্চা আমাদের চিরন্তন বাঙালিয়ানাকে মস্নান করে দিচ্ছে। আমাদের জীবনাচরণ, খাদ্যাভ্যাস, বিনোদন, আবেগ উচ্ছ্বাস সব কিছুতেই এখন বিদেশি সংস্কৃতির ছাপ সুস্পষ্ট। বৈশাখ এলেই আমরা সবাই একদিনের জন্য যথার্থ বাঙালি হতে নানা কসরত করি। যা অনেক সময় হাস্যকর প্রহসন মনে হয়। শুধু লোক দেখানো পান্তা ইলিশ উৎসবের আয়োজন রমনার বটমূলে ঘুরে বেড়ানোর কোনো তাৎপর্য থাকে না তখন। শুধু একটি দিনের জন্য বাঙালি সাজার প্রহসন না করে সারা বছরের জন্য বাঙালি হওয়ার শপথ নিতে হবে সবাইকে। আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংস্কৃতি, বাঙালিয়ানা ধরে রাখতে হবে আমরণ। সারা বছরজুড়েই আমরা বাঙালি থাকতে চাই। পোশাক আশাকে, চিন্তা-চেতনায় মননশীলতায় বাঙালি সংস্কৃতি ও জীবনবোধকে গুরুত্ব দিতে সবাইকে বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে। আসুন, এবারের পহেলা বৈশাখে নববর্ষের আনন্দ উৎসবে হৃদয়ের গভীর থেকে আত্মোপলব্ধির চেষ্টা করি যে আমরা সবাই প্রত্যেকে খাঁটি বাঙালি। আমাদের বৈশাখী উৎসবে বিনোদনে আর উদযাপনে স্বদেশীয় বিশ্বাস, প্রথা ও চেতনাকে যুক্ত করতে যত্নবান হই। যারা অপসংস্কৃতির জোয়ারে গা ভাসিয়ে স্বদেশীয় আর স্বজাতীয়, সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে তৎপর তাদের প্রতিরোধ করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এখনই। পেছনে ফেলে আসা বছরটিতে যেমন আমাদের অনেক গৌরবময় অর্জন রয়েছে তেমনি রয়েছে গ্লানি, দুঃখ-বেদনাময় অনেক স্মৃতি। আমাদের সমৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিক সাফল্যের বিপরীতে জঙ্গিবাদীদের অপতৎপরতা সবাইকে হতবাক এবং হতাশ করেছে। দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। নারী ধর্ষণ, হত্যা আর নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিকতার অধঃপতনের ঘটনা সমাজে অস্থিরতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। মানবতা ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে বিভিন্ন হিংসাত্মক ঘটনায় এরকম অনেক গ্লানিময় বোঝা নিয়ে বিদায় নিচ্ছে বাংলা ১৪২৩ সন। তারপরেই বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। আমরা সবাই নবপ্রাণের উচ্ছ্বাসে নতুন পথে এগিয়ে যেতে চাই। দুর্ভাবনা, দুশ্চিন্তার কালো মেঘ সরিয়ে উজ্জ্বল রোদেলা আলোর ভুবনে পথ চলতে চাই। ফেলে আসা অতীত সময়ের গ্লানি, দুঃখ, শোক হতাশা, বেদনা ভুলে নতুন দিনের স্বপ্নে বিভোর হতে চাই আমরা। নবপ্রাণের আনন্দে ভেসে যেতে চাই সবাই। বাংলা নববর্ষের আগমনী মুহূর্তে আমরা ফেলে আসার বছরের পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলানো নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করতে চাই না। এবারের পহেলা বৈশাখের আনন্দ উৎসবে আমাদের প্রত্যাশা সুন্দর সমৃদ্ধ সুখী বাংলাদেশের। যেখানে বঞ্চনা, সংঘাত হানাহানি, লোভ-লালসা, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, ক্রসফায়ার, ঘুষ, দুর্নীতি, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, লঞ্চডুবি, সড়ক দুর্ঘটনার আতঙ্ক, আর্তনাদ আর বেদনা ভরা শোকের মাতম থাকবে না। সবাই একসঙ্গে শান্তি সৌহার্দ্য সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আবদ্ধ থাকবে। শুভ নববর্ষ এই প্রতিবেদন সম্পর্কে আপনার মতামত দিতে এখানে ক্লিক করুন |
-এর আরো সংবাদ
সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সর্বাধিক মতামত
অনলাইন জরিপ
অনলাইন জরিপআজকের প্রশ্নজঙ্গিবাদ নিয়ে মন্ত্রীদের প্রচারে আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে_ বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপনের এই বক্তব্য সমর্থন করেন কি?হ্যাঁনাজরিপের ফলাফল
আজকের ভিউ
![]() ![]() |