সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৈচিত্র্যময় নাগলিঙ্গম :দুর্লভ এ গাছটির সৌন্দর্যে অভিভূত প্রকৃতিপ্রেমীরা

নাগলিঙ্গম ফল বেলের মতো গোলাকার। ওজন প্রায় চার কেজি পর্যন্ত হয়। ফলগুলো ক্যনন বল বা কামানের গোলার মতো দেখতে বিধায় এর ইংরেজি নাম ক্যানন বল ট্রি। দূর হতে ফলগুলো দেখলে মনে হয় গাছে অনেকগুলো মাটির হাড়ি গাছের গুড়িতে ঝুলে আছে। নাগলিঙ্গম ফল হাতির প্রিয় খাবার, এজন্য কোথাও এক 'হতিফল' গাছ বা 'হাতির জোলাপ গাছ' বলা হয়। দ্বিস্তরে পুরু আবরণে ঢাকা ফলগুলো ২০ সেমি ব্যাসযুক্ত। প্রতি গাছে ৫০-১৫০টি করে ফল থাকে। একটি ফলের ভেতর ৬৫-৫৫০টি পর্যন্ত বীজ থাকতে পারে। ফল পরিপক্ব হতে আটমাস থেকে এক বছর সময় নেয়।
অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ
  ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

নাগলিঙ্গমের সৌন্দর্যে অভিভূত প্রকৃতিপ্রেমী দ্বিজেন শর্মা তার শ্যামলী নিসর্গ বইয়ে লিখেছেন, 'আপনি বর্ণে, গন্ধে, বিন্যাসে অবশ্যই মুগ্ধ হবেন। এমন আশ্চর্য ভোরের একটি মনোহর অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই অনেক দিন আপনার মনে থাকবে।' নাগলিঙ্গমের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চলে। নাগলিঙ্গম আমাদের দেশে বেশ দুর্লভ। গত দুই-তিন হাজার বছর আগে এর সন্ধান মেলে ভারতে। তবে ধীরে ধীরে এটি পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বর্তমানে কম-বেশি সব দেশেই জন্মায়। নাগলিঙ্গম গাছের ফুলগুলো অদ্ভুত সুন্দর। ফুলের পরাগচক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো। হয়তো এ কারণেই এর নাম নাগলিঙ্গম। কথিত আছে নাগলিঙ্গম গাছের ফুল ও ফল একান্তই নাগ-নাগিনীর সম্পদ।

যদিও বাস্তবে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। ফল হুবহু কামানের গোলার মতো হওয়ায় এ গাছ ইংরেজদের কাছে ক্যনন বল ট্রি অর্থাৎ কামানের গোলা গাছ নামে পরিচিত। বসন্তে যেমন শিমুল গাছতলা ঝরা ফুলে ভরে থাকে, নাগলিঙ্গমের তলাও তেমনি এর অজস্র পাপড়িতে ছেয়ে থাকে। উলেস্নখ্য, নাগেশ্বর, নাগকেশর ও নাগলিঙ্গম তিনটি ভিন্ন প্রজাতি। অনেকেই নাগলিঙ্গম গাছটিকে নাগেশ্বর বা নাগকেশর নামে জানেন। তবে নাগেশ্বর বা নাগকেশর সম্পূর্ণ আলাদা গাছ বলে জানিয়েছেন দ্বীজেন শর্মা।

ফ্রান্সের উদ্ভিদবিদ জে এফ আবলেট ১৭৫৫ সালে এ গাছের বৈজ্ঞানিক নামকরণ করেন ঈড়ঁৎড়ঁঢ়রঃধ মঁরধহবহংরং আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার। পৃথিবীর অপর প্রান্ত থেকে গাছটি কবে, কেমন করে এ অঞ্চলে এসেছিল কিংবা ভারতবর্ষের কোথায় তার জন্ম হলো প্রথম, সেসব রহস্য উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের কাছেও দুর্ভেদ্য! তবে পৃথিবীর সর্বত্রই কম বেশি নাগলিঙ্গম গাছ দেখা যায়। বেশি দেখা মেলে ত্রিনিদাদ এবং ল্যাটিন আমেরিকায়। নাগলিঙ্গম নামটি সংস্কৃত হতে নেয়া। তাই এর কোনো বাংলা নাম নেই। তিন হাজার বছর আগে থেকেই গাছটি ভারত উপমহাদেশে একটি পবিত্র উদ্ভিদ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। শিব মন্দিরে নাগলিঙ্গম গাছের রয়েছে বিশেষ কদর। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শিব পূজায় নাগলিঙ্গম ফুল ব্যবহার করে। এমনকি এ গাছকে ভারতে 'শিব কামান' নামে ডাকা হয়। বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে নাগলিঙ্গম যত্নে রোপণ করা হয়। এ কারণে থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারের বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গণে নাগলিঙ্গম গাছ বেশি দেখা যায়।

প্রকান্ড বৃক্ষ। পাতা লম্বা, ডগা সূচালো। শাখার সঙ্গে প্রায় লেগে থাকে। কান্ড ধূসর। প্রায় চিরসবুজ এ উদ্ভিদটি ৮০ হতে ১১৫ ফুট উঁচু হতে দেখা যায়। বছরের প্রায় সব ঋতুতেই এই গাছের পাতা ঝরে এবং কয়েকদিনের মধ্যে আবার নতুন পাতা গজায়। গাছের গোড়ার ব্যস প্রায় ১৮ ফুট এবং কান্ড ৩০ ফুট লম্বা। ছাতিম গাছের মতো পাতা। গাছের গুচ্ছ পাতাগুলো খুব লম্বা, সাধারণভাবে সাধারণত ৫-৭ ইঞ্চি লম্বা এবং ৪-৫ ইঞ্চি চওড়া হয়। দ্রম্নত বর্ধনশীল নাগলিঙ্গম গাছের বাকলের রং ধূসর এবং অসমান। পাতার রং গাঢ় সবুজ। সাধারণত চারা রোপণের ১২-১৪ বছর পর নাগলিঙ্গম গাছে ফুল ধরে। তবে স্টেম কাটিং করলে দ্রম্নত ফুল আসে। গাছটির পাতা ঝরার দৃশ্যও বেশ মনোহর। প্রকান্ড গাছের নিচে অনবরত ঝরে পড়ে বড় বড় হলদে সবুজ পাতা। যেন এক মহোৎসব। চলে বেশ কয়েকদিন। এক সময় বৃক্ষতলে তৈরি হয় ধূসরবর্ণের পত্রকার্পেট। এ পরিবেশে যে কোনো কবি হয়তো লিখতে পারেন এক অনবদ্য কবিতা- ঝরাপাতার কাব্য। আর তাই বর্ণে, গন্ধে, উজ্জ্বলতায় তরু রাজ্যে অনন্য নাগলিঙ্গম ছাড়া বড় কোনো বাগানই যেন পরিপূর্ণ হয় না।

দ্রম্নত বৃদ্ধি এবং আকর্ষণীয় ফুলের জন্য এ গাছের কদর বেশ! শাখায় নয়, ফুল ফোটে গাছের গুড়িতে। গুড়ি ফুঁড়ে বের হয় মঞ্জুরি। তারপর ফোটে অনিন্দ্যসুন্দর নাগলিঙ্গম ফুল। পাপড়ি, রেণু, ফুলের গঠন নাগলিঙ্গমকে করেছে আরো মোহনীয়। বিরল প্রজাতির এই ফুল বেশির ভাগ মানুষের কাছে অপরিচিত। গাছের কান্ডে মঞ্জুরিতে ফুল ফুটে। কান্ডের সঙ্গে ঝুলে থাকে অসংখ্য মঞ্জুরি। কয়েক ফুট দীর্ঘ মঞ্জুরিতে বড় বড় গোলাকার ফুল ধরে। গোখরা সাপের মতো ফণা তোলা ফুলের ভেতরের দিক গাঢ় গোলাপী এবং বাইরের দিকে হালকা হলুদ বর্ণের। সাপের মতো ফণা তোলা ফুল, এ কারণে এর নামকরণ হয়েছে নাগলিঙ্গম। এক একটি মঞ্জুরিতে ১০ থেকে ২০টি ফুল ক্রমান্বয়ে ফুটতে থাকে। মঞ্জুরির একদিকে নতুন ফুল ফুটে, অন্যদিকে, পুরাতন ফুল ঝরে পড়ে। এ চোখজুড়ানো মোহনীয় দৃশ্য লিখে বুঝানো সম্ভব নয়।

গাছটির ফুল বিস্ময়কর সুন্দর! যেমন বড় তেমন চোখ জুড়ানো রং। গ্রীষ্মে ফুল ধরা শুরু হয়। বসন্তের শেষ থেকে অনেক দিন ধরে ফুল ফুটতে থাকে প্রায় শরৎকাল অবদি। ফুলগুলো কমলা, উজ্জ্বল লাল বা গোলাপি বর্ণের হয়ে থাকে। ছয়টি পাপড়িবিশিষ্ট ফুলের ব্যাস ২-৩ ফুট। পাপড়িগুলো বাঁকানো এবং পুরু। ফুলগুলো ঊর্ধ্বমুখী স্থূল ডিস্কের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই ফুলের আলাদা একটি সৌন্দর্য লক্ষ্যণীয়, আর তা হলো এর গন্ধ। তীব্র গন্ধযুক্ত এ ফুল আপনাকে মুগ্ধ করবেই। ফুলের গন্ধ সুনির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করা কষ্টকর। ফুলের গন্ধ একান্তই তার নিজের মতো- যার মাধকতা সবাইকে বিমোহিত করে তোলে। ফুল ফোটার সময় শিউলী ফুলের মতো ফুলের পাপড়ি গাছের নিচে ঝরে পড়ে থাকে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, একটি নাগলিঙ্গমের কান্ডের সঙ্গে যত ফুল ঠিক তত ফুল পড়ে আছে গাছের তলায়। একটি ফুল হাতে তুলতে না তুলতেই অন্যটি পড়ছিল। পড়ার শব্দটিও জোরালো। বড় শরীর নিয়ে উঁচু থেকে মাটিতে আঁচড়ে পড়ার কারণে প্রায়ই কিছু পাপড়ি ভেঙে যেতে দেখা যায়। ফুলে কোনো নেকটার নেই, শুধু গন্ধে পোকারা আকৃষ্ট হয়ে এর পরাগায়ণে সহায়তা করে। মূলত মৌমাছি পরাগায়ণে বাহক হিসেবে কাজ করে।

নাগলিঙ্গম ফল বেলের মতো গোলাকার। ওজন প্রায় চার কেজি পর্যন্ত হয়। ফলগুলো ক্যনন বল বা কামানের গোলার মতো দেখতে বিধায় এর ইংরেজি নাম ক্যানন বল ট্রি। দূর হতে ফলগুলো দেখলে মনে হয় গাছে অনেকগুলো মাটির হাড়ি গাছের গুড়িতে ঝুলে আছে। নাগলিঙ্গম ফল হাতির প্রিয় খাবার, এজন্য কোথাও এক 'হতিফল' গাছ বা 'হাতির জোলাপ গাছ' বলা হয়। দ্বিস্তরে পুরু আবরণে ঢাকা ফলগুলো ২০ সেমি ব্যাসযুক্ত। প্রতি গাছে ৫০-১৫০টি করে ফল থাকে। একটি ফলের ভেতর ৬৫-৫৫০টি পর্যন্ত বীজ থাকতে পারে। ফল পরিপক্ব হতে আটমাস থেকে এক বছর সময় নেয়। কখনোবা ১৮ মাস। পরিপক্ব ফল মাটিতে পড়লে ফেটে যায়। বাতাসে খানিকটা ঝাঁঝালো গন্ধ সৃষ্টি হয়। ফল পশু পাখি খেয়ে থাকে। বীজগুলোতে চুলের মতো আস্তরণ থাকে- যা এদের প্রতিকূল অবস্থা থেকে রক্ষা করে। ফলগুলো প্রচন্ড শক্ত ও আকারে বেশ বড় হওয়ায় নাগলিঙ্গম গাছ রাস্তার পাশে রোপণ না করাই ভালো, কেননা, এর পরিপক্ব ভারী ফল যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

ফল মূলত পশু পাখির খাবার। আমাদের জন্য এ ফল অখাদ্য, এমনকি ক্ষতির কারণও হতে পারে। যদিও আমাজান বনের 'সামান' জনগোষ্ঠীর কাছে এটি একটি প্রিয় খাবার! কেননা, পুরুষত্ব বৃদ্ধিতে নাকি এ ফল বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে!!! উদ্ভিদটির অর্থনৈতিক গুরুত্বও কম নয়। রয়েছে বিশেষ ভেষজ গুন। ফলের শক্ত খোলস অলংকার হিসেবে, খাবার পাত্র হিসেবে কিংবা বিভিন্ন দ্রব্য বহনে ব্যবহার করা হয়। এর ফুল, পাতা এবং বাকলের নির্যাস ওষুধ হিসেবে বহুল প্রচলিত। এটি ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্যন্য জীবণু প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে। এ গাছের বাকল, ফুল আর ফল থেকে এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাঙ্গাল, এন্টিসেপটিক, এনালজেসিক ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। এ গাছের ফল থেকে পিঠের ব্যথা, লেসম্যানিয়াসিস ও ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা করা হয়। গাছের ফুল বিভিন্ন প্রকার ব্যথা বেদনায় উপকারী। গাছের পাতা দাতের ব্যথায়, চর্মরোগ, টিউমারের লোকজ চিকিৎসায় বিভিন্নস্থানে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ফুল ও মূলের অ্যান্টিফার্টাইলিটি, ব্যথা ও প্রদাহের প্রশমনের ক্ষমতাও প্রমাণিত। গাছের কচি পাতা পেটের পীড়া দূরীকরণে কাজে দেয়। বিশেষ করে হাতির পেটে পিঁড়ায় এটি বেশ কার্যকর। পাতা থেকে উৎপন্ন জুস ত্বকের সমস্যা দূরীকরণে খুবই কার্যকর। প্রসূতি মাকে কচি ফুলের রস খাওয়ালে সন্তান প্রসব সহজতর হয়। এর পাতা ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে নিজে ডাক্তার না সাঁজতে যাওয়াই ভালো!

রূপে গুনে ভরপুর এই উদ্ভিদের সংখ্যা এখন পৃথিবীতে খুব বেশি নয়। আমাদের বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায় নাগলিঙ্গম উদ্ভিদ টিকে আছে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেডিস হলের পাশে সাতটি গাছ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুটি নাগলিঙ্গম গাছ আছে। একটি ভূতত্ত্ব বিভাগের পাশে, অপরটি কার্জন হল প্রাঙ্গণে। এছাড়াও ঢাকার রমনা উদ্যান, বলধা গার্ডেন, মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন, গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণে, নটর ডেম কলেজ প্রাঙ্গণে এ গাছ দেখতে পাওয়া যায়। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সংরক্ষিত এলাকায় এবং বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রে (বিটিআরআই) বেশ কয়েকটি গাছ এখনো আছে। নীলফামারী জেলার বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি গাছ আছে। বাংলাদেশ বন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কুমিলস্না রামমালা ছাত্রাবাস, যশোর শিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহের গৌরীপুরের পুরনো জমিদার বাড়িতে নাগলিঙ্গম গাছ আছে বলে জানা যায়। এছাড়াও বরিশালের বিএম কলেজ, ময়মনসিংহের মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, গফরগাঁও সরকারি কলেজ, জয়দেবপুর রাজবাড়ী, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বেশ কয়েকটি নাগলিঙ্গম গাছ রয়েছে। বান্দরবান এবং কক্সবাজারের কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গণেও এ গাছ দেখা যায়। তবে সবচেয়ে পুরনো গাছটি সম্ভবত ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় বিদ্যমান। আপনি চাইলে এসব জায়গায় গিয়ে দেখে আসতে পারেন এ অনিন্দসুন্দর বৃক্ষটি। আর ভালো লাগলে নার্সারি থেকে ক্রয় করে নাগলিঙ্গম গাছের চারা লাগিয়ে নিজ বাগানের শোভা বাড়াতে পারেন বৈকি !!

লেখক: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান: পস্ন্যান্ট প্যাথলজি

বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে