বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
কৃষিকে লাভজনক করতে বাজেটে বরাদ্দ ও ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে

বছরে খাদ্যশস্যের উৎপাদন হচ্ছে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার টন

১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেন। কৃষিতে সেচকাজে ডিজেল ও বিদু্যতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এতে দ্রম্নত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। কৃষির সার্বিক উন্নয়নে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। গত ১৩ বছরে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের সংকট হয়নি। কৃষকদের জন্য কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা হয়। ধারাবাহিকতায় বর্তমানে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার টন
ইমরান সিদ্দিকী
  ১৯ জুন ২০২২, ০০:০০

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতির মাঝেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ধান, গম ও ভুট্টা উৎপাদনে ক্রমেই এগিয়ে চলছে। খাদ্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে মানুষ আতঙ্কিত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা খাদ্য সংকটের পূর্ভাবাস দিয়েছে। তবে খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। সরকারের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত আছে; উৎপাদনে রেকর্ড করেছে। মহামারি করোনার চরম বিরূপ পরিস্থিতি এবং ঘূর্ণিঝড়, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রেখেছে।

খাদ্যশস্যের মূল জোগান আসে কৃষি খাত থেকে। কৃষি হচ্ছে আমাদের অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক খাত, এ খাত থেকে জিডিপির ১৩.২৯ শতাংশ আসে। কৃষিতে দেশের ৪০ শতাংশ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের সংকট ও মজুরি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ফসলচাষে যান্ত্রিকীকরণ শুরু হয়েছে। এ জন্য কৃষকদের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। যান্ত্রিকীকরণ বাড়াতে তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। জলবায়ু সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে ব্রি এবং বিনা।

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। ধান-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উপযোগী উর্বর মাটির দেশ। তা সত্ত্বে প্রাচীন প্রদ্ধতিতে চাষাবাদের কারণে সব সময় খাদ্য ঘাটতি ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। দেশের প্রথম অর্থবছরের ৭৮০ কোটি টাকার বাজেটে কৃষিখাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। আধুনিক কৃষি গবেষণার জন্য গুরুত্বারোপ করেন। উন্নত জাতের ধানের বীজ, সার, সেচ, কীটনাশকসহ কৃষির বিভিন্ন উপকরণ সহজলভ্য করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কৃষি উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হয়। স্বৈরাচারি সরকারের সময় কৃষির গুরুত্ব কমে যায়। আশানুরূপ উৎপাদন হয়নি। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ-জাতিকে প্রতিশ্রম্নতি দেয়, খাদ্য শস্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমিয়ে আনা হবে।

জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে ওঠে এসেছে। এর মধ্যে পাট রপ্তানিতে বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশ। সবজিতে তৃতীয়, মিঠাপানির মাছে তৃতীয়, আম উৎপাদনে বিশ্বে নবম বাংলাদেশ। আলু উৎপাদনে শীর্ষ দশে বাংলাদেশ। ইলিশ উৎপাদনে প্রথম বাংলাদেশ। বস্ন্যাক বেঙ্গল ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ। আর ছাগলের দুধ উৎপাদনে দ্বিতীয়, পেয়ারা উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম, কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয় এবং জলবায়ু সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবনে শীর্ষে বাংলাদেশ। কেবল উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের দিক থেকেও অধিকাংশ দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহারণ। সরকারের ধারাবাহিকতায় কৃষিকে গুরুত্ব আরোপ করায় এই অজর্ন হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

২০০৯ সালে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় কৃষিকে গুরুত্ব প্রদান করে। প্রণোদনা হিসেবে দফায় দফায় সারের দাম কমানো হয়েছে। ৬০ টাকার পটাশিয়াম এখন ১৫ টাকায় কৃষকরা পাচ্ছেন। টিএসপি সারের দাম ছিল ৮৫ টাকা এখন তার দাম মাত্র ২২ টাকা। ডিএপি সারের দাম ছিল ৯০ টাকা, সেই সারের দাম এখন ১৬ টাকা। এমওপি সারের দাম ছিল ৭৬ টাকা এখন তা ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ইউরিয়া সারের দাম ছিল ১৮ টাকা এখন কৃষকরা ১৬ টাকায় কিনতে পারছেন। দেশে সারের কোনো সংকট নেই। সরকার সারের উৎপাদন ও আমদানি অব্যাহত রেখেছে। অথচ জামায়াত-বিএনপি সরকারের আমলে কৃষি প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে। সারসহ কৃষি উৎপাদন দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। সারের জন্য কৃষকদের জীবন দিতে হয়।

১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে কৃষিকে সর্ব্বোচ গুরুত্ব প্রদান করেন। কৃষিতে সেচকাজে ডিজেল ও বিদু্যতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এতে দ্রম্নত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। কৃষির সার্বিক উন্নয়নে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। গত ১৩ বছরে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের সংকট হয়নি। কৃষকদের জন্য কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা হয়। ধারাবাহিকতায় বর্তমানে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার টন।

২০১৮ সালে সরকার আগামী প্রজন্মের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। পুষ্টি জাতীয় মাছ. মাংস, ফলমূল উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে আধুনিক করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বিশ্বমানের প্রযুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কৃষিকে লাভজনক ও কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। বাজারজাতকরণ উন্নত করা হচ্ছে। দেশের খোরপোশ কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে উন্নতি হয়েছে। সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টিতে নানান সুযোগ-সু্ি‌বধা দেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, রপ্তানি বৃদ্ধি পেলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন। বিশ্বমানের আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগে কৃষকদের উৎসাহী করা হবে।

দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। এখন নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে শাকসবজি ফলমূল উৎপাদনে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। গত ১২ বছরে সবজির উৎপাদন বেড়েছে সাত গুণ। বর্তমানে এক কোটি ৯৭ লাখ টন সবজি উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সবজি রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে অনেক। অচিরেই সবজি রপ্তানি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎসে পরিণত হবে বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়, চীন প্রথম ও ভারত ২য় অবস্থানে রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৮ হাজার টন সবজি উৎপাদন হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল এক কোটি ৮৪ লাখ ৪৭ হাজার টন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে