শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

আব্দুল বাতেন
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ফসলে নতুন নতুন পোকামাকড় ও রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। এ থেকে রেহাই পেতে ফসলে ইচ্ছেমতো রাসায়নিক বালাইনাশকের ব্যবহার করা হচ্ছে ফলে পরিবেশের ভারসম্য নষ্টসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, পাখি, অনুজীব বিলুপ্তি হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন উপকারী পোকামাকড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অপরদিকে জীববৈচিত্র্য নষ্ট এবং ফসলের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। তাই পরিবেশবান্ধব কৌশলে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় পরিবেশবান্ধন কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করছে কৃষকরা। এসব কৌশল ব্যবহার করে কৃষকরা কম খরচে বিষমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশবান্ধন ফসল উৎপাদন করে বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পরিবশেবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় গোদাগাড়ী উপজেলায় মাটিকাটা ইউনিয়নের ৫০০ জন কৃষক এসব ফসল উৎপাদন করছে। ২০টি দলে ২৫ জন করে কৃষক প্রত্যেকে ২০ শতক জমিতে মোট ৩০০ বিঘায় চাষ করছে।

সরজমিনে উপজেলার কাদিপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ৭ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন কৃষক আনারুল ইসলাম ও আমির আলী। টমেটো জমিতে মাচা পদ্ধতি ব্যবহার করে গাছগুলো মাচার উপর হেলে আছে। তাতে লাল-সবুজ উজ্জ্বল রংয়ের টমেটো শোভা পাচ্ছে পুরো ক্ষেতজুড়ে। মাঝে মধ্যে পাখিদেরও সেই টমেটো ঠুকরিয়ে খেতে দেখা যাচ্ছে। টমেটো ক্ষেতের ভেতর কিছুটা দূরত্বে পর পর বসানো আছে হলুদ ফাঁদ ও ফেরোমেন ফাঁদ। ফেরোমেন ফাঁদ দুইটি লাঠি দিয়ে বালতির মতো দেখতে উপরে ঢাকনা লাগানো অবস্থায় বসানো আছে। এর নিচ দিকে ছোট্ট একটি ছিদ্র রাখা হয়েছে। তাতে ফসলের ক্ষতিকর ছোট বড় অনেক পোকা মরে পড়ে আছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এসব ফাঁদের ভেতরে সাবান পানির লিউর দিয়ে স্ত্রী পোকার মতোই গন্ধ থাকে। তাতে ফল ছিদ্রকারী পুরুষ পোকা লিউরের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে সাবান পানিতে পড়ে মারা যায়।

টমেটো চাষি আনারুল ইসলাম জানান, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা অল্প খরচে বেশি ফসল উৎপাদন করতে পাচ্ছি। আগে সাধারণভাবে জমিতে ফসলে বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিলে ঘনঘন বিভিন্ন বালাইনাশক বিষ স্প্রে করতাম ফলে খরচ বেশি হতো। আরেক চাষি আমির আলী জানান, নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে মাঁচায় টমেটো চাষ করে ফসল ভালো ও রংয়ের উজ্জ্বলতা ভালোই থাকছে। এর ফলে রোগবালাই তেমন হচ্ছে না। তবে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হলে জৈব বালাইনাশক (ইকোন্যান্ট, বায়োট্রিন) যেগুলো পরিবেশবান্ধব তা কৃষি অফিসের পরামর্শে ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবে ফসল উৎপাদন করে ফসলের দাম বেশি পাওয়া যাওয়া যাচ্ছে। বাজারে যে টমেটো ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমাদের এই টমেটো গাছ পুষ্ট হওয়ায় জমি থেকেই ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ জানান, পরিবেশবান্ধব কৌশল ফেরোমন ফাঁদ ও হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করে কৃষক যেখানে নরমালি ৭-৮ বার কিটনাশক স্প্রে করত এই ফাঁদ দেওয়ার ফলে কৃষককে এতবার স্প্রে করতে হচ্ছে না। পোকার আক্রমণ বেশি হলে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন জৈব বালাইনাশক যেগুলো পরিবেশবান্ধব সেগুলো কৃষক স্প্রে করছে। তাতে কৃষকের খরচ কম হচ্ছে। মাচা করার ফলে কৃষক মাটিতে যে টমেটো উৎপাদন হয় মাচায় করলে অনেকগুনে ফলন বেড়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তারা নিরাপদ ও বিষমুক্ত কম খরচে অধিক ফলন ও দাম বেশি পাচ্ছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে