বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ি থেকে যুবককে রশি দিয়ে বেঁধে ময়মনসিংহ রিহ্যাব সেন্টারে এনে পিটিয়ে হত্যা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
  ০৭ মার্চ ২০২৩, ২০:০৫

গাঁজা ও পেস্টিং সেবনের পাশাপাশি বিয়ে করার জন্য পাগল ছিলেন ১৯ বছরের যুবক আনোয়ার হোসেন আরমান। এনিয়ে পরিবারকে প্রায় সময় করতেন জ্বালাতন। আরমানের চিকিৎসার জন্য গত সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর প্রভাত ফেরী মাদকাসক্ত পূর্নবাসন কেন্দ্রের লোকজনের হাতে তুলে দেয় পরিবার। ঈশ্বরগঞ্জের তরফপাশাইল গ্রাম থেকে রশি দিয়ে বেঁধে আনা হয় তাকে। মঙ্গলবার সকালে আরমানের মৃত্যুর খবর শুনে হতভম্ব পরিবার ছুটে আসেন শহরে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পান। পরিবারের অভিযোগ তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে কাজ করছে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

ঈশ^রগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের তরফ পাশাইল গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে আনোয়ার হোসেন আরমান। ধনিয়াকান্দি ফাজিল মাদ্রাসার আলীম প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সম্প্রতি নেশার পাশাপাশি বিয়ে করার পাগলামি বেড়ে যায় তার। পরে পরিবার আরমানকে রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়। গত সোমবার বিকালে নগরীর মাসকান্দায় প্রতিষ্ঠিত প্রভাত ফেরী মাদকাসক্ত পূর্নবাসন কেন্দ্রের পাঁচ গিয়ে আরমানকে বাড়ি থেকে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসে। মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে রিহ্যাব সেন্টার থেকে জানানো হয় আরমান মারা গেছে। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন আরমানের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পান। তাদের অভিযোগ আরমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

নিহতের বাবা আব্দুল আউয়াল বলেন, ছেলে নেশা এবং পাগলামী করতো ঠিক আছে। কিন্তু আমরা কখনো তাঁর গায়ে হাত দেয়নি। কিন্তু আজকে ছেলের পিঠ, পা এবং গোপনাঙ্গে ক্ষতবিক্ষত চিহ্ন। এটি মেনে নিতে পারছি না। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।

মগটুলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শরাফ উদ্দিন বলেন, আমি মাধ্যম হয়ে আরমানকে চিকিৎসা করানোর জন্য প্রভাত ফেরীর লোকজনের হাতে তুলে দেই। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত জানি আরমান ভালো আছে। কিন্তু ১০টার দিকে মোবাইলে বলা হয় সে মারা গেছে। খবরটা শুনে আকাশ মাথায় ভেঙে পড়েছে। মেনে নিতে পারছি না।

প্রভাত ফেরী মাদকাসক্ত পূর্নবাসন কেন্দ্রের পরিচালক রাজিবুল আলম রনি বলেন, আরমানকে গাড়ি করে আনার সময় সে আমাদের লোকজনের উপর হামলা করেছে। পরে তাকে রশি দিয়ে বেঁধে রিহ্যাব সেন্টারে আনি। রাত খেয়ে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। সকালে তাঁর খিচুনি উঠলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানা তিন নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক রাসুল সামদানী আজাদ বলেন, নিহতের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। সুরতাল প্রতিবেদন আসলেই আসল রহস্য বের হয়ে আসবে।

ময়মনসিংহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশিদুল আলম বলেন, আরমান মৃত্যুর রহস্য রয়েছে। রিহ্যাব সেন্টার কোন ভাবেই তাদের দায় এড়াতে পারে না। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। অনিয়ম ভাবে চলে আসা প্রভাত ফেরী মাদকাসক্ত পূর্নবাসন কেন্দ্রে ১০জন রোগির স্থলে ভর্তি রয়েছেন ২২ জন।

নিহত আরমানের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে আরমান দ্বিতীয়।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে