শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাল চালের ভাত বনাম সাদা ভাত কোনটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

লাল চাল আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। এটি ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। যা আমাদের হাড়কে শক্ত এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে সহায়ক। লাল চাল রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোতে কোনো ধরনের বণ্টন তৈরি হতে দেয় না। এতে আরও আছে সেলেনিয়াম নামের একটি উপাদান যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। এটি হাইপারটনশন এবং অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। উচ্চ হারে আঁশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক এবং গ্যাস শোষণ প্রতিরোধ করে। ফলে হজম প্রক্রিয়াকে আওর শক্তিশালী করে তোলে। এতে আছে ম্যাঙ্গানিজ ও ফসফরাস- যা দেহের চর্বি সংশ্লেষণ এবং স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এর উচ্চ আঁশযুক্ত উপাদান আপানার পেট দীর্ঘক্ষণ ভরিয়ে রাখে এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণে বিরত রাখে।
ম কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন
  ২৪ জুলাই ২০২২, ০০:০০

সাদা শান্তির প্রতীক হলেও, স্বাস্থ্য সচেতন হতে গিয়ে খাবার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে সাদা খাবার, যোগ হচ্ছে লাল আটা বা চাল। আসলেই কি রঙিন খাবার সাদার চাইতে বেশি উপকারী? আসুন দেখা যাক পুষ্টিবিদরা কি বলেন? খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে জানানো হয়, খাবারের রংয়ের ছড়াছড়ি যত বেশি, পুষ্টিগুণও ততটাই বেশি- এই ধারণার খপ্পরে পড়ে সাদা রংয়ের খাবারগুলো বাদ পড়ে যাচ্ছে পেস্নট থেকে। রং মানেই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আঁশ ইত্যাদি। এই ধারণার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে রঙিন চেহারা নিয়ে পেস্নটে আবারও জায়গা করে নিতে চায় লাল চালের ভাত।

লাল চালে প্রচুর অ্যানথোসায়ানিন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। যা শরীরে প্রদাহ ও অ্যালার্জি কমায়। পাশাপাশি ক্যানসারের ঝুঁকি এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাদের জন্যও সাদা চালের চেয়ে লাল চালের ভাতই ভালো। একটা সময় ছিল যখন লাল চাল কেবল নিম্ন আয়ের মানুষের খাবারের তালিকায় ছিল। আর এই লাল চাল খেয়েই নিম্ন আয়ের লোকজন সুস্থ-স্বাভাবিক, বলা চলে নীরোগ জীবনযাপন করতেন। সময়ের পালা বদলে এখন মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। তাই স্বাস্থ্য সচেতনতার অংশ হিসেবে অনেকেই খাবার তালিকায় লাল চাল যোগ করছেন। তাহলে লাল চাল কি সাদা চালের চেয়ে ভালো, কেন খাবেন লাল চাল, জেনে নিন এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমত বাড়ায়। আর পলিশ করা সাদা চালে খুবই সামান্য পরিমাণে সেলেনিয়াম থাকে। লাল চালে যে পরিমাণ আয়রন রয়েছে তা রক্ত শূন্যতায় ভোগা মানুষের জন্য ম্যাজিকের মতো কাজ করে। লাল চাল ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যও খুব উপকারী। হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে লাল চাল। এ জন্য আবার তিন বেলা পেস্নট ভরে লাল চালের ভাত খেলে কিন্তু হবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যেটুকু সাদা ভাত খাওয়া প্রয়োজন সেটুকু লাল চালের ভাত খেতে পারেন।

গবেষণা অনুযায়ী, প্রচলিত সাদা ভাতের পরিবর্তে লাল চালের ভাত স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী। তবে পার্থক্য রয়েছে। সাদা চাল স্বাস্থ্যের জন্য মোটামুটি ভালো। তবে এটি কলে ভাঙানো, পলিশ করার ফলে প্রাকৃতিক স্বাদ ও চেহারা পরিবর্তিত হয়। প্রক্রিয়াজাতের কারণে এতে থাকা লৌহ, ভিটামিন, দস্তা, ম্যাগনেসিয়ামসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। অপরদিকে প্রক্রিয়াজাত করা না হলেও এর পুষ্টিগুণ হোল গ্রেইন বা প্রক্রিয়াজাত করা হয়নি এমন চালের পুষ্টিমানের সমান হয় না।

লাল চাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এই চাল। সাদা চাল বাদ দিয়ে লাল চালের ভাতে অভ্যস্ত হওয়ার মাধ্যমে ডায়বেটিস, হৃদরোগ, কোলেস্টেরলের সমস্যা ইত্যাদির আশঙ্কা কমতে দেখা গেছে বিভিন্ন গবেষণায়। রক্তচাপ কমাতেও লাল চাল উপকারী। পাশাপাশি প্রদাহ এবং ক্যানসারের হাত থেকে বাঁচাতে সহায়ক এটি। আবার মনে রাখবেন সব সাদা চালই খারাপ নয়। ব্যতিক্রমধর্মী সাদা চালের মধ্যে আছে বাসমতি চালও 'হোল গ্রেইন' চাল। এদের 'গস্নাইসেমিক ইনডেক্স'য়ের মাত্রা তুলনামূলক কম। হজম হয় ধীরে তাই রক্তে শর্করার পরিমাণ হুট করে বাড়িয়ে দেয় না।

বাসমতি চালে আছে ভিটামিন বি, কর্পূর এবং ম্যাগনেসিয়াম- যা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-কারসিনোজেনিক উপাদানে ভরা তুষ যোগ করলে বাসমতি চাল একটি উপকারী খাবার। চালের বাজারে গিয়ে যারা সাদা চাল খুঁজে অভ্যস্ত তাদের জন্য চমকপ্রদ খবর হতে পারে লাল চাল। সাদা চালে শুধু ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণই বেশি থাকে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদান কম থাকে। ফলে তা ডায়াবেটিস ও স্থূলতাসহ নানা রোগের কারণ হয়ে ওঠে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই খাদ্য তালিকা থেকে চালকে পুরোপুরি বাদ না দিয়ে বরং লাল চালকে যুক্ত করাটাই বেশি স্বাস্থ্যকর হবে। এখানে লাল চালের অজানা স্বাস্থ্যগত উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলো।

লাল চালে রয়েছে ফাইটিক এসিড, ফাইবার এবং অ্যাসেনসিয়াল পলিফেনলস। এটি হলো এমন একটি জটিল কার্বোহাইডেট যা আমাদের দেহে সুগারের নিঃসরণ কমিয়ে দেয় এবং আমাদের ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত রাখে। লাল চাল লো 'গস্নাইসেমিক ইনডেক্স' ফুড। তার মানে হলো হজমের পর লাল চাল থেকে সুগার কমহারে নিঃসরিত হয়। ফলে হুট করেই রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় না এবং ভালোভাবে দেহে শোষিত ও অপসারিত হয়। অন্যদিকে সাদা চাল হলো হাই 'গস্নাইসেমিক ইনডেক্স' ফুড যা সহজেই চর্বি জমায়।

লাল চাল আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। এটি ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। যা আমাদের হাড়কে শক্ত এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে সহায়ক। লাল চাল রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোতে কোনো ধরনের বণ্টন তৈরি হতে দেয় না। এতে আরও আছে সেলেনিয়াম নামের একটি উপাদান যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। এটি হাইপারটনেশন এবং অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। উচ্চ হারে আঁশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক এবং গ্যাস শোষণ প্রতিরোধ করে। ফলে হজম প্রক্রিয়াকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। এতে আছে ম্যাঙ্গানিজ ও ফসফরাস- যা দেহের চর্বি সংশ্লেষণ এবং স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এর উচ্চ আঁশযুক্ত উপাদান আপানার পেট দীর্ঘক্ষণ ভরিয়ে রাখে এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণে বিরত রাখে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ আঁশযুক্ত এবং কম 'গস্নাইসেমিক' উপাদনযুক্ত খাদ্য শস্য যেমন লাল চাল খেলে মেটাবোলিক সিন্ড্রোম সৃষ্টির ঝুঁকি কমে। লাল চালে যে তেল আছে তা এলডিএল কোলোস্টেরল ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনে বলে কথিত আছে। আর এ কারণেই লাল চাল আমাদের খাদ্য তালিকার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর একটি শস্য। লাল চালে থাকা আঁশ হজম প্রক্রিয়ায় কোলেস্টেরলকে বেঁধে ফেলে এবং তা নিঃসরণে সহায়তা করে।

লেখক: উর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা,

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে