শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

দেশীয় প্রজাতির কই মাছের চাহিদা বাড়ছে বাজারে

ইমরান ছিদ্দিকি
  ১০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
দেশীয় প্রজাতির কই মাছের চাহিদা বাড়ছে বাজারে

প্রাচীন কাল থেকেই কই একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু মাছ হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে- যা দেশীয় প্রজাতির মাছের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। কইমাছ কম চর্বিযুক্ত এবং পুষ্টিকর হওয়ার কারণে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই মাছটি জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যাওয়ার কারণে মাছের বাজারে এই কই মাছের দাম তুলনামূলক একটু বেশি। অতীতে কইমাছ ডোবা-পুকুর, খালবিল, হাওড়-বাঁওড় এবং পস্নাবনভূমিতে অধিক পরিমাণে পাওয়া যেত। বর্তমানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সেচের জন্য বাঁধ নির্মাণ, শিল্পকারখানার বর্জ্য, পানিদূষণ, নির্বিচারে মাছ আহরণের ফলে, প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট, ফসলি জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাছে রোগবালাই বৃদ্ধির কারণে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে কই মাছের প্রাচুর্যতা কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি খালবিল, নদীনালা, পস্নাবন ভূমি ও মোহনায় প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে কইমাছ বিলুপ্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অত্যন্ত মূল্যবান দেশীয় প্রজাতির এ মাছটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে কই মাছের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা সফলভাবে উদ্ভাবন করেছেন। এর ফলে কইমাছ চাষ ব্যবস্থাপনা যেমন সহজ হয়েছে তেমনিভাবে মাছটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। কইমাছ সাধারণত কচুরিপানা, আগাছা ও ডালপালা অধু্যষিত জলাশয়ে বসবাস করে থাকে। কম গভীরতাসম্পন্ন পুকুরে কইমাছ সহজেই চাষ করে যায়। কই মাছের অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ থাকায় বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে। এজন্য কইমাছ জীবিত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়। কই মাছের রোগবালাই কম হয় এবং বিরূপ আবহাওয়ায় নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়।

কই মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন করতে হলে কই মাছের পুকুর অবশ্যই রোদযুক্ত স্থানে হতে হবে। কই মাছের জন্য নির্বাচিত পুকুর অবশ্যই কম কাদাযুক্ত হতে হবে। পুকুরে চার-পাঁচ মাস পানি থাকতে হবে। ১৫-১০০ শতাংশ আয়তনের পুকুর নির্বাচন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে এর চেয়ে বড় বা ছোট পুকুর হলে এ মাছ চাষ করা যাবে। পুকুরের পূর্ব এবং দক্ষিণ পার্শ্বে যেন কোনো গাছপালা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উত্তর বা পশ্চিম পার্শ্বে গাছপালা থাকলে তেমন একটা অসুবিধা হয় না। যদি গাছপালা থাকে তবে গাছের পাতা যেন পুকুরে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুকুরে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। পুকুরের চারিপাশে নেট দিয়ে বেড়া তৈরি করতে হবে।

কই মাছ চার-পাঁচ মাসে ৬০-৭০ গ্রাম ওজন হয়ে থাকে। প্রতি কেজি ২০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ৪০০ গ্রাম খাদ্য খেয়ে কেজি কইমাছ উৎপাদন হবে। কইমাছ চাষে ভালো উৎপাদন পাওয়ার জন্য বেশ কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। পানির গুণাগুণ ঠিক রেখে মাছ চাষ করতে হবে।

থাই কই-এর বাণিজ্যিক চাষ একটি লাভজনক প্রকল্প হিসেবে বিবেচতি হয়ে থাকে। তাই বাণিজ্যিকভিত্তিতে পরিকল্পিতভাবে থাই কই চাষ করে যে কেউ হতে পারেন একজন সফল খামারি। চাহিদা সব সময় বেশি বলে এর মূল্য তুলনামূলকভাবে সব সময় বেশি থাকে। বিরূপ পরিবেশেও বেঁচে থাকতে সক্ষম এবং মৃতু্যর হার খুবই কম। অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়। ছোট পুকুর বা খাঁচায় চাষ করা সম্ভব। তুলনামূলকভাবে অল্প সময়ে অর্থাৎ ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই বিক্রয়যোগ্য হয়। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং বছরে একাধিকবার চাষ করা যায়। রোগবালাই নেই বললেই চলে। তুলনামূলক অল্প পুঁজিতেই চাষ করা সম্ভব। ফর্মুলা অনুযায়ী নিজ ঘরের কই-এর পিলেট তৈরি করা সম্ভব। কইমাছ মূলত কীট-পতঙ্গভুক। এ কারণে পোকামাকড়, ছোট মাছ, ব্যাঙের পোনা, শামুক, ঝিনুকের মাংস ইত্যাদি সরবরাহ করে এ মাছ চাষ করা যায়।

থাই কই এবং আমাদের দেশীয় কইয়ের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই বললেই চলে। তবে থাই কই সাধারণগত দেশি কইয়ের চেয়ে চ্যাপ্টা এবং এর শরীরের পিছনের দিকে কিছু কালো দাগ থাকে। এ মাছ দ্রম্নত বর্ধনশীল। একে পুকুর বা খাচাঁয় (কেজ কালচার) চাষ করা সম্ভব। তবে, পুকুরে চাষ করাই বেশি লাভজনক।

বতমানে ভিয়েতনামি কইমাছ চাষ লাভজনক হয়ে উঠেছে। ভিয়েতনামি কইমাছ খেতে সুস্বাদু হওয়ার কারণে বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই এই মাছ চাষ করলে এবং তা বাজারে বিক্রি করলে বেশ ভালো দাম পাওয়া যায়। ভিয়েতনামি কইমাছ কম সময়ে দ্রম্নত বৃদ্ধি পায় তাই এই জাতের মাছ চাষে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। কম সময়ে বেশি পরিমাণ লাভবান হওয়ার জন্য তাই ভিয়েতনামি কইমাছ চাষ করা ভালো। ভিয়েতনামি কই মাছের চাষ পদ্ধতি অন্যান্য মাছ চাষের তুলনায় বেশ সহজ। এই জাতের মাছ চাষ করার ফলে অন্য সব মাছের থেকে কয়েকগুণ বেশি পরিমাণ লাভবান হওয়া যায়। যারা কম জায়গায় এবং কম সময়ে মাছ চাষে লাভবান হতে চান তাদের জন্য ভিয়েতনামি কইমাছ চাষ করা সুবিধাজনক। ভিয়েতনামি জাতের কইমাছ অতি দ্রম্নত শারীরিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এই মাছ ৪ মাস সময়ে প্রায় ১৫০-২০০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। আমাদের দেশের পরিবেশ ও আবহাওয়া ভিয়েতনামি কইমাছ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এই জাতের কইমাছ আমাদের দেশে কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই চাষ করা যায়।

\হভিয়েতনামি কইমাছকে এককভাবে চাষ করার পাশাপাশি আমাদের দেশের দেশি মাছ যেমন- শিং কিংবা মাগুর মাছের সঙ্গে মিশ্রভাবেও চাষ করা যায়। ভিয়েতনামি কইমাছ চাষের জন্য আলাদাভাবে তেমন কোনো খাদ্য প্রদান করার দরকার হয় না। আমাদের দেশের চাষ করা সাধারণ সব মাছের মতোই এই মাছকে খাদ্য প্রদান করলেই হয়। পুকুরে কইমাছ চাষ করা যায়। কইমাছ মূলত কীট-পতঙ্গভুক। পোকামাকড়, ছোট মাছ, ব্যাঙাচি, শামুক বা ঝিনুকের মাংস ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করলে খাদ্য খরচ কম হয়। চাষের কই বিভিন্ন প্রজাতি পাওয়া যায়; যেমন- থাই কই, ভিয়েতনামি কই এবং দেশি কই ইত্যাদি।

কই মাছের উপকারিতা অনেক; এই মাছে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। কইমাছ রেগুলার খেলে আপনার শরীরের যে উপকার হবে- আপনার হাড়ের পুষ্টিগুণ বাড়বে। শরীরে আয়োডিন বাড়বে। কইমাছ আমদের চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়, ঠিকমতো কইমাছ খেলে আমরা শরীরের শক্তি বাড়াতে পারব। আবার কইমাছ আমদের হার্টের সমস্যা থেকে মুক্ত করে। মূলত প্রত্যেকটা মাছ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন থাকে- তবে দেশি কই মাছের মধ্যে বেশি পরিমাণ থাকে।

তাই আমরা কইমাছ বেশি বেশি করে খেতে পারি, সঙ্গে অন্য মাছগুলোও। কই মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ তেল থাকে আর এই তেল আমাদের শরীরের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আর কই মাছের তেলের জন্য বাচ্চারাও এই মাছটা অনেক পছন্দ করে থাকে। আর এই মাছটা ভেজে খেতে অনেক মজা, তাই অনেকে ভেজেও খেয়ে থাকে। কই মাছের উপকারিতা অনেক। এই মাছে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। কইমাছ রেগুলার খেলে আপনার শরীরে মধ্যে যে উপকারগুলো হবে। আপনার হাড়ের পুষ্টি গুন বাড়বে। শরীরের আয়োডিন বাড়বে। কইমাছ আমদের চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়, ঠিকমতো কইমাছ খেলে আমাদের শরীরের শক্তি বাড়াতে সক্ষম হবো। আবার কইমাছ আমদের হার্টের সমস্যা থেকে মুক্ত করে। মূলত প্রত্যেকটা মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন থাকে- যা দেশি কই মাছের মধ্যে বেশি পরিমাণ থাকে। তাই আমরা কইমাছ বেশি বেশি করে খেতে পারি, সঙ্গে অন্য মাছগুলোও। কই মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ তেল থাকে আর এই তেল আমাদের শরীর ভালো রাখে। আর কই মাছের তেলের জন্য বাচ্চা রাও এই মাছটা অনেক পছন্দ করে থাকে। আর এই মাছটা ভেজে খেতে অনেক মজা।

কই মাছে অধিক পরিমাণে ভিটামিন এ, খনিজপদার্থ, যেমন- আয়রন ও কপার রয়েছে- যা রক্তে হিমোগেস্নাবিন তৈরিতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও সহজে পচনযোগ্য চর্বি এবং অনেক অ্যামাইনো এসিড বিদ্যমান। প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য কই মাছে প্রোটিন-১৪.৮০ গ্রাম, স্নেহ-৮.৮০ গ্রাম, আয়রন-১.৩৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ০.৪২ গ্রাম, ফসফরাস- ০.৩৯ গ্রাম এবং ভিটামিন রয়েছে- ৩২.০০ গ্রাম।

কই মাছের আকার ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। গায়ের চামড়া মোটা, কালচে ও তামাটে বর্ণের আঁইশ দ্বারা আবৃত থাকে। পিঠের উপর পাখনা কাঁটাযুক্ত। এদের মাথা শক্ত ও ভোঁতা। এদের কানেতে কাঁটা থাকে। এই মাছ কখনো কখনো কানে ভর করে ডাঙায় বা গাছে উঠে পারে। এদের ফুলকা পানি এবং বাতাস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করতে পারে। এই কারণে এরা ডাঙ্গাতে দীর্ঘসময় জীবিত থাকতে পারে। কই মাছের এই বায়ু শোষক বিশেষ অঙ্গকে বলা হয় ল্যাবিরিন্থিন অঙ্গ। এছাড়া এদের দেহ ঘন আঁইশে আবৃত থাকার কারণে ডাঙ্গাতে এদের শরীর সহজে আর্দ্রতা হারায় না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে