শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভেষজ খাদ্যপণ্য পাটশাক ও মেস্তার বাণিজ্যিক বিকাশ

ডক্টর মো. আল-মামুন
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ভেষজ হিসেবে পাটপাতার ব্যবহার প্রাচীন কাল থেকেই। পাটশাক ব্যাপক পুষ্টিগুণ ও বিভিন্ন ঔষধিগুণে গুণান্বিত। শুকনো পাটপাতা গুঁড়ো করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে রোগমুক্তির জন্য এবং কাঁচাপাতা শাক হিসেবে বহুকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়া শুকনো পাটপাতার পানীয় 'চা' হিসেবে ব্যবহারের প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা হয়েছে। পাটপাতার রস রক্ত পিত্তনাশক, বাত নিরোধক, ক্ষুধাবৃদ্ধি কারক, আমাশয়, উদরাময় ও অম্স্ন রোগের মহৌষধ। সবজি মেস্তা উচ্চপুষ্টি ও ঔষধিমানের জন্য বিখ্যাত- যার একগুচ্ছ স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই সবজি মেস্তার বাণিজ্যিক চাষ করা হয়। এর আকর্ষণীয় রং, অনন্য টক স্বাদ এবং বহুমুখী ব্যবহার এটিকে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় করে তুলেছে। সবজি মেস্তা বা রোজেলার নির্যাস উচ্চ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-প্রলিফারেশন, অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক, অ্যান্টি-হাইপার সেনসিটিভ হাইপারসেনসিটিভ, অ্যান্টি-হাইপার লিপিডিমিক, হেপাটো-প্রতিরক্ষামূলক, মূত্রবর্ধক এবং অন্যান্য অনেক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের দেশে রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরের বাজারগুলোতে টকপাতা ও ফল হিসেবে সবজি মেস্তার চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে।

পাটপাতা অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি। পাটপাতায় বহুমাত্রিক ঔষধিগুন থাকার কারণে সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই পাটপাতা সংরক্ষণ ও বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের পথ্য হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। আফ্রিকা, মধ্য-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও পাটপাতা ওষুধ হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত পরিচিত। পাটপাতায় রয়েছে ভিটামিন (এ, সি, বি১, বি২, বি৩ ও ই), খনিজ পদার্থ (আয়রন, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম ও সেলেনিয়াম), ক্যারোটিনয়েড (লাইকোপেন, বেটা-ক্যারোটিন) ও আরো অনেক ফাইটেকেমিক্যালস, যেগুলো এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। পাটপাতা ডায়াবেটিস রোগে বিশেষ উপকারী। পাটপাতা শরীরের প্রদাহ কমিয়ে ওজন কমায়, ক্যানসার, পেটের বিভিন্ন অসুখ, আলসার, ?উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে এটি। জ্বর, ঠান্ডা, ফ্লু নিয়ন্ত্রণ, দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা বৃদ্ধি, দাঁতের সুরক্ষা ও অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ করার মতো অনেক গুণাবলি রয়েছে পাটপাতায়।

চিকিৎসা শাস্ত্র 'চরক সংহিতা' এ পাটের ঔষধিগুণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, পাটশাক রক্তপিত্ত বিনাশকারী, প্রস্রাবের কষ্টজনিত রোগ উপশমকারী এবং বাতের প্রকোপ হ্রাসকারী। কবিরাজি চিকিৎসা শাস্ত্র মতে তিতা পাট অর্থাৎ দেশি পাটপাতার রস আমাশয়, জ্বর ও অম্স্ন বিনাশে অমোঘ ওষুধ। ইহা ক্ষুধা ও হজম বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ট পরিস্কারক হিসেবে খুবই উপযোগী। আবার মিঠা বা তোষা পাটপাতার রস ও হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খেলে জটিল রক্ত আমাশয় নিরাময় হয়। মিঠা পাটপাতা ভিজিয়ে পানি খেলে প্রস্রাব বৃদ্ধি, মূত্রাশয়ের জ্বালাপোড়া দূর হয় এবং শরীরের বল বা শক্তি বৃদ্ধি পায়। ওষুধ হিসেবে দাঁত ও পেটের নানাবিধ সমস্যায়, সবজি হিসেবে পুষ্টিহীনতায় এবং রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে পাটপাতার গুরুত্ব অপরিসীম। পাটশাকের জুস বা সুপ জ্বর, ক্রনিক সিস্ট, ঠান্ডা ও টিউমার ভালো করার চিকিৎসায় ব্যবহার করা সম্ভব।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) ঈধঢ়. ফধিৎভ ৎবফ এবং বিনা পাটশাক-১ এর সংকরায়নের মাধ্যমে অধিক ফলনশীল একটি উন্নত শাকের জাত উদ্ভাবন করেছে এবং জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৪ সালে বিজেআরআই দেশি পাটশাক ১ (বিজেসি-৩৯০) নামে অবমুক্ত করা হয়েছে। এ জাতের গাছ সম্পূর্ণ সবুজ, ঝোপালো ও খর্বাকৃতির, কান্ড হালকা সবুজ ও শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। পাতা ডিম্ব-বর্শা ফলাকৃতির ও গাঢ় সবুজ রংয়ের। এছাড়া বিজেআরআই ২০২০ সালে বিশুদ্ধ সারি নির্বাচনের মাধ্যমে বিজেআরআই দেশি পাটশাক-২ এবং বিজেআরআই দেশি পাটশাক-৩ নামে আরও দুইটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। বিজেআরআই দেশি পাটশাক-২ (ম্যাড়াশাক, লাল) তুলনামূলকভাবে স্বল্পমেয়াদি জাত, গাছের কান্ড, পাতার বৃন্ত ও শিরা গাঢ় লাল, পাতা গাঢ় সবুজ রংয়ের। এছাড়া বিজেআরআই দেশি পাটশাক ৩ (ম্যাড়াশাক, সবুজ) জাতের গাছের কান্ড, পাতার বৃন্ত ও শিরা গাঢ় সবুজ। উভয় জাতের গাছ বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ এর তুলনায় ছোট। পাতা ডিম্ব-বর্শা ফলাকৃতির এবং গাছের বয়স ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে শাক সংগ্রহ করা যায়। জাতসমূহের 'ক্যানোপি' কম হওয়ায় একক জায়গায় অধিকসংখ্যক গাছ থাকতে পারে এবং খর্বাকৃতির হওয়ায় কোনো আঁশ পাওয়া যায় না। দেশি পাটের জাত হওয়া সত্ত্বেও পাতা মিষ্টি স্বাদ যুক্ত ও সুস্বাদু। বপনের সময় ভেদে ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে ফুল আসে এবং ৭৫-৯০ দিনের মধ্যে বীজ পাওয়া যায়। বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ বিজেআরআই দেশি পাটশাক-২ বিজেআরআই দেশি পাটশাক-৩।

বিজেআরআই ২০১৬ সালে পাটপাতা দিয়ে অর্গানিক চা উৎপাদন শুরু করে। পাটপাতার চায়ের অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল গুণাগুণ রয়েছে- যা টাইফয়েড রোগের জীবণু প্রতিরোধে ও আমাশয় দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এ চা বা পানীয় ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে এবং লিপিড প্রোফাইল ঠিক রাখতে সাহায্য করে। বর্তমানে আমাদের দেশে এই চায়ের ভোক্তা পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সি মানুষই বেশি। তবে আমেরিকা, ডেনমার্ক, ইউরোপ ও জার্মানিতে এর চাহিদা অনেক। বর্তমানে বহু উদ্যোক্তা পাটপাতার চা দেশে-বিদেশে বাজারজাত করছে ভেষজ পণ্য হিসেবে। টাঙ্গাইলের মহিমা প্রোডাক্টের ব্যানারে প্রতি মাসে ১৫ লাখ টাকার পাটপাতার চা বিক্রি করছে স্থানীয় একজন উদ্যোক্তা। ঢাকার উত্তরায় গুয়ার্ছি অ্যাকুয়া অ্যাগ্রো টেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান পাটপাতা দিয়ে তৈরি অর্গানিক চা জার্মানিতে রপ্তানি করছে।

পাটজাতীয় মেস্তা ফসল সাধারণত দুই ধরনের হয়। আঁশের জন্য ঐরনরংপঁং ংধনফধৎরভভধ াধৎ. ধষঃরংরসধ এবং সবজি মেস্তার জন্য ঐরনরংপঁং ংধনফধৎরভভধ াধৎ. ংধনফধৎরভভধ. বাংলাদেশ এবং ভারতীয় উপমহাদেশে সবজি মেস্তা বা রোজেলা সাধারণত মেস্তা বা চুকুর নামে পরিচিত। এটি পশ্চিম আফ্রিকা থেকে উদ্ভূত এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। এটি একটি বার্ষিক উদ্ভিদ- যা গধষাধপবধব পরিবারের অন্তর্গত এবং এর উৎপাদন চক্র সম্পূর্ণ করতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগে। ৩০০টিরও বেশি রোজেলা প্রজাতি রয়েছে- যা সারা বিশ্বে পাওয়া যায়। গ্রীষ্মমন্ডলে তিনটি পৃথক রংয়ের রোজেলা পাওয়া যায়, যথা- সবুজ, লাল এবং গাঢ় লাল। সবুজ আকারের পাতাগুলো সবজি হিসেবে খাওয়া হয়; যখন লাল এবং গাঢ় লাল জাতের ক্যালিক্স একটি তাজা পানীয়ের জন্য রস আহরণের জন্য ব্যবহার করা হয়। রোজেলা একটি আদর্শ খাদ্য সংযোজনকারী। বীজ, পাতা, ফল এবং শিকড়সহ রোজেলা অনেক অংশ বিভিন্ন খাবারে ব্যবহৃত হয়। এর পাতা ও বৃতি (শাঁস) টক এবং সুস্বাদু।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় উপগুল্মজাতীয় উদ্ভিদের এ ফলটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। রাজশাহীতে চুকাই, খুলনায় ও সাতক্ষীরায় অম্স্নমধু, ধামরাই এবং মানিকগঞ্জে চুকুল, সিলেটে হইলফা, কুমিলস্নায় মেডশ, চাকমারা বলেন আমিলা, মগরা চেনেন পুং ও ত্রিপুরারা উতমুখরই নামে। আবার কেউ কেউ বলেন হুগ্নিমুখুই। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় একে বলা হয় খড়গুলা। সবশব্দের সরল বাংলা অর্থ টক। ফলটির স্বাদ তার এই নামের মধ্যেই প্রকাশিত। যে সব উঁচু বা মধ্যম উঁচু জমিতে বর্ষার পানি দাঁড়ায় না, সেখানে খুব সহজে ও অনায়াসে সবজি মেস্তার আবাদ করা যায়। দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটি সবজি মেস্তা চাষের উপযোগী। তাছাড়া পাহাড়ি এলাকায়, বাড়ির আঙিনা ও আশপাশের জমি, অনুর্বর আবাদযোগ্য প্রান্তিক জমিতে সবজি মেস্তা চাষ করা যায়। ঢাকা, টাংগাইল, ময়মনসিংহ, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, যশোর, কুমিলস্না, সিলেট ও অন্যান্য জেলার উষর জমিতে সবজি মেস্তার ফলন অধিক হয়। তবে সবজি মেস্তা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। খরা সহনশীল ও নেমাটোড প্রতিরোধী সবজি মেস্তার চাষে কিছুটা সুবিধা হলো ইহা শুষ্ক অঞ্চলের প্রান্তিক জমিতে আবাদ করা যায় এবং স্পাইরাল বোরার ও শিকড়ে গিট রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয় না। সবজি মেস্তা বেশ খরা সহিষ্ণু এবং পাটের তুলনায় কম উবর্র জমিতে স্বল্প খরচে এর চাষ করা যায়।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট বন্য প্রজাতির মেস্তা (এম-৭১৫) থেকে বিশুদ্ধ সারি নির্বাচন ও গবেষণার মাধ্যমে অধিক ফলনশীল সবজি হিসেবে খাবার উপযোগী একটি উন্নত মেস্তার জাত উদ্ভাবন এবং জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১০ সালে বিজেআরআই মেস্তা-২ (সবজি মেস্তা-১) নামে অবমুক্ত করে। এ জাতের চলতি নাম চুকুর হিসেবে সারাদেশে পরিচিত। চুকুরের কান্ড তামাটে রংয়ের এবং শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। কান্ড ও পাতায় কোনো কাঁটা থাকে না। পাতা আঙুল আকৃতির (খন্ডিত), পাতার কিনারা ঢেউ খেলানো, গাঢ় সবুজ এবং পরিণত অবস্থায় তামাটে লাল রং ধারণ করে। পাতার বৃন্ত ১০-১১ সেমি। ফল গাঢ় লাল। জাতীয় বীজ বোর্ড ২০২২ সালে সবজি মেস্তার অন্য একটি জনপ্রিয় জাত বিজেআরআই মেস্তা-৪ (সবজি মেস্তা-২) নামে অবমুক্ত করে। এ জাতের গাছ খাটো, শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট ও ঝোপালো। গাছের কান্ড সবুজ তবে পর্ব বেগুনি, পাতা সবুজ, কম খন্ডিত এবং কিনারা ঢেউ খেলানো। বোটার দুই প্রান্ত গাঢ় লাল, ফুল ক্রিম রং, ভেতরের মাঝখানে গাঢ় খয়েরি রংয়ের। ফল লালচে সবুজ ও লম্বাটে, বীজ কিডনি আকারের ও ধূসর রংয়ের। ঘন করে বপন করলে শাখা-প্রশাখা কম হয়। কান্ড ও পাতায় কোনো কাঁটা থাকে না।

সবজি মেস্তার পাতা রান্না করে তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। এর মাংসল বৃতি (শাঁস) কনফেকশনারি খাদ্যসামগ্রী যেমন- জুস, জ্যাম, জেলি, সিরাপ, জেলটিন, পুডিং, কেক, আইসক্রিম তৈরির জন্য সতেজ ব্যবহার করা হয় এবং চা, মশলাতে শুকানো ব্যবহৃত হয়। সবজি মেস্তার ফলে পেকটিন থাকায় শুধু চিনি ও চুকাই দিয়ে সহজেই জ্যাম তৈরি করা যায়, আলাদাভাবে পেকটিন মেশাতে হয় না।

অস্ট্রেলিয়া, বার্মা এবং ত্রিনিদাদে এই ফলটি জ্যাম তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। মিয়ানমারের জনপ্রিয় সবজি হিসেবে চুকুর পরিচিত। ইতালি, আফ্রিকা ও থাইল্যান্ডে সবজি মেস্তার পাতা ভেষজ চা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। রক্তচাপ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধ করে রোজেলা চা হিসেবে সবজি মেস্তার বৃতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার। রোজেলা চা ডায়াবেটিসবিরোধী, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এজেন্ট, হজমে সহায়তা করে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। মেস্তার তৈল পৃথিবীর অনেক দেশে সাবান তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এবং খাবার তেলে মেশানো হয়।

লেখক: ডক্টর মো. আল-মামুন: প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,

প্রজনন বিভাগ, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে