শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সফেদার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

প্রফেসর আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ
  ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

আমাদের পরিচিত ও দেশি ফল সফেদা। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ অনেক উপকারী এই ফলটি হরহামেশাই হাতের নাগালে পাওয়া যায়। সফেদা একটি পুষ্টিমানসমৃদ্ধ অত্যন্ত মিষ্টি, সুস্বাদু ও সুন্দর ফল। এছাড়াও এতে রয়েছে, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমূহের ভিটামিন এ, সি এবং ই, তামা, লোহা ইত্যাদি। সফেদায় আছে ফাইবার, পলিফেনলিক যৌগ ও ভিটামিন সি- যা আমদের দেহকে নীরোগ রাখতে সহায়তা করে। সফেদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস- যা হাড়ের গঠন মজবুত করে। সফেদা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমৃদ্ধ। এটি গ্যাস্ট্রাইটিস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এতে বিদ্যমান ভিটামিন এ চোখের সুরক্ষায় কাজ করে। রাতকানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

সবেদা বা সফেদার আদি নিবাস উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চল। বিদেশি ফল হলেও উষ্ণমন্ডলীয় দেশে জন্মায় বলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সফেদা স্থানীয় ফলগুলোর মতোই সহজলভ্য। অত্যন্ত মিষ্টি, মাংসল ও নরম ফলটি এ দেশে বেশ জনপ্রিয়। সুমিষ্ট সফেদা দেখতে অনেকটা আলুর মতো বলেই হয়তো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এর নাম আলিবুট। যারা মিষ্টি ফল পছন্দ করেন চর্বিমুক্ত সফেদা খেতে পারেন তারা। সফেদা পুষ্টিমানসমৃদ্ধ মিষ্টি, সুস্বাদু ও সুন্দর গন্ধযুক্ত একটি ফল। এটিকে প্রাকৃতিক পুষ্টির আধার বলা হয়। সফেদা ট্যানিনের পরিমাণ আঙুর বা ডালিমের মতোই। এই ফল নানবিদ খাদ্যশক্তি যেমন শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, ফলেট, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়া, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ও জিংকের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এছাড়াও এতে রয়েছে, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, সি এবং ই, তামা, লোহা, ইত্যাদি। অত্যন্ত মিষ্টি, মাংসল ও নরম ফলটি অনেক দেশে বেশ জনপ্রিয়। যারা মিষ্টি ফল পছন্দ করেন তারা সফেদা খেতে পারেন। দ্রম্নত শক্তি জোগানোর পাশাপাশি এই ফল স্নায়ু শান্ত করে এবং মানসিক চাপ উপশম করে। যারা অনিদ্রা, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা রোগে ভুগছেন- এমন রোগীকে চিকিৎসকরা সফেদা ফল খেতে বলেন।

বাজারে প্রতি কেজি সফেদা ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। তুলনামূলকভাবে সস্তা এই ফল অনেকে পছন্দ করে খেলেও এখনো এই ফল আঙুর, আপেল বা কমলার মতো কদর পায়নি। এর কারণও স্পষ্ট। সফেদার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। অথচ অন্য ফলগুলোর তুলনায় এর পুষ্টিগুণ কম নয়। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ট্যানিনের মতো উপকারী উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম সফেদায় আছে ৮৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, পাঁচ দশমিক ছয় গ্রাম আঁশ, ১৯৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৯ দশমিক ৯ গ্রাম চিনি, ২১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম, শূন্য দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম লোহা, ১২ মিলিগ্রাম ফসফরাস ও শূন্য দশমিক ১০ মিলিগ্রাম জিংক। এ ছাড়া এতে ফোলেট, পাইরিডক্সিন, থায়ামিন, রিবোফ্লোবিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি রয়েছে।

সফেদা ফলের নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানা যায়। চলুন জেনে নেই সফেদার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাসমূহ। সফেদা একটি ফাইবারসমৃদ্ধ ফল। এতে পর্যাপ্ত খাদ্য আঁশ রয়েছে- যা খাবার হজমে সহায়তা করে। এছাড়াও বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। আধাপাকা সফেদা পানিতে ফুটিয়ে কষ বের করে খেলে ডায়রিয়া ভালো হয়। এতে প্রদাহ বিরোধী উপাদান রয়েছে- যা গ্যাস্ট্রিক, আন্ত্রিক প্রদাহ, পেট জ্বলা পোড়া, প্রভৃতি রোগের সমাধান করে। সফেদায় প্রচুর পরিমাণ পলিফেনলস যৌগ ট্যানিন থাকার কারণে শরীরে প্রদাহ প্রতিরোধ করে এবং জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। সফেদা খেলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দূর হয়। এছাড়াও সফেদায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি রয়েছে। নিয়মিত সফেদা খেলে মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় ও দাঁত ভালো থাকে। এ ফল শরীরের কোষের ক্ষতিসাধন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত সফেদা খেলে ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার সমস্যা কমে যায়। শ্বাসকষ্ট দূর করতে সাহায্য করে এবং ফুসফুস ভালো রাখে। ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করতে সফেদা সহায়দা করে। এই ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ আছে। যা চোখ, ত্বক ও হাড়ের জন্য খুব উপকারী। শরীরের ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত সফেদা খেতে পারেন। সফেদায় চর্বি থাকে না। তাই বেশি খেলেও শরীরে মেদ বাড়ার আশঙ্কা থাকে না। এছাড়াও সফেদা নিয়মিত খেলে স্থূলতাজনিত সমস্যার সমাধান হয়। সফেদার পুষ্টি মায়ের জন্য অনেক উপকারী। এটি গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরা দূর করতে সাহায্য করে।

সফেদায় থাকা ডায়াটরি ফাইবার, পলিফেনলিক যৌগ ও ভিটামিন আমাদের শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত সফেদা খেলে শারীরবৃত্তীয় কাজের গতি ত্বরান্বিত হয়। এ ফলে থাকা ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস হাড়ের গঠনকেও মজবুত করে। হঠাৎ করে সর্দি, কাশি হলে প্রতিশেধক হিসেবে সফেদা খেতে পারেন। সফেদা কফ বসে যাওয়া এবং কাশি থেকে উপশম করতে সাহায্য করে। সফেদায় আছে প্রচুর পরিমাণ গস্নুকোজ। যা শরীরে শক্তি যোগায়, কাজের গতি আনে। সফেদা ফলের মানুষের স্নায়ু শান্ত করার অসাধারণ এক ক্ষমতা আছে। এছাড়াও এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। সফেদা একদিকে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে কোষের ক্ষয় পূরণ করে, অন্যদিকে নতুন কোষ তৈরিতে অংশ নেয়। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তেও বাধা দেয়। সফেদা বীজের চূর্ণ খেলে তা কিডনির জন্য উপকারী হয়। সফেদা একটি পুষ্টিমানসমৃদ্ধ ফল। এ ফল চাষে তেমন কোনো যত্ন-আত্তির প্রয়োজন হয় না। বসতবাড়িতে দু'-একটি সফেদা গাছ লাগিয়ে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়।

লেখক: অধ্যাপক, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে