শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মধুরেণ সমাপয়েৎ

ইকবাল হাসান
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

বাংলা সাহিত্যে পড়াশোনা করতে গিয়ে বাংলা ভাষার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হয়েছি। তাই আমরা ইংরেজি র্'যাগ ডে' শব্দ পরিহার করে আমাদের অনুষ্ঠানের বিকল্প নাম দিয়েছি 'মধুরেণ সমাপয়েৎ'। যার অর্থ কোনো কিছুর সমাপ্তি সুন্দর হওয়া বাঞ্ছনীয়। এই উক্তিটি আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিরকুমার সভা নাটক থেকে সংগ্রহ করেছি। এ সব কথা বলছিলেন বাংলা বিভাগের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফয়সাল হাবিব। যারা আর কিছুদিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ আনুষ্ঠানিকভাবে চুকিয়ে নতুন জীবনের সন্ধানে বেরিয়ে পড়বেন নানাদিকে।

বুড়ো হয়ে যাওয়া দীর্ঘ ৬ বছরের সুখ-দুঃখের অনুভূতিকে শেষবারের মতো তারুণ্যে দেখতে গত বছরের ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের দশম ব্যাচ আয়োজন করেছিল তাদের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান বা প্রচলিত শব্দে র্'যাগ ডে'।

২৬ ডিসেম্বর সকাল বেলা সাদা টি-শার্ট পরে বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে শুরু হয়র্ যালি। এর্ যালি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শেষ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন প্রদান ফটকে। এরপর কেক কেটে শুরু হয় বাংলা দশম ব্যাচের 'মধুরেণ সমাপয়েৎ'। দশম ব্যাচের পরিহিত সাদা টি-শার্টে বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও অনুজরা তাদের মনের কথাগুলো ফুটিয়ে তোলেন। প্রথম দিন শেষে দ্বিতীয় দিন দশম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা লেমন কালারের শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে রিকশায় চড়ে পুরো ক্যাম্পাস ঘোরে; যা পুরো ক্যাম্পাসের পাশাপাশি সারা বাংলাদেশেই আলোড়ন তুলেছে।

এই পুরো বিদায়ী অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফয়সাল হাবিব রিকশা চড়ার ব্যাপারে বলেন, রিকশা আমাদের বাঙালির ঐতিহ্য। এতগুলা রিকশাকে একসঙ্গে করা ছিল একটা ছোটখাটো চ্যালেঞ্জ। তা ছাড়া আমাদের কাছে মনে হয়েছে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কোনো ব্যাচ তাদের বিদায় দিনে রিকশা এনে বিদায় উদযাপন করেনি। এটা ছিল আমাদের সবার মধ্য থেকে নতুন একটা ধারণা। যেটা আমাদের অনুষ্ঠান, ক্যাম্পাস এবং পুরো বাংলাদেশকে চমক দিয়েছে।

বাংলা দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার শাওলীন বলেন, এই দিনটির সঙ্গে প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরই অনেক আকাঙ্ক্ষা এবং অনভূতি জড়িয়ে থাকে। অন্য সবার মতো আমার এবং আমার সহপাঠীদেরও এই দিনটি নিয়ে অনেক কৌতূহল এবং আকর্ষণ ছিল। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতা বিশেষ করে করোনার কারণে এ সমাপনী অনুষ্ঠান করা প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু আমাদের অদম্য ইচ্ছা এবং আমাদের কিছু বন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে আমরা এ দিনটি সফলভবে উদযাপন করতে পেরেছি।

আমরা মৃতু্যর প্রয়োজনেই বেড়ে উঠি। আর জীবন ও মৃতু্যর এই মাঝখানে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় বেড়ে উঠি, অভিজ্ঞতা নেই। এর আগেও কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করে বের হয়েছে, সামনেও যাবে। নিয়তিকে ধরে রাখার সাধ্য কারও নেই। বাংলা দশম ব্যাচ শিক্ষাজীবনের শেষ প্রান্তে। তারা বেঁচে থাকবে আমাদের ভালোবাসায়, জমানো স্মৃতিতে। সবার জীবন সুন্দর হোক সেই কামনা করি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে