শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সারা বছর পাওয়া যাচ্ছে সুস্বাদু সবজি টমেটো

টমেটোতে ভিটামিন এ, কে, বি১, বি৩, বি৫, বি৬, বি৭ ও ভিটামিন সিসহ নানা প্রাকৃতিক ভিটামিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া এতে ফোলেট, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্রোমিয়াম, কোলিন, কপার এবং ফসফরাসের মতো খনিজও থাকে। ভিটামিন সি'সমৃদ্ধ টমেটো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্ট্রেস হরমোন কমায়। এ কারণে নিয়মিত টমেটো খেলে শরীরের শক্তি বাড়ে এবং শরীর সুস্থ থাকে। টমেটা খেলে শরীরের রক্তশূন্যতা দূর হয়
সরকার আবুল কালাম আজাদ
  ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

টমেটো শীতের ফল হলেও এখন সারা বছরই পাওয়া যায়। তবে শীতের সময় এই সবজির স্বাদ অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা। টমেটো একটি সুস্বাদু সবজি। এটি কাঁচা, পাকা এবং রান্না করে খাওয়া যায়। এছাড়া টমেটো সস, কেচাপ, চাটনি ও জুস হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। সালাদ হিসেবেও রান্না টমেটো খুবই সুস্বাদু। বিশ্বে এখন আলুর পরই টমেটো উৎপন্ন হয়। অধিকাংশ দেশেই টমেটো অন্যতম প্রধান সবজি। টমেটো কাঁচা, পাকা এবং রান্না করে খাওয়া হয়। প্রতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ টমেটো সস, কেচাপ, চাটনি, জুস, পেস্ট, পাউডার ইত্যাদি তৈরিতে ব্যহৃত হয়। টমেটোর কদর মূলত ভিটামিন-সি এর জন্য। তবে এর রং, রূপ ও স্বাদও অনেককে আকৃষ্ট করে। সালাদ হিসেবেই অধিকাংশ টমেটো খাওয়া হয়।

টমেটোতে ভিটামিন এ, কে, বি১, বি৩, বি৫, বি৬, বি৭ ও ভিটামিন সিসহ নানা প্রাকৃতিক ভিটামিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া এতে ফোলেট, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্রোমিয়াম, কোলিন, কপার এবং ফসফরাসের মতো খনিজও থাকে। ভিটামিন সি'সমৃদ্ধ টমেটো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্ট্রেস হরমোন কমায়। এ কারণে নিয়মিত টমেটো খেলে শরীরের শক্তি বাড়ে এবং শরীর সুস্থ থাকে। টমেটা খেলে শরীরের রক্তশূন্যতা দূর হয়। নিয়মিত দুয়েকটি করে টমেটো খেলে রক্তের কণিকা বৃদ্ধি পায়, রক্তশূন্যতা রোধ হয়। এ ছাড়া রক্ত পরিষ্কার, হজম ভালো হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। টমেটোতে থাকা লাইকোপিন ত্বকের ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বক পরিষ্কার ও সতেজ রাখে।

রান্না ঘরের অতি পরিচিত একটি সবজি হলো টমেটো। কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ আর পাকলে টুকটুকে লাল এই সবজিটি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। মাছ-মাংস রান্নায়, সালাদ, সস, চাটনি কত কী বানিয়ে খাওয়া যায় এই টমেটো দিয়ে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) বেশ কিছু টমেটোর জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলো মৌসুম ছাড়াও ফলে। এছাড়া কিছু হাইব্রিড জাত আমাদের দেশে আসাতে সারা বছরই এখন টমেটো হচ্ছে। তবে দেশেও বেশ কিছু আধুনিক উচ্চফলনশীল জাতের টমেটো উদ্ভাবন করা হয়েছে, যেগুলো ভালো ফলন দিচ্ছে। সব মিলিয়ে এ দেশে এখন পঞ্চাশটিরও বেশি জাতের টমেটো চাষ হচ্ছে। মৌসুম অনুযায়ী এ দেশে চাষযোগ্য টমেটো জাতসমূহকে মোটামুটিভাবে কয়েকটি ভাগ করা যেতে পারে। যেমন, আগাম জাত। এ জাত শীতকালেই চাষ হয়, তবে আগাম ফলে। আগাম জাতসমূহের বীজবপন করা হয় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে। আগাম জাতসমূহের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো, বারি টমেটো-৪, বারি টমেটো-৫, রোমা ভিএফ, রোমারিও, টিপু সুলতান, গ্রেট পেলে, ডেল্টা এফ-১, উন্নয়ন এফ-১, পুষারুবি, নিউ রূপালি এফ-১ ইত্যাদি। শীতকালে স্বাভাবিক সময়েই এসব জাতের গাছে ফল ধরে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বীজ বুনে অক্টোবর-নভেম্বরে এসব জাতের টমেটোর চারা রোপণ করা হয়। অধিকাংশ জাতই শীতকালে ফলে। এসব জাতের মধ্য থেকে মানিক, রতন, বারি টমেটো-৩, বারি টমেটো-৬, বারি টমেটো-৭, বারি টমেটো-৯, বাহার, মহুয়া ইত্যাদি জাতকে বেছে নেওয়া যেতে পারে।

শীতের টমেটোগুলোর জন্য, মাঝ কার্তিক থেকে মাঘের প্রথম সপ্তাহ (নভেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারি) পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। তবে তাড়াতাড়ি আবাদ করার জন্য রোপণের সময়কে সামনে আনতে হবে। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে প্রাথমিক চাষের জন্য এবং নবী চাষের জন্য ফাল্গুন মাসে এবং গ্রীষ্মে চাষের জন্য চৈত্র-বৈশাখ মাসে চারা রোপণ করতে হবে। নাবি শীত মৌসুমি জাত। এসব জাতের বীজ বুনতে হয় জানুয়ারিতে, ফল পাওয়া যায় মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত। বাহার, রোমা ভিএফ, রাজা, সুরক্ষা ইত্যাদি জাত নাবি চাষের জন্য ভালো। সারা বছর চাষের উপযোগী জাত। বছরের যে কোনো সময় টমেটোর বীজ বুনলে চারা ও সেসব চারা রোপণ করলে গাছ হয়, এমনকি সেসব গাছে ফুলও আসে। কিন্তু সব জাতের গাছে ফল ধরে না। এজন্য সারা বছর চাষের উপযোগী জাত যেমন, বারি টমেটো-৬ চৈতী চাষ করা যায়।

টমেটো চাষ করা হয় চারা তৈরি করে। এজন্য বীজতলায় বীজ বুনে সেখানে চারা তৈরি করে নিতে হয়। টমেটো চাষে সফলতার জন্য কেনা বীজ বা ঘরে রাখা বীজ প্রথমে শোধন করে নিতে হবে। সম্ভব হলে বীজতলায় বোনার আগে অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। একবার ফেলার পর বীজতলায় সেসব বীজ না গজালে বা কম গজালে কিংবা গজানো চারা রোগগ্রস্ত হলে ক্ষতি হবে। বীজের মধ্যে অনেক সময় রোগজীবাণু লুকিয়ে থাকে। যেমন, আগাম ধসা বা আর্লি বস্নাইট রোগ, মোজেইক ভাইরাস, ছত্রাকজনিত ঢলে পড়া ইত্যাদি রোগের জীবাণু বীজে থাকতে পারে। মাটিতে ফেলার পর পানি পেয়ে সেসব রোগজীবাণু সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে চারা মারা যায়। আবার অনেক সময় বীজতলার মাটিতেও কিছু রোগজীবাণু থাকতে পারে। যেমন, চারা ধসা বা ড্যাম্পিং অফ রোগের জীবাণু। এসব রোগজীবাণুও চারাকে আক্রমণ করতে পারে। সেজন্য বীজতলার মাটিও শোধন করে নিলে ভালো হয়। বীজ শোধন করা যেতে পারে কয়েক পদ্ধতিতে। গরম পানিতে ভিজিয়ে বীজ শোধন করা সহজ। ৫০০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার গরম পানিতে ৩০ মিনিট টমেটোর বীজ ভিজিয়ে রাখলে বীজের গায়ে লেগে থাকা বা ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক জীবাণু মরে যায়। এরপর ভিজে যাওয়া বীজ তুলে ছায়ায় শুকিয়ে বপন করতে হবে।

সরাসরি জমিতে বীজ বুনেও টমেটো চাষ করা যায়। তবে দ্রম্নত ভালো ফলন পাওয়ার জন্য আলাদাভাবে চারা তৈরি করে সেই চারা মূল জমিতে লাগাতে হবে। এজন্য রোদযুক্ত উঁচু জায়গায় পরিষ্কার করে ভালোভাবে মাটি চাষ দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হবে। চাষের পর মাটি সমতল করে ১ মিটার চওড়া করে বেড বানাতে হবে। জমি ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হয়। গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষের জন্য ২০-২৫ সেন্টিমিটার উঁচু এবং ২৩০ সেন্টিমিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হয়। সেচ দেওয়ার সুবিধার্থে ২টি বেডের মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হয়। প্রতিটি বেডে ২ সারি করে ৬০-৪০ সেন্টিমিটার দূরত্বে ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে