আওয়ামী লীগ ব্যবসা ও উন্নয়নবান্ধব সরকার। ব্যবসা-বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয়, উৎপাদন, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। দেশের শহর থেকে গ্রামগঞ্জ সবখানে উন্নয়নের ছেঁায়া লেগেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অথর্নীতি আজ চাঙ্গা হয়েছে। তলাবিহীন ঝুঁড়ি হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত বাংলাদেশ আজ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে আজ মডেল ইকোনমিক কান্ট্রি।
২০০৮-০৯ অথর্বছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৭০৩ মাকির্ন ডলার। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ১০ বছরে ২০১৭-১৮ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭৫১ মাকির্ন ডলার। প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগসহ দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের যে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
জ্বালাও-পোড়াও, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাসহ দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র, বাধা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এগিয়ে চলছে। বতর্মান সরকারের সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রীড়া, পরিবেশ, কৃষি, খাদ্য, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এমন কোনো খাত নেই যে খাতে অগ্রগতি সাধিত হয়নি। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গত কয়েক বছরে দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টি, মাতৃত্ব এবং শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যা দেশের গÐি পেরিয়ে প্রশংসিত হয়েছে আন্তজাির্তক মহলেও।
নিজস্ব অথের্ পদ্মার ওপর ৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দীঘর্ সেতু নিমার্ণ করার সাহস দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক অথার্য়ন থেকে সরে যাওয়ার পর বিশাল এ প্রকল্প হাতে নেয়ার ঘটনা অনেক দেশ ও সংস্থার সন্দেহ ও বিস্ময় প্রকাশ করলেও সে স্বপ্ন এখন দৃশ্যমান। ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগও চলমান। রয়েছে মহাকাশ জয়ের লক্ষ্য। দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মেট্রোরেল, এলিভেটেট এক্সপ্রেসসহ আরো কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। দেশের প্রথম ৬ লেনের ফ্লাইওভার নিমার্ণ কাজ নিধাির্রত সময়ের আগেই সম্পন্ন হয়েছে।
হাসিনা সরকারের শাসনামলেই কোনো রকম যুদ্ধ-সংঘাত বা বৈরিতা ছাড়াই দুই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের বিপক্ষে সমুদ্র বিজয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বগির্কলোমিটারের বেশি টেরিটরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল এলাকায় একচ্ছত্র অথৈর্নতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপক‚ল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পযর্ন্ত মহীসোপান এলাকার প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সাবের্ভৗম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া স্বাধীনতার পরপর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে স্থল সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল সম্প্রতি তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা বাংলাদেশের বড় অজর্ন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সবের্শষ রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আন্তজাির্তকভাবে প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশ ও সংস্থা এই ইস্যুতে বাংলাদেশের ভ‚য়সী প্রশংসা করে পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন ‘মাদার অফ হিউম্যানিটি’ উপাধি। তলাহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসার দায়িত্বও পালন করছে।
পিপলস অ্যান্ড পলিটিকস, বিশ্বের পঁাচজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিহ্নিত করেছেন, যাদের দুনীির্ত স্পশর্ করেনি, বিদেশে কোনো ব্যাংক একাউন্ট নেই, উল্লেখ করার মতো কোনো সম্পদও নেই। বিশ্বের সবচেয়ে সৎ এই পঁাচজন সরকারপ্রধানের তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও কাজের অবদানের জন্য তাকে নানা পুরস্কারে ভ‚ষিত করা হয় আন্তজাির্তক বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে।
২০১৪ সালে ইউনেস্কো তাকে ‘শান্তির বৃক্ষ’ ও ২০১৫ সালে ওমেন ইন পালাের্মন্টস গেøাবাল রফারাম নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাকে রিজিওনাল লিডারশিপ পুরস্কার এবং গেøাবাল সাউথ-সাউথ ডেভেলপমেন্ট এক্সপো-২০১৪ ভিশনারি পুরস্কারে ভ‚ষিত করে। বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অব্যাহত সমথর্ন, খাদ্য উৎপাদনে সয়ম্ভরতা অজর্ন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদানের জন্য আমেরিকার কনের্ল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ সালে তাকে সম্মাননা সনদ প্রদান করে। জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কমর্সূচি দেশে এবং আন্তজাির্তক পযাের্য় পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সবোর্চ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আথর্-২০১৫’ পুরস্কারে ভ‚ষিত করেছে।
টাইম ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের প্রভাবশালী ১০ নারী নেত্রীর একজন মনোনীত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। একজন জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা সবসময় নিজেকে প্রমাণ করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের শীষর্স্থানীয় দৈনিক খালিজ টাইমস রোহিঙ্গাদের সংকট মোকাবেলায় শেখ হাসিনার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তাকে ‘নিউ স্টার অব দ্য ইস্ট’ বা ‘পূবের্র নতুন তারকা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে।
বিগত ১০ বছরে দেশজুড়ে যতসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে তার সব কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। তাই বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প শেষ করার জন্য এবং দেশের উন্নয়নে আরও নতুন নতুন প্রকল্প নেয়ার জন্য আবারও শেখ হাসিনাকে দেশবাসীর প্রয়োজন ছিল। তাই তারা তার দল আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছেন। সম্মানিত ভোটাররা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন এবং শান্তির পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
সরকারের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য জনগণ নৌকায় ভোট দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলকে নিবাির্চত করেছেন । টানা তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন তিনি। তিনিই বিশ্বের দীঘর্স্থায়ী নারী সরকারপ্রধান। তাকে আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন।
অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ: রাজনৈতিক বিশ্লেষক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটর্ ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়াসর্ ফোরাম