বড়রা নিয়মের ধারেকাছে যায় না
ঋণখেলাপিদের ঋণ পরিশোধের জন্য নির্ধারিত নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালায় প্রথমবার পুনঃতফসিল করতে বকেয়া কিস্তির ১৫ শতাংশ বা মোট পাওনা ১০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম তা নগদ জমা দিতে হয়। দ্বিতীয়বার করতে হলে বকেয়া কিস্তির ৩০ শতাংশ বা মোট পাওনার ২০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, তৃতীয়বার পুনঃতফসিলের জন্য বকেয়া কিস্তির ৫০ শতাংশ বা মোট পাওনার ৩০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম সেই পরিমাণ নগদ অর্থ জমা দিতে হয়।
সর্বোচ্চ তিনবার পুনঃতফসিল করা যায়। কিন্তু বড় ও প্রভাবশালী খেলাপিরা নিয়মের ধারেকাছেও যায় না। সাধারণরা নিয়ম মানতে বাধ্য হন। এটি বৈষম্য সৃষ্টি করছে। একদল সুবিধা পাবে, আরেক দল পাবেন না- এমন নীতিমালা থাকা উচিত নয়। ঋণ আদায়ের এ পদ্ধতি বাতিল করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরে নিয়ে যাওয়া উচিত। একটি নির্ধারিত ফোরাম গড়ে তুলতে হবে।
গ্রাহকরা বিভিন্ন জায়গায় না গিয়ে ওই ফোরামে আবেদন করবেন। দেউলিয়া আইনের অধীনে তারা আবেদন করবেন। কী কারণে তিনি ঋণ ফেরত দিতে পারছেন না তার ব্যাখ্যা দেবেন এবং আগামী কতদিনের মধ্যে ফেরত দেবেন সেই সময় প্রার্থনা করবেন। এই সময় ঋণদানকারী সব ব্যাংক, ঋণগ্রহীতা এবং আদালতের বিচারক উপস্থিত থাকবেন। উভয়পক্ষের সম্মতিতে ঋণ ফেরত দেয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।
বর্তমান অর্থঋণ আদালতে একেক ব্যাংক পৃথক পৃথকভাবে মামলা করে এবং পৃথক বিচার হয়। এটি করলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কেউ সুবিধা হাতিয়ে নিতে পারবে না। আবার গ্রাহক যদি ঋণ ফেরত দিতে না পারেন সে জন্য তার সম্পদ আদালতের কাছে সমর্পণ করবেন। ওই সম্পদ বিক্রি থেকে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করবেন। ঋণ আদায় ব্যাংকের নিয়মিত কাজের অংশ। ব্যাংক ঋণ আদায়ে চেষ্টা করে না, এটি ঠিক নয়।
তবে অনেক সময় গ্রাহক ফেরত না দিলে বিভিন্ন ব্যাংক সময় বাড়িয়ে দেয়। ফেরত পাওয়ার আশায় অনেকবার পুনঃতফসিল করে। কারণ খেলাপি হলে ব্যাংকের ব্যালান্সশিটের প্রভাব পড়ে। ব্যালান্সশিট ক্লিন রাখতে ব্যাংক এটি করে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্রাহক অর্থ ফেরত না দিলে ব্যাংকের কিছু করার থাকে না।
ড. আহসান এইচ মনসুর
নির্বাহী পরিচালক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)