শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শীতকালে বোরোর বীজতলা ও রবিশস্যের যত্ন নিতে হবে

সরকার আবুল কালাম আজাদ
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

বাংলা পঞ্জিকা মতে এখন পৌষ মাস চলছে। শীতের এ সময়ে মাঠে মাঠে রবিশস্যসহ অনেক ধরনের ফসল থাকে। বিশেষ করে বোরো ধানের জন্য বীজতলা থাকে। বোরো ধান রোপণের প্রস্তুতি চলছে মাঠে মাঠে। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বোরো ধান চাষাবাদ করলে গড় ফলন হেক্টরপ্রতি দেড় থেকে দুই টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। এ জন্য বোরো ধানের বীজতলার যত্ন নিতে হবে। আপনার বীজতলায় প্রয়োজনীয় সেচ দিন। শীত ও কোয়াশায় বীজতলার চারার পুষ্টির অভাবে হলুদ হয়ে গেলে সামান্য ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিন।

বোরোর বীজতলার চারা হলুদ হয়ে গেলে প্রতি শতাংশ বীজতলার জন্য ২৮০ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। তারপরও চারা হলুদ থাকলে প্রতি শতাংশে ৪০০ গ্রাম হারে জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে। বোরোর বীজতলা ও শীতের সবজির যত্ন কীভাবে নেবেন বা কোনো প্রযুক্তি সুবিধাজনক হবে চাষিদের সেই পরামর্শ দিয়েছে কৃষি তথ্য সার্ভিস। সরকারের এ সংস্থাটি বলছে, এ সময় বোরো ধানের ক্ষেতে আগাম জাত ব্রি ধান ২৮ ও ব্রি ধান ২৯-এর পরিবর্তে ব্রি ধান ৮৮, ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৯২, ব্রি ধান ৯৬, ব্রি ধান ৯৭, ব্রি ধান ১৯, বঙ্গবন্ধু ধান১০০, ব্রি ধান১০১, ব্রি ধান১০২, বিনা ধান ১০, বিনা ধান ১৪, বিনা ধান ২৪ ও অনুমোদিত হাইব্রিড ধান আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। রাইস ট্রান্সপস্নান্টারের মাধ্যমে চাষের জন্য ট্রেতে চারা তৈরি করতে পারেন। দেশের কোনো এলাকায় এ সময় অতিরিক্ত ঠান্ডা পড়তে পারে। ঠান্ডায় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে রাখুন এবং বীজতলার পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দিন। প্রতিদিন সকালে চারার ওপর জমা হওয়া শিশির ঝরিয়ে দিন। চারাগাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করুন। এরপরও যদি চারা সবুজ না হয় তবে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম দিন। সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করে জমি তৈরি করুন, লাভবান হোন। সময় ও খরচ উভয়ই বাঁচান। চারার বয়স ২৫ থেকে ৩০ দিন হলে মূল জমিতে রোপণ করুন।

শীতকালে বোরো ধানের বীজতলায় চারার বিশেষ যত্ন নিতে হবে। বিশেষ করে প্রচন্ড ঠান্ডায় যাতে চারাগুলোর বাড়বাড়তি ঠিকমতো হয় সেজন্য চারার বৃদ্ধির বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। শৈত্যপ্রবাহের সময় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে সকাল ১০ থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে যাতে বীজতলার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। বীজতলার পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দিতে হবে। প্রতিদিন সকালে রশি টানা দিয়ে চারা থেকে কুয়াশার পানি ফেলে দিতে হবে। বীজতলার চারার গোড়ায় ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে। ঠান্ডার কারণে চারাধসা রোগ দেখা দিলে বীজতলা থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণের সময় শৈত্যপ্রবাহ থাকলে কয়েকদিন দেরি করে চারা রোপণ করা প্রয়োজন। এছাড়াও জমিতে ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে। রোপণের জন্য ৩৫ থেকে ৪৫ দিনের চারা ব্যবহার করলে শীতে চারা কম মারা যায়, চারা সতেজ থাকে এবং ফলন বেশি হয়।

এ সময় স্বল্প পরিমাণ ইউরিয়া সার এবং জিপসাম সার বীজতলায় প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যায়। এছাড়া শুষ্ক বীজতলার মাধ্যমে চারা উৎপাদন করলে শীতের প্রকোপ থেকে চারাকে রক্ষা করা যায়। শুষ্ক বীজতলায় চারার বাড়বাড়তিও ভালো হয়। আর লবণাক্ত এলাকায় ব্রি ধান৪৭ এবং ব্রি ধান৬১ চাষাবাদ করা দরকার। ধানের চারা রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন পর ১ম কিস্তি, সাধারণ গুছিতে কুশি দেখা দিলে ২য় কিস্তি এবং কাইচ থোড় আসার ৫ থেকে ৭ দিন পূর্বে শেষ কিস্তি ইউরিয়া সার জমিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সুতরাং, শীতের তীব্রতা ও চারার বয়স বিবেচনায় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করে রোগ ও পোকামাকড় মুক্ত চারা উৎপাদনের মাধ্যমে বোরো ধানের ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।

এ সময় গমের চারার বয়স ১৭ থেকে ২১ দিন হলে প্রথম সেচ দিতে হবে। একরপ্রতি ১২ থেকে ১৪ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে এবং বপনের ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে উইডার দিয়ে গমক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। ভুট্টাক্ষেতের গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিন। গোড়ার মাটির সঙ্গে ইউরিয়া সার ভালো করে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে। গাছের নিচের দিকের মরা পাতা ভেঙে দিলে ভালো হয়। আলুর চারা রোপণের ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর মাটি তোলার সময় ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। লেট বস্নাইট (নাবিধসা) রোগ থেকে আলু রক্ষার্থে নিম্ন তাপমাত্রা, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ও বৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাইথেন এম-৪৫ অথবা হেমেনকোজেব অথবা ইন্ডোফিল প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। গাছে রোগ দেখা দেওয়া মাত্রই সাতদিন পরপর সিকিউর অথবা অ্যাক্রোভেট এম জেড ২ গ্রাম লিটার হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। তুলা পরিপক্ব হলে রৌদ্রময় শুকনা দিনে বীজ তুলা সংগ্রহ করতে হবে। ভালো তুলা আলাদাভাবে তুলে ৩ থেকে ৪ বার রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। সরিষা, তিসি এগুলো ৮০ ভাগ পাকলেই সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে। ডাল ফসলের ক্ষেত্রে গাছ গোড়সহ না উঠিয়ে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি রেখে ফসল সংগ্রহ করুন। লালশাক, মুলাশাক, পালংশাক একবার শেষ হয়ে গেলে আবার বীজ বুনে দিন। শীতকালে মাটিতে রস কমে যায় বলে সবজি ক্ষেতে চাহিদা মাফিক নিয়মিত সেচ দিন। অধিক লাভবান হতে উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ করতে হবে। স্বল্পকালীন ও উচ্চফলনশীল জাত নির্বাচন করলে অধিক ফসল ঘরে তুলা যায়। শ্রম, সময় ও খরচ সাশ্রয়ে আধুনিক কৃষিযন্ত্রের মাধ্যমে আবাদ করলে লাভবান হওয়া যায়।

শীতের প্রাদুর্ভাব বেশি হলে রাতে পলিথিন শিট বা কলাপাতা দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখুন। মনে রাখবেন সুস্থ সবল চারা অধিক ফলনের পূর্বশর্ত। চারার বয়স ৪০ থেকে ৪৫ দিন হলে মূল জমিতে চারা রোপণ শুরু করতে পারেন। এ জন্য জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে পানিসহ কাঁদা করতে হবে। চাষের আগে জমিতে জৈব সার দিতে হবে এবং শেষ চাষের আগে দিতে হবে ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য রাসায়নিক সার। পরে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। জমির উর্বরতার ওপর সারের মাত্রা নির্ভর করে। গড়ে প্রতি হেক্টর জমির জন্য সারের পরিমাণ হলো- জৈব সার ৫০ কেজি ইউরিয়া ২২০-২৭০ কেজি, টিএসপি ১২০-১৩০ কেজি, পটাশ সার ৮৫-১২০ কেজি, জিপসাম ৬০-৭০ কেজি, দস্তা ১০ কেজি। ধান উৎপাদনে বালাই ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমগুলোর মধ্যে আগাছা দমন ব্যবস্থাপনা অন্যতম। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ফলন পেতে হলে সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে আগাছা দমন করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে