বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে

অল্প পুঁজিতে গরু মোটাতাজা করা লাভজনক উদ্যোগ

গরুকে স্বাস্থ্যসম্মত সঠিক খাদ্য দিয়ে মোটাতাজা করলে তার মাংস ক্ষতির কারণ হয় না। অল্প সময়ে ষাঁড় বাছুরকে সুষম খাদ্য খাইয়ে দৈহিক ওজন বৃদ্ধি করে গরু মোটাতাজা করা হয়। গরু বাছাই করার ক্ষেত্রে গরুর বয়স ২ থেকে ৩ বছর হলে ভালো হয়। শংকর, ফিজিয়ান, সিন্ধি জাত হলে আরও ভালো। এগুলোর চামড়া ঢিলেঢালা, হাড়ের জোড়া মোটা, ঠান্ডা প্রকৃতির, রোগমুক্ত। গরু কেনার পর প্রথম কাজ হচ্ছে গরুকে কৃমিমুক্ত করা। মুখের রুচি বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তারপরই সুষম খাবার পরিমাণমতো দিতে হবে।
ইমরান সিদ্দিকী
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

সহজেই গরু মোটাতাজা করা যায়। এর জন্য স্থানীয় হাট থেকে গরু কিনেই শুরু করা যায়। এতে অল্প বিনিয়োগে কম সময়ে লাভসহ মূলধন ফেরত পাওয়া যায়। গরু মোটাতাজা করার জন্য ১৫০ থেকে ২শ' কেজি ওজনের একটি গরুকে প্রতিদিন ইউরিয়া মোলাসেস বস্নক ৩শ' গ্রাম, খড় ৪ কেজি, সবুজ কাঁচাঘাস ১২ কেজি আর দানাদার খাদ্য ৩ কেজি, চালের কুঁড়া ১ কেজি, গমের ভুসি ১.২৫ কেজি, তিলের খৈল ৪শ' গ্রাম, হাড়ের গুঁড়া ৫০ গ্রাম, লবণ ৫০ গ্রাম, ঝোলাগুড় ২৫০ গ্রাম এবং পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ দিতে হবে। এতে গরু দ্রম্নত মোটা হবে। ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা হতে পারে লাভজনক।

অল্প পুঁজিতে গরু মোটাতাজা করে বেকারত্ব ও দরিদ্রতা দূর করছে অনেকে। গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করা খুব লাভজনক। অল্প সময়ে ষাঁড় বাছুরকে সুষম খাদ্য খাওয়ায়ে দৈহিক বৃদ্ধি করে গরু মোটাতাজা করা হয়। গবাদিপশু মোটাতাজা করতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগে। গরু মোটাতাজাকরণ একটি নিয়মিত ও প্রচলিত পদ্ধতি। এটি একটি স্বল্পমেয়াদি লাভজনক পদ্ধতি। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করা যায়। এ পদ্ধতিটি যুগ যুগ ধরে প্রচলিত। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রাকৃতিক নিয়মে গরু মোটাতাজা করে হাজার হাজার বেকার যুবক স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এখন উচ্চ শিক্ষিত তরুণরা পেশা হিসেবে গরু পালনকে বেছে নিচ্ছেন।

গরুকে স্বাস্থ্যসম্মত সঠিক খাদ্য দিয়ে মোটাতাজা করলে তার মাংস ক্ষতির কারণ হয় না। অল্প সময়ে ষাঁড় বাছুরকে সুষম খাদ্য খাইয়ে দৈহিক ওজন বৃদ্ধি করে গরু মোটাতাজা করা হয়। গরু বাছাই করার ক্ষেত্রে গরুর বয়স ২ থেকে ৩ বছর হলে ভালো হয়। শংকর, ফিজিয়ান, সিন্ধি জাত হলে আরও ভালো। এগুলোর চামড়া ঢিলেঢালা, হাড়ের জোড়া মোটা, ঠান্ডা প্রকৃতির, রোগমুক্ত। গরু কেনার পর প্রথম কাজ হচ্ছে গরুকে কৃমিমুক্ত করা। মুখের রুচি বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তারপরই সুষম খাবার পরিমাণমতো দিতে হবে।

দেশে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ আমাদের মাংসের চাহিদা প্রচুর, উৎপাদন কম। এছাড়া গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের সঙ্গে কর্মসংস্থান, গোবর উৎপাদন, চামড়া উৎপাদন, পরিবেশ উন্নয়ন এসব নানা কিছু জড়িত। একটি কথা তো সর্বজন স্বীকৃত যে, প্রতি বছর কোরবানি ঈদের সময় দেশে লাখ লাখ গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া কোরবানি করতে হয়। এ সংখ্যার ৭০ শতাংশ গরু। সুতরাং কোরবানি উপলক্ষে অধিকসংখ্যক গবাদিপশু মোটাতাজা করা হয়।

সবাইকে মনে রাখতে হবে, গবাদিপশু মোটাতাজা করতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগে। হঠাৎ করে স্টেরয়েড খাইয়ে গরু মোটাতাজা করা যায়। তবে কাজটি অনৈতিক, নিষিদ্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ। স্টেরয়েডের ব্যবহারের কারণে খামারেই গরু অনেক সময় মারা যায়। কারণ স্টেরয়েড প্রাণীর স্বাভাবিক মেটাবলিজমকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন লিভার, লাং, হৃৎপিন্ড এসব স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় স্টেরয়েড খাওয়ানো গরু হাইপারটেনশনে বেশি মারা যায়। এ ছাড়া স্টেরয়েড মানব দেহের জন্যও যথেষ্ট ক্ষতিকর। সুতরাং মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ার কোথাও স্টেরয়েডের প্রয়োজন হয় না। যদি তা স্বাভাবিক সময় এবং নিয়ম জেনে করা হয়। তবে মোটাতাজাকরণের সময় চিকিৎসকরা সহনীয় মাত্রায় ভিটামিন, মিনারেল ব্যবহার করেন। যা প্রাণীর জন্যও ক্ষতিকর নয়, মানুষের জন্যও ক্ষতিকর নয়। এ হচ্ছে সাধারণ রোগব্যাধির প্রতিকার।

গরু রোগাক্রান্ত কিনা ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। গরুর রক্ত, মল, জিহবা, পায়ের ক্ষুর, নাড়ির স্পন্দন ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে হবে। বিভিন্ন রোগের টিকা দিতে হবে। গরু মোটাতাজা করার উপযুক্ত সময় ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি অথবা জুন থেকে জুলাই। এ সময় আবহাওয়া একটু ঠান্ডা থাকে বলে রোগব্যধি কম হয়। তবে বর্ষাকাল ছাড়া যে কোনো সময়ই করা যায়। ঈদুল আজহার ৩ থেকে ৪ মাস আগে গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করলে লাভবান হওয়া যায়।

যদি গরুর সংখ্যা ১০ থেকে ১৫টির মধ্যে থাকে, তবে শেড বানানোর দরকার নেই। সাধারণত আমরা গোয়ালঘরে যেভাবে গরু পালন করি সেই রকম একটা গোয়ালঘরের মতো ঘর বানাতে পারলেই মোটাতাজাকরণ শুরু করা যায়। একটি গরুর জন্য ৩ ফিট প্রস্থ এবং ৭ ফিট দৈর্ঘ্যের জায়গা দরকার হয়। এর সঙ্গে যা দরকার হয় তা হচ্ছে খাবারের চারি। প্রতিটি গরুর জন্য একটি চারি গোয়ালঘরে রাখতে হবে। খর, টিন, ছন অথবা হোগলাপাতা দিয়ে তৈরি করা যায়। যেখানে যা সহজলভ্য এবং যা সাধ্যের মধ্যে কুলায় এমন উপকরণ দিয়ে মোটাতাজাকরণ শুরু করতে হবে। কারণ গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ একটি লাভজনক ব্যবসা। বাসস্থানের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখা দরকার। গোয়ালঘর খোলামেলা হওয়া ভালো। এতে গবাদিপশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। গোয়ালঘরের কাছে একটি স্যালো টিউবওয়েল অথবা ডিপটিউবওয়েল স্থাপন করা দরকার। কারণ মোটাতাজাকরণে গবাদিপশুকে পরিমাণ মতো পানি, দানাদার খাবার মিশ্রণ, ইউরিয়া মিশ্রিত স্ট্র এসব প্রস্তুত করতে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন হয়। তাছাড়া মোটাতাজাকরণের পশুকে দু-তিন দিন পরপর পানির স্প্রে করে শরীর ধুইয়ে দিলে ত্বক মসৃণ হয়। বাসস্থানে গোবর এবং মূত্র নিষ্কাশিত হওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

আজকাল জমিতে অর্গানিক সার ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য গোবর থেকে কম্পোজস্ট সার, গোবরে কেঁচো চাষ করে সেখান থেকে জৈবসার প্রস্তুত এসব নয়া কৃষিতে ভীষণভাবে মূল্যবান। সুতরাং গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের সঙ্গে মাটির উর্বরতা এবং সবুজ বিপস্নবের একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি সবুজ বিপস্নবকে নিবিড়ভাবে সহায়তা করে। গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ এবং উৎপাদন দুই ক্ষেত্রেই কাঁচা ঘাসের সংকট আছে। এ সংকট মোকাবিলায় ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র'কে ঘাসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে এর পরিমাণ দিনে ৩-৪ কেজির ঊর্ধ্বে হওয়া যাবে না। ৩-৪ কেজির বেশি ইউরিয়া মিশ্রিত খর খাওয়ালে গরুতে ইউরিয়া বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে। মোটামুটি এসব নিয়মকানুন মেনে চললে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে ভালো আয় করা যায় এবং দেশে মাংস, গোবর এবং চামড়ার সরবরাহের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে