শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যরক্ষা ও সৌন্দর্য চর্চায় তিলের তেলের যত গুণাগুণ

কৃষিবিদ আবুল কালাম
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
স্বাস্থ্যরক্ষা ও সৌন্দর্য চর্চায় তিলের তেলের যত গুণাগুণ

তিলের নাড়ু খেতে পছন্দ করেন কমবেশি সবাই। ইদানীং অনেক স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ স্যালাডেও ভাজা তিলের ব্যবহার করছেন। শরীরের নানা রোগব্যাধি দূর করতে তিলের তেল বেশ উপকারী। বাঙালি রান্নায় খুব বেশি তিলের তেল ব্যবহার করা হয় না বটে। তবে এই তেলের এত গুণ জানলে অবাক হবেন আপনিও। ভোজনরসিক বাঙালি হরেক রকম দেশি-বিদেশি রান্নাও বাড়িত করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে এই তেলের ব্যবহার করা যেতেই পারে। তিলের তেল যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তেমনই রান্নায় এই তেলের ব্যবহার করলে তার স্বাদও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। সুস্বাস্থ্য পেতে স্যালাডের ড্রেসিং হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন এই তেল।

তিলের তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'ই ও বি', ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও প্রোটিন রয়েছে- যা চুল সুস্থ রাখতে খুবই জরুরি। নিয়মিত মাথার ত্বকে ও চুলে তিলের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে চুল পড়া কমে, খুশকি দূর হয়, নতুন চুল গজায়, চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুলের রুক্ষতা ও মাথার ত্বকের সংক্রমণ জাতীয় সমস্যা দূর হয়।

ছোট থেকে বড়, সব বয়সিদের মধ্যেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এখন বেশি। ডায়াবেটিক রোগীদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী সাদা তিল। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাদা তিলের জুড়ি মেলা ভার। এই তিলে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম- যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও এই তেলে রান্না করা ভালো। সাদা তিলের তেলে একাধিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। তাই প্রতিদিনের খাবারে এই তেল ব্যবহার করলে শরীরে ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যাদের কেমোথেরাপি নিতে হয়, তাদের খাদ্যতালিকায় এই তেল রাখার কথা বলেন পুষ্টিবিদরা। এই তেল হাড়কে মজবুত করে। তিলের তেলে রয়েছে তামা, যা গঁ্যাটের ব্যথা, পা ফুলে যাওয়া, পেশিতে ব্যথা কিংবা বাতের ব্যথার উপশমে খুবই কার্যকর। যাদের আর্থাইটিসের সমস্যা আছে তারাও তিলের তেল দিয়ে রান্না করতে পারেন, উপকার পাবেন।

চুল সহজে সাদা হওয়া থেকে রক্ষা করে। তিলের তেলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় তা চুলের অকালপক্কতা ধরায় না। চুল পাতলা হওয়া থেকে রক্ষা করে- তিলে থাকে ভিটামিন বি, আয়রন. ম্যাগনেশিয়াম, কপার সমেত অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ। বলা হয়, যদি খাদ্যে সঠিক পুষ্টি তেল থেকে না পায়, তাহলে চুল পাতলা হতে থাকে। তবে, তিলের তেলে তা হওয়া সম্ভব নয়। চুলে খুশকি যাদের বড় সমস্যা, তারা তিলের তেল ব্যবহার করে দেখতে পারেন। বলা হচ্ছে, তিলের তেলে খুশকির সমস্যা কমে যায়। এছাড়াও চুল হয় বেশ উজ্জ্বল। চুলে কোনো ফাঙ্গাস ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে না। শুষ্ক চুলের সমস্যা- তিলের তেলে থাকে একাধিক ধরনের গুণাগুণ- যা শুষ্ক চুল সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করে। শুষ্ক চুলের সমস্যা কাটাতে খুবই উপকারি এই তিলের তেল। এছাড়াও হার্টের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।

দুশ্চিন্তার কারণে অনেক সময় চুল পড়ে যায়। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে মাথায় তিলের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন। দেখবেন, দুশ্চিন্তা দূর হবে, ঘুম ভালো হবে ও চুল পড়া অনেকটা কমে যাবে। হালকা গরম তিলের তেল দিয়ে কয়েক মিনিট মাথার ত্বক ম্যাসাজ করুন। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এক সপ্তাহ এভাবে নিয়মিত মাথায় এই তেল ব্যবহার করুন। দেখবেন খুশকি একেবারে দূর হয়ে যাবে। তিলের তেল চুলে প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে। প্রথমে তিলের তেল হালকা গরম করে মাথার ত্বকে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এবার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

নিয়মিত তিলের তেল দিয়ে চুল ও মাথার ত্বক ম্যাসাজ করুন। এবার শ্যাম্পু করে চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এটি আপনার চুলের রুক্ষতা দূর করে চুল নরম ও মসৃণ করবে। তিলের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। এর ফলে নতুন চুল গজায়। এই তেল চুলকে গভীর থেকে সুস্থ রাখে এবং নিয়মিত ব্যবহারে চুলের ভেঙে যাওয়া সমস্যা দূর হয়। অনেক সময় মাথার ত্বকের সংক্রমণের কারণে মাথায় চুলকানির সমস্যা হয়। তিলের তেল সহজেই এই সংক্রমণ দূর করে। এই তেল হালকা গরম করে মাথার ত্বকের ম্যাসাজ করুন। দেখবেন, ধীরে ধীরে মাথার তালুর সংক্রমণ দূর হবে

তিলের তেল মূলত একটি ভেজিটেবল অয়েল। তিলের তেল বেশ উচ্চমাত্রায় পুষ্টিকর। কেননা, এই তেলে বেশ কিছু অ্যাসেনশিয়াল ভিটামিন যেমন- ভিটামিন ই, বি করূপস্নক্স ও ডি সমৃদ্ধ। পাশাপাশি এই তেলে আছে কপার, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। এছাড়াও তিলের তেলে রয়েছে ফ্যাটি এসিড। এর মধ্যে ৪১% লিনলিক এসিড, ৩৯% অলিক এসিড, ৮% পালমিটিক এসিড এবং ৫% স্টেরিক এসিড আছে। আর্থ্রাইটিস পেইন-এর ক্ষেত্রে এই তেল খাবার তেল হিসেবে ব্যবহার এবং মালিশ দুটোই করলে উপকার পাবেন। রান্নায় এই তেলের ব্যবহার বস্নাড প্রেশার কমায়। ডায়েটে এই তেলের ব্যবহার স্ট্রেস ও ডিপ্রেশন কমায়। তিলের তেলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকায়, যাদের প্যাচি স্কিন বা ত্বকে দাগ ছোপ আছে, তারা দিনে দুই বার এই তেল হালকা করে ম্যাসাজ করে ১৫ মিনিট রেখে দিয়ে, গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে মুছে নিলে, স্কিনটোন অনেকটাই ইভেন হয়ে যাবে।

এই তেল একটি অসাধারণ ময়েশচারাইজার। পাশাপাশি এতে ডিটক্সিফাইং উপাদান থাকায় শুষ্ক ডেড সেল দূর করে ত্বককে সফট ও হাইড্রেটেড করে তোলে। রাতে ঘুমানোর আগে দু ফোঁটা তিলের তেল যে কোনো ক্রিমের সঙ্গে মিশিয়ে ফেইসে অ্যাপস্নই করবেন। চাইলে এই তেল আপনি আপনার পছন্দের ফেইস প্যাকেও লাগাতে পারেন, তবে খুব বেশি না, দুই থেকে তিন ফোঁটা পরিমাণে।

কালো তিলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। যাদের হজমের সমস্যা আছে তাদের জন্য কালো তিল একটি ওষুধ। কালো তিল পুষ্টির ভান্ডার। এতে ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম এবং অনেক পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এতে উপস্থিত বৈশিষ্ট্য মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক। কালো তিল খেলে মানসিক সমস্যা উন্নতি করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে