রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরিষার তেল

শায়লা ইয়াসমিন
  ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

সরিষা বীজ থেকে তৈরি হয় সরিষার তেল। এটি গাঢ় হলুদ বর্ণের এবং বাদামের মতো সামান্য কটু স্বাদ ও শক্তিশালী সুবাস যুক্ত তেল। ঐতিহ্যগতভাবে এই তেল আমাদের পূর্বপুরুষরা ব্যবহার করে আসছেন। ওমেগা আলফা ৩ ও ওমেগা আলফা ৬ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় সরিষার তেলকে স্বাস্থ্যকর তেল বলা হয়। এর ঔষধি গুণাগুণের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে এই তেল। সরিষার তেল আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গেই যেন মিশে আছে। একসময় গ্রামবাংলার একমাত্র ভোজ্যতেল ছিল সরিষার তেল। সরিষার তেল যেমন প্রয়োজনীয় তেমন উপকারীও।

দেশে প্রতি বছর প্রায় ২৪ লাখ টন ভোজ্যতেল প্রয়োজন হয়। যার বেশিরভাগই সয়াবিন ও পামওয়েল। ভোজ্যতেলের বিপুল চাহিদার বিপরীতে অভ্যন্তরীণভাবে মেটানো হয় ১০ শতাংশের মতো। যার ৯৮ ভাগই সরিষার তেল। পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখাসহ আমদানি নির্ভরতা কমাতে চাহিদার ৪০ শতাংশ ভোজ্যতেল স্থানীয়ভাবেই উৎপাদনের লক্ষ্যে সরিষা আবাদ বাড়ানোর কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

ভারতীয় উপমহাদেশে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ থেকে সরিষার ব্যবহার হয়ে আসছে। সরিষার তেল উদ্দীপক হিসেবে পরিচিত। অন্ত্রে পাচকরস উৎপাদনে সাহায্য করায় হজমপ্রক্রিয়া দ্রম্নত হয়। এ ছাড়া একই প্রক্রিয়ায় ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সর্বজনীনভাবে সরিষার তেলের ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে এই তেলের গুণাগুণ সম্পর্কে যারা অবগত আছেন, তারা নিয়মিতই ব্যবহার করে চলেছেন সরিষার তেল। সরিষার তেল ৭০ শতাংশ হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমায়। সরিষার তেল ব্যবহারে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়, যা হৃদরোগের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া সরিষা তেল ঠান্ডা ও কাশি উপশমে সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে। যখন বুকে প্রয়োগ বা তার দৃঢ় সুবাস নিশ্বাসের মাধ্যমে নেওয়া হয়, এটা শ্বাসযন্ত্রের নালির থেকে কফ অপসারণেও সাহায্য করে। শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, সরিষার তেল চুল ও ত্বকের যত্নেও কাজে লাগে। সরিষার তেলে গস্নুকাসিনোলেট নামক উপাদান থাকে, যা অ্যান্টিকারসিনোজেনিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। তাই এটি ক্যানসারজনিত টিউমারের গঠন প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কোলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ক্যানসার থেকে সুরক্ষাও প্রদান করে। সরিষার তেল মনোস্যাচুরেটেড ও পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাটে সমৃদ্ধ বলে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। এর ফলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমে।

সরিষার তেল ত্বকের তামাটে ভাব ও দাগ দূর করে এবং ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে পারে। এ জন্য বেসন, দই, সরিষার তেল ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি আপনার ত্বকে লাগান। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন। সরিষার তেল খুব ঘন হয় এবং এতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন ই থাকে। এই তেল ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ থেকে ত্বককে সুরক্ষা করে। তাই এটি ত্বকের ক্যানসারও প্রতিরোধ করতে পারে। ভিটামিন ই বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করতেও সাহায্য করে। তাই সানস্ক্রিন লোশনের মতোই ব্যবহার করতে পারেন এই সরিষার তেল। তবে এটা যেহেতু ঘন, তাই ত্বকে লাগানোর পর ভালোভাবে ঘঁষে নিতে হবে, যেন অতিরিক্ত তেল লেগে না থাকে। অন্যথায় অতিরিক্ত ধুলাবালু জমা হয়ে ত্বকের ভালোর চেয়ে খারাপই হতে পারে বেশি। সরিষার তেল চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অকালে চুল সাদা হওয়া রোধ করে ও চুল পড়া কমায়। সরিষার তেলে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ থাকে। বিশেষ করে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকে এতে। বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন-এ'তে রূপান্তরিত হয়ে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফ্যাটি অ্যাসিড ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা চুলের বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করে। এ ছাড়া প্রতি রাতে চুলে সরিষার তেল মালিশ করে লাগালে চুল কালো হয়। শুষ্ক ঠোঁটের যত্নে সরিষার তেল চমৎকার প্রতিকার হিসেবে কাজ করে যেখানে লিপ বাম বা চ্যাপ স্টিক অকার্যকর। ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার নাভির মধ্যে এক বা দুই ফোঁটা সরিষার তেল দিন। তাহলে আর কখনোই আপনার ঠোঁট শুকাবে না বা ফাটবে না। সরিষার তেল চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, অকালে চুল সাদা হওয়া রোধ করে ও চুল পড়া কমায়। সরিষার তেল ভিটামিন ও খনিজে পরিপূর্ণ থাকে। বিশেষ করে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকে এতে। বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন-এ রূপান্তরিত হয়ে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফ্যাটি এসিড ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রতি রাতে চুলে সরিষার তেল মালিশ করে লাগালে চুল কালো হয়।

সরিষার তেলের অ্যান্টি ব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি ক্ষতিকারক সংক্রমণ থেকে হজমশক্তিকে রক্ষা করে। সরিষার তেলে থাকা ওমেগা ৩, ওমেগা ৫ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর মান সরবরাহ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সরিষার তেলের ঝাঁঝালো উপাদান সাইনাস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। রসুন ও লবঙ্গ দিয়ে সরিষার তেল গরম করে পা এবং বুকে মালিশ করলে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পস্ন্যাজমা, কোষের লিপিডস এবং কোষের ঝিলিস্নর উপাদান হিসেবে বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনের জন্য আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় চর্বিগুলোর একটি প্রধান উৎস সরিষার তেল। এই তেল কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে এবং লোহিত রক্তকণিকার ঝিলিস্ন গঠনের উন্নতি করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, সরিষার তেল খেলে অ্যারিথমিয়াস, হার্ট ফেইলিও এবং এনজাইনা হ্রাস পেয়েছে। কার্ডিওভাসকুলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্তদের জন্য সরিষার তেল স্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি ট্রাইগিস্নসারাইড, রক্তচাপ এবং প্রদাহ কমাতেও সহায়তা করে। প্রচীনকাল থেকেই সরিষার তেল কাশি, সর্দি এবং অন্যান্য শ্বাস প্রশ্বাসের অ্যালার্জি প্রশমিত করতে ব্যবহৃত হয়। সরিষার তেল দিয়ে স্টিম নিলে তা শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। সরিষার তেল সাইনোসাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সরিষার তেল নিয়মিত মালিশ করলে তা পেশি এবং জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। সরিষার তেলে থাকা ওমেগা ৩ আর্থ্রাইটিসের কারণে সৃষ্ট কঠোরতা এবং ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে