রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

শখের শীতকালীন রঙিন ফুল, রপ্তানিতে হাতছানি

শীতে রোদেলা জায়গায় গাছ লাগান। গাছে পানি দেওয়ার সময় শুধু গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে ঝাঁজরি দিয়ে গাছের ওপর থেকে বৃষ্টির মতো গাছ-পাতা ভিজিয়ে নিয়মিত হালকা পানি দিন। এতে গাছ বেশি সতেজ হবে। গাছের চেহারা দুর্বল দেখা গেলে পরপর তিন-চার দিন এক ঝাঁজরি পানির মধ্যে দুই চা চামচ ইউরিয়া সার গুলে ওপরের নিয়মে সেচ দিন। সরিষার খইল কয়েকদিন একটি পাত্রে ভিজিয়ে রেখে তা গুলে ১৫ দিন পরপর গাছের গোড়ার চারদিকে দিন। অন্তত কুঁড়ি না আসা পর্যন্ত দিন। ফুল ফোটা শুরু হলে তখন থেকে ফুল ও পাতা ভিজিয়ে পানি না দেওয়া ভালো। গাঁদা ফুলের আকার বড় করতে চাইলে প্রথম কুঁড়িগুলো নখ দিয়ে খুঁটে ভেঙে দিন। স্বাভাবিক সময়ের আগে গাছে কুঁড়ি এলে তা ভেঙে দিন। গাছের গোড়া ভেজা থাকলে পানি দেবেন না। প্রতি ১০-১৫ দিন পরপর গাছের গোড়ার মাটি হালকা নিড়িয়ে দিন। ফুল শুকাতে শুরু করলে দ্রম্নত তা গাছ থেকে কেটে ফেলুন। প্যানজি গাছের বয়স হলে ফুল ছোট হয়ে আসবে।
ইমরান ছিদ্দিকি
  ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

শীতের দিনগুলোতে ফুল ফোটে বেশি। রূপ-বৈচিত্র্যে আর অন্য কোনো মৌসুমেই ফুল এতটা মুগ্ধ করতে পারে না। শীতকালীন রঙিন ফুলের সাজে নিজের বাগান মাতিয়ে তুলতে চাইলে শুরুটা করুন এখন। অক্টোবরের শেষে রোপণ করেত হবে পছন্দের ফুলের গাছ। তবেই শীতকালে গিয়ে তারা সেজে উঠবে ফুলে। বড় বড় গাঁদা, ছোট ছোট চায়না গাঁদা, দেশি গাঁদা, রক্ত গাঁদা, হলুদে লাল মিশানো জাম্বো গাঁদা, লম্বা গাছে দেশের জাত রাজ গাঁদা ইত্যাদি নানা জাতের গাঁদা ফুলের চারা এখন পাওয়া যাচ্ছে আশপাশের প্রায় সব নার্সারিতেই।

ফুল ভালোবাসে না হয়তো এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর শীত আসে যেন ফুলের ভেলায় চড়ে। নানারকম বাহারি ফুলে ছেয়ে যায় প্রকৃতি। খুব সহজেই বাসার আশপাশে, ফ্ল্যাটের বারান্দায় বা ছাদে অল্প স্থানে চাষ করা যায় শীতকালীন ফুলের। শীতের ফুলের মধ্যে গাদা, ডালিয়া ও চন্দ্রমলিস্নকা অন্যতম। এছাড়া কসমস, পপি, গাজানিয়া, স্যালভিয়া, ডায়ান্থাস, ক্যালেন্ডুলা, পিটুনিয়া, ডেইজি, ভারবেনা, হেলিক্রিসাম, অ্যান্টিরিনাম, ন্যাস্টারশিয়াম, লুপিন, কারনেশন, প্যানজি, অ্যাস্টার ইত্যাদি ফুল ফোটে।

নভেম্বর মাস শীতকালীন ফুলগাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। দেশের বিভিন্ন নার্সারিতে এখন নানারকমের শীতকালীন ফুলের চারা পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোর আবার অনেক জাত আছে। বাসায় টবে লাগালে মাসখানেক পর থেকেই ফুল ফুটতে শুরু করে এবং জাত ভেদে মার্চ পর্যন্ত ফুল দেয়। যেমন চন্দ্রমলিস্নকা ফুল অনেক দিন টবে থাকে। এছাড়া লতানো ফুল হলেও শীতে টবে লাগানো যায়। চারা লাগিয়ে টবের ভেতর কাঠি পুঁতে তারের রিং দিয়ে ছোট্ট মাচার মতো করে দিলেও দেখতে বেশ লাগে। ঢাকায় আগারগাঁওয়ে রোকেয়া সরণিতে অনেক নার্সারি রয়েছে। এখানে শীতের মৌসুমি ফুলের পর্যাপ্ত চারা পাওয়া যায়। এখানে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারও পাওয়া যায়। এছাড়াও রাজধানীর বনানী, শেখেরটেক রিং রোড, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে শীতকালীন ফুলের চারা পাওয়া যায়।

শীতের ফুল লাগানোর জন্য ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি মাপের টব যথেষ্ট। ছোট আকৃতির গাছ যেমন ডায়ান্থাস, গাঁদা, পিটুনিয়া, গাজানিয়া ইত্যাদি ছোট টবে লাগানো যেতে পারে। তবে ডালিয়া, চন্দ্রমলিস্নকা এগুলো ১০-১২ ইঞ্চি টবে লাগানো যায়। টবে মাটির সঙ্গে জৈব সার, কম্পোস্ট বা ভার্মিকম্পোস্ট মেশাতে হয়। তার মধ্যে পলিব্যাগের চারা লাগিয়ে চারার গোড়ার মাটি দুই হাতের আঙুল দিয়ে চেপে শক্ত করে দিয়ে এরপর পানি দিতে হয়। গাছে পানি দেয়ার সময় শুধু গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে ঝাঁঝরি দিয়ে গাছের ওপর থেকে বৃষ্টির মতো গাছপাতা ভিজিয়ে নিয়মিত হালকা পানি দেয়া ভালো। এতে গাছ বেশি সতেজ থাকে। প্রয়োজন মতো গাছে কাঠি পুঁতে দিতে হবে- যাতে হেলে না পড়ে।

যারা ফুলের বাগান করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য কিন্তু শীতকালটা খুব ভালো। যদি ছোট্ট ফ্ল্যাটবাড়িও হয়, বারান্দায় বা ছাদে অনায়াসে লাগিয়ে ফেলতে পারেন শীতের ফুলগাছগুলো। চন্দ্রমলিস্নকা, ডালিয়া, অ্যাস্টার, ডেইজি, কসমস, সিলভিয়া, এন্টিরিনাম, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, ডায়ান্থাস, ফ্লক্স, ভারবেনা, কারনেশান, পপি, সূর্যমুখী, পর্টুলেকা, ক্যালেন্ডুলা, হলিহক, মর্নিং গেস্নারি, সুইট পি, অ্যাজালিয়া, জারবেরা, গস্ন্যাডিওলাস প্রভৃতি। এমনকি গোলাপকেও সঙ্গী হিসেবে পেতে পারেন। টবে গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমলিস্নকা, জারবেরা, কারনেশান, ক্যালেন্ডুলা, অ্যাস্টার ইত্যাদি জন্মে। শীতেই আবার বাগান রঙিন করে তোলে হরেক রকম ফুল। সত্যি বলতে বাগানে বা আঙিনায় বসন্তের চেয়েও বেশি ফুলের সমাহার ঘটে শীতকালে। কারণ শীতের ফুলদের সবাইকেই টবে বা অল্প জায়গায় লাগানো যায়। প্রকৃতির আশীর্বাদে শীতের দিনগুলোতে ফুল ফোটে খুব ভালো। আর শীত দিনের ফুলের সংখ্যাও প্রচুর। চাইলে আপনি ১০০ রকম ফুল দিয়ে আপনার বাগান ভরে দিতে পারেন। গাঁদা ফুল দিয়ে শুরু করতে পারেন। বড় বড় ইনকা গাঁদা, ছোট ছোট চায়না গাঁদা, দেশি গাঁদা, রক্ত গাঁদা, হলুদে লাল মিশানো জাম্বো গাঁদা, লম্বা গাছে দেশের জাত রাজ গাঁদা ইত্যাদি নানা জাতের গাঁদা ফুলের চারা এখন পাওয়া যাচ্ছে আশপাশের প্রায় সব নার্সারিতেই। স্থায়ী বাগান করার চেয়ে টবে লাগানোই যেন বেশি সুবিধে। ইচ্ছেমতো টব সাজিয়ে ঘরদোরের যে কোনো জায়গায় টুকরো টুকরো বাগান করে নেওয়া যায়। আজ যেখানে গাঁদার বাগান দেখছেন, কালই সেখানে ১০টা টব সাজিয়ে করে ফেলুন চন্দ্রমলিস্নকার বাগান, পরশু করুন ডালিয়ার। এই বৈচিত্র্য কি জমিনে আনতে পারবেন? ছাদ থাকলে সেখানে টবে হরেক রকম গাছ লাগিয়ে খুব সহজে আপনিও আপনার বাড়িতে একটি ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান গড়ে তুলতে পারেন।

শীতে রোদেলা জায়গায় গাছ লাগান। গাছে পানি দেওয়ার সময় শুধু গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে ঝাঁজরি দিয়ে গাছের ওপর থেকে বৃষ্টির মতো গাছ-পাতা ভিজিয়ে নিয়মিত হালকা পানি দিন। এতে গাছ বেশি সতেজ হবে। গাছের চেহারা দুর্বল দেখা গেলে পরপর তিন-চার দিন এক ঝাঁজরি পানির মধ্যে দুই চা চামচ ইউরিয়া সার গুলে ওপরের নিয়মে সেচ দিন। সরিষার খইল কয়েকদিন একটি পাত্রে ভিজিয়ে রেখে তা গুলে ১৫ দিন পরপর গাছের গোড়ার চারদিকে দিন। অন্তত কুঁড়ি না আসা পর্যন্ত দিন। ফুল ফোটা শুরু হলে তখন থেকে ফুল ও পাতা ভিজিয়ে পানি না দেওয়া ভালো। গাঁদা ফুলের আকার বড় করতে চাইলে প্রথম কুঁড়িগুলো নখ দিয়ে খুঁটে ভেঙে দিন। স্বাভাবিক সময়ের আগে গাছে কুঁড়ি এলে তা ভেঙে দিন। গাছের গোড়া ভেজা থাকলে পানি দেবেন না। প্রতি ১০-১৫ দিন পরপর গাছের গোড়ার মাটি হালকা নিড়িয়ে দিন। ফুল শুকাতে শুরু করলে দ্রম্নত তা গাছ থেকে কেটে ফেলুন। প্যানজি গাছের বয়স হলে ফুল ছোট হয়ে আসবে। এ অবস্থায় গোড়া থেকে ছেঁটে দিলে নতুন গজানো ডালে আবার ভালো ফুল ফুটবে। অ্যান্টিরিনামের ভালো ফুল পেতে হলে শুধু মাঝের ডালটি রেখে অন্য সব ডাল কচি অবস্থায় ছেঁটে দেবেন।

সৌন্দর্য ও লাবণ্যের প্রতীক গোলাপ। এটি একটি শীতকালীন মৌসুমি ফুল। তবে বর্তমানে গোলাপ সারা বছর ধরেই চাষ করা হচ্ছে। বর্ণ, গন্ধ, কমনিয়তা ও সৌন্দর্যের বিচারে গোলাপকে ফুলের রানী বলা হয়। পুষ্পপ্রেমীদের সবচেয়ে প্রিয় ফুল গোলাপ। এটি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জলবায়ুতে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে বলে পৃথিবীর সব দেশেই সারাবছর কমবেশি গোলাপের চাষ হয়। গোলাপ সাধারণত কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, বাগান, লন, কেয়ারী, বারান্দা সাজাতে গোলাপের জুড়ি নেই। আতর ও সুগন্ধি শিল্পেও গোলাপের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চন্দ্রমলিস্নকা ফুলের জাত উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশে শীতকালই এই ফুল চাষের উত্তম সময়।

শীতকালের ফুলের মধ্যে গাঁদা অন্যতম। বিবাহ, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, গৃহসজ্জা, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও শহীদ দিবসসহ সব অনুষ্ঠানেই গাঁদা ফুলের বিকল্প নেই। কেটে যাওয়া ত্বকের রক্ত পড়া বন্ধ করতে, কাটা ঘা শুকাতে ও জীবাণুনাশক হিসেবে গাঁদা পাতার রস খুব উপকারী।

জারবেরা অ্যাসটারোস পরিবারভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ফুল। জার্মান পরিবেশবিদ ট্রগোট জার্বারের নামানুসারে এ ফুলটির নামকরণ করা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক ফুল বাণিজ্যে কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে উলেস্নখযোগ্য ১০টি ফুলের মধ্যে অন্যতম কাট ফ্লাওয়ারের জন্য ও বেশি দিন ফুলদানিতে সতেজ রাখতে জারবেরার জুড়ি নেই।

রজনীগন্ধা ফুলদানিতে এ ফুল ৭-১০ দিন সজীব থাকে এবং প্রতি রাতেই সুগন্ধ ছড়িয়ে ঘরের পরিবেশকে বিমোহিত করে। বাংলাদেশে এ ফুলের উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে এর যথেষ্ট চাহিদা। যে কোনো ধরনের উবর্র মাটিতেই গস্ন্যাডিওলাস চাষ করা যায় তবে সুনিষ্কাশিত দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি চাষের জন্য উত্তম। মাটির পিএইচ মান ৬-৭ এর মধ্যে থাকা উচিত। মাটির ঠান্ডা আবহাওয়ায় এ ফুল ভাল জন্মে। সাধাণত ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা এ ফুল উৎপাদনের জন্য উপযোগী। গস্ন্যাডিওলাস প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা আলো পছন্দ করে।

ফুল চাষ করে অনেকেই স্বচ্ছলতার মুখ দেখছে। বর্তমানে বিদেশেও ফুল রপ্তানি হচ্ছে- যা থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। তাই এখনই উপযুক্ত সময় ফুলচাষি বা ফুলপ্রেমীদের তৎপর হয়ে ওঠার। আধুনিক যুগে নগরায়ণ ও সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশ-বিদেশে ফুলের প্রয়োজনীয়তা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফুল এখন আর শুধু সৌন্দর্য ও সৌখিনতার সামগ্রীই নয়, বরং এটি এখন দেশের জাতীয় অর্থনীতি এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল চাষ, বিপণন ও ব্যবহার করছে। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হল্যান্ড প্রভৃতি দেশ অর্কিড রপ্তানি করে এবং পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ফুল রপ্তানিকারক দেশ নেদারল্যান্ডস টিউলিপ ফুল বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও বাণিজ্যিকভাবে অর্থকরী ফসল হিসেবে ফুল বিশেষ করে রজনীগন্ধা ও গোলাপ উৎপাদন ও বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের যশোর জেলার ঝিকরগাছা, শার্শা, চৌগাছা ও সদর উপজেলা এবং কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে রজনীগন্ধার চাষ হচ্ছে।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ফুল খুবই সম্ভাবনাময় ফসল। এখন দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলের চাষ বাড়ছে। দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদাও বাড়ছে। সারা বিশ্বে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ফুলের বাজার আছে উলেস্নখ করে তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজার ধরার মতো আমাদের সুযোগ আছে। সে সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে