বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষার মাসে মাতৃভাষা নিয়ে ভাবনা

বছর ঘুরে আবার এলো ভাষার মাস ফেব্রম্নয়ারি। ১৯৫২ সালের এ মাসে ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার রক্ষা করে। পরে বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে আসে ঊনসত্তরের গণঅভু্যত্থান। আসে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। আত্মত্যাগী বাংলার বীর রফিক, জব্বার, বরকত, সালামের রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা বিশ্বের বুকে সমাদৃত হয়ে আছে। আত্মত্যাগের এই ফেব্রম্নয়ারি মাস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আর এম রিফাত।
নতুনধারা
  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

২১ আমার গৌরবোজ্জ্বল অহমিকা

অমৃত রায়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

পলাশ কৃষ্ণচূড়ার রাঙা ফাগুনে বুকের তাজা রক্ত দিতে বুক বাড়িয়ে দেওয়া আমার ভাইয়েরা রাজপথে নেমে যে ইতিহাসের রচনা করেছে তা আমার ও আমাদের গর্বের ইতিহাস। মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করতে যে বীর প্রাণ দিয়েছে তাদের স্মরণে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে সম্মান প্রদর্শন ও শুদ্ধ বাংলাচর্চার মাধ্যমে বাংলার মান রক্ষা আমাদের কর্তব্য। বাংলার মান রাখতে ভাষা শহীদদের মর্যাদা চির অক্ষুণ্ন থাকুক। বাংলা ভাষার শুদ্ধচর্চা হউক আর বজায় থাকুক আমাদের একুশের অহংকার।

ছাত্রসমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ

নূর আলম নেহাল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

একটি দেশ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা কত গুরুত্বপূর্ণ তা জানান দেয় একুশে ফেব্রম্নয়ারি। সমাজ ও রাষ্ট্রে জেঁকে বসা- অপসংস্কৃতি এবং অনিয়ম প্রতিরোধে প্রেরণা জোগায় দিবসটি। 'বাঙালি অদম্য ও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতে জানে না' এই একাকার হয়ে দেশ গড়ার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ফলে এ দেশে একের পর এক ন্যায্য আন্দোলন সফল হয়েছে। বিশ্ব মানচিত্রে রচিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম পৃথিবী যতদিন রবে, বাংলা ভাষাও রবে ততদিন। ফেব্রম্নয়ারি মাস বাঙালি জাতির কাছে আত্মত্যাগের, শ্রদ্ধা, অহংকারের মাস।

বাংলা ভাষা হোক অস্তিত্বের পরিচয়

সাঈমা আক্তার

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মাতৃভাষা ব্যক্তিগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বিকাশে বিশাল ভূমিকা রাখে। মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলে একটি জাতির আত্মমর্যাদা, সামাজিক ও ভৌগোলিক অবস্থানগত সম্মান এবং বিভিন্ন জাতিগত পটভূমি গঠনে সবার জন্য সমান সুযোগ সরবরাহ করা সম্ভব হয়। ভুলভাল ইংরেজি বলতে পারাকে গর্ব নয়, শুদ্ধ বাংলা বলাকেই যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যে দেশ ও জাতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে অহংকার করে, সে দেশে ভাষাচর্চাকে উৎসাহিত করার জন্য কোনো রাষ্ট্রীয় নীতি নেই। পরিবার থেকে প্রশাসন সব জায়গাতেই শুদ্ধ ও পরিশীলিত বাংলা ভাষার প্রচলন চালু করতে হবে। বাংলা নিয়ে গবেষণার উপর আরও বেশি করে জোর দিতে হবে। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা শুদ্ধভাবে জানা এবং বলা যেমন জরুরি তেমনি আমাদের আঞ্চলিক ভাষাগুলোকেও আগামী প্রজন্মে প্রবাহিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। তবেই কেবল মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধার ব্যাপারটা আরও বেশি উপলব্ধি করা যাবে। একই সঙ্গে বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা আঞ্চলিক ভাষার শব্দগুলোও বেঁচে থাকবে অনেকদিন।

সর্বস্তরে মাতৃভাষার ব্যবহার নিশ্চিত হোক

সাফায়েত হোসেন আকাশ

শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ভাষাসংগ্রামী তরুণদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার পিচঢালা রাজপথ ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবির আন্দোলন। ত্যাগের এ মাসে এত ভাষার মধ্যে আমাদের ২১ ফেব্রম্নয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষার আবেগ সংক্রমিত করতে হবে, বাংলা ভাষার ইতিহাস-ঐতিহ্য ভালোভাবে জানতে হবে।

জানাতে হবে নিজস্ব সংস্কৃতির চেয়ে কোনো সংস্কৃতিই বড় নয়। মাতৃভাষার উন্নয়ন এবং সর্বস্তরে ব্যবহারের প্রসার ঘটাতে হবে। তবেই বাংলা ভাষার মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে।

শহীদদের চেতনা হৃদয়ে লালন করতে হবে

শেখ মোহাম্মদ আতিফ আসাদ

সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ, জামালপুর

পৃথিবীতে একমাত্র জাতি আমরাই। যারা কিনা শুধু ভাষাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন যুদ্ধ পরবর্তিতে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। আমাদের উচিত এই শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাকে সর্বোচ্চ সম্মানের মাধ্যমে পালিত করা।

আমাদের তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের শেকড় পর্যন্ত আমাদের সেই শহীদ ভাইদের চেতনা পৌঁছে দিতে হবে। না হলে আমাদের ভাষা, সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হয়তো সেভাবে জন্মাবে না। যার ফলে আমাদের চেতনা বিনষ্ট হতে পারে। তাই এই মাসের মাহাত্ম্য তরুণ প্রজন্ম তথা জনগণের সামনে তুলে ধরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে