বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে চালক হত্যার পর অটো ছিনতাই, ৪ বছর পর তিন ঘাতক গ্রেপ্তার 

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ০৯ জুন ২০২৩, ১০:৫৫

গাজীপুরে জুসের সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে চালক হত্যা ও অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনার চার বছর পর বুধবার তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই ।

গ্রেপ্তাররা হলো মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানার মাওয়া এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে মোঃ শাহিন (৪৭), বি-বাড়িয়ার বাঞ্চারামপুর থানার ছয় আনি গ্রামের মোঃ সালাম ওরফে চঞ্চল (৪০) এবং ফরিদপুরের সালতা থানার ফুলবাড়িয়া এলাকার হোসেন মজুমদারের ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর (৪০)।

ভিকটিম অটো চালক রবিউল ইসলাম (৪০), গাজীপুরের পূবাইল থানার তালটিয়া পূর্বপাড়া এলাকার নবাব আলীর ছেলে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভিকটিম রবিউল স্থানীয় মীরের বাজার হতে নাগদা ব্রীজ, বিন্দান, পাতারটেক, নারায়নকুল এলাকায় রিকশা চালাতেন। প্রতিদিনের মতো রবিউল ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ বিকেলে অটো রিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খুঁজেও তার কোন সন্ধান পায়নি। পরে ওই বছরের ১৩ এপ্রিল বিকাল অনুমান ৪টার দিকে স্থানীয় বিন্দান এলাকায় জহিরুল ইসলামের মুদির দোকানের পেছনে খালের পানিতে ভাসমান অবস্থায় পুলিশ অজ্ঞাত নামা পুরুষের এক লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ লাশটির সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় । লাশের খবর পেয়ে ভিকটিমের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার ও তার পরিবারের সদস্যরা লাশটি দেখে রবিউলের লাশ বলে সনাক্ত করেন।

এ ব্যাপারে ভিকটিমের স্ত্রীী মরিয়ম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে কুলকিনারানা করতে না পারায় মামলাটির তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ২০১৯ সালের ২২ জুলাই মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

পিবিআই' এর অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার-এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই’র গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ জামাল উদ্দিন মামলাটি তদন্ত শুরু করেন। দীর্ঘ তদন্ত চালিয়ে গাজীপুর পিবিআই'র একটি টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বুধবার ভোরে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ জামাল উদ্দিন জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা অটোরিকশা চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। তারা পরস্পর যোগসাজশে ২০৯ সালের ২৪ মার্চ বিকেলে ভিকটিম রবিউল ইসলামের অটোরিকশা ভাড়া নেয় এবং সবাই মিলে স্থানীয় মীরের বাজার হতে অটো রিকশায় উঠে পূবাইলগামী রাস্তার দিকে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে অটোরিকশা থামিয়ে সবাই জুসসহ অন্যান্য জিনিস খেতে থাকে এবং ভিকটিম রবিউল ইসলামকে জুসের সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে খেতে দেয়। জুস খেয়ে ভিকটিম রবিউল ইসলাম তাদেরকে নিয়ে আবার রওনা হওয়ার পর কিছুদূর যাওয়ার পর ভিকটিম রবিউল ইসলাম অচেতন হয়ে পড়েন। পরে আসামিদের মধ্যে থেকে গ্রেপ্তারকৃত আসামি জাহাঙ্গীর ভিকটিমকে ড্রাইভিং সিট হতে সরিয়ে নিজেই অটো চালাইতে থাকে। এক পর্যায়ে রাস্তার পাশের একটি ডোবার পানির মধ্যে ভিকটিম রবিউল ইসলামকে ফেলে রেখে তারা অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।

দীর্ঘ তদন্ত চালিয়ে গাজীপুর পিবিআই'র একটি টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বুধবার ভোরে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের ৭ জুন দুপুরে গাজীপুর মহানগর আদালতে পাঠানো হলে তারা ভিকটিম রবিউল ইসলামকে হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে