শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ঘুরে এলাম জাফলং

চারপাশের পরিবেশ দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ওপারে মেঘালয়ের পাহাড়ের উপরের ঘরগুলো দেখতে খুবই মনোরম ছিল। ফটোগ্রাফার এসে দাঁড়ালো। সবাই ছবি তুলল। আমিও তুললাম। বাংলাদেশ ও মেঘালয়ের মধ্যবর্তী গোয়াইন নদীর দিকে যাত্রা করলাম।
মো. ওসমান গনি
  ১৪ মে ২০২২, ০০:০০

আলামিনের আহ্বানে কেরাতের কোর্সে আমরা কজন হাজির হলাম সিলেটের চান্দাইপাড়া ফাজিল মাদ্রাসাতে। সিলেটে আসার আগেই পরিকল্পনা ছিল জাফলং ভ্রমণ করব?। সিলেটে এসেই তড়িঘড়ি করে প্রস্তুতি শুরু করলাম জাফলং যাওয়ার জন্য। প্রিন্সিপাল হুজুর আমাদের জন্য একটি হাইস গাড়ি ঠিক করে দিলেন। কুষ্টিয়া থেকে সিলেটের দীর্ঘ যাত্রার ফলে সবার পকেটের অবস্থা নাজেহাল ছিল। আহসান হাবীব ও আশিক কিছুটা গড়িমসি করলেও অবশেষে যাওয়ার জন্য সম্মত হলো। যথারীতি ৯ এপ্রিল শনিবার সকালে গাড়ি এসে উপস্থিত হলো মাদ্রাসায়। আমার আবার গভীর ঘুম। সবাই ঘুম থেকে উঠলেও আমাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য যুবায়েরের বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। আমাদের সাথে কারী রুহুল কারিম হুজুর ও রুস্তম আলী স্যারও একত্রিত হলেন। আমরা ১৩ জন রওনা হলাম জাফলং অভিমুখে। সকাল সকাল রওনা হওয়ায় সড়ক অনেকটা ফাঁকাই ছিল। গাড়ি এগিয়ে চলল তার গন্তব্যে। আবহাওয়াটা মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় ভ্রমণে অন্যরকম আমেজ পাচ্ছিলাম। সড়কের দুই পাশে চা বাগান দেখে সবাই ভিডিও করা শুরু করল। বিশেষ করে যখন মেঘের আড়ালে আবছা আবছা মেঘালয়ের পর্বতমালা দৃশ্যমান হতে থাকল তখন সবাই উৎফুলস্নতার সঙ্গে আলস্নাহর বড়ত্বের শুকরিয়া আদায় করল এবং যুবায়ের, আশিক ও জাহিদ কোরআন ও হাদিসের আলোকে পাহাড়ের বর্ণনার সঙ্গে ভিডিও করতে থাকে। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে সকাল ৯ ঘটিকার সময়ে জাফলং পৌঁছলাম।

চারপাশের পরিবেশ দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ওপারে মেঘালয়ের পাহাড়ের উপরের ঘরগুলো দেখতে খুবই মনোরম ছিল। ফটোগ্রাফার এসে দাঁড়ালো। সবাই ছবি তুলল। আমিও তুললাম। বাংলাদেশ ও মেঘালয়ের মধ্যবর্তী গোয়াইন নদীর দিকে যাত্রা করলাম। বেশ আনন্দের সঙ্গে পাহাড়ের উপর থেকে নেমে শ্বেতপাথরের নদী গোয়াইনের পাড়ে গেলাম। ওপাড়ের মেঘালয়ের ডাউকি জেলার দৃশ্যগুলো খুবই মনোমুগ্ধকর ছিল। পাহাড়ের মধ্যদিয়ে সাপের মতো পেঁচিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলোর দৃশ্য ছিল খুবই উপভোগ্য। ভারত অংশে অবস্থিত দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী ঝুলন্ত সেতু পেয়ে আমরা সবাই কিছু পিক নিলাম। স্বচ্ছ পাথরের নিচে শ্বেতপাথরের দৃশ্যটাও খুব সুন্দর ছিল। এরই মধ্যে আশিক, শামীম, সাব্বিরসহ কয়েকজন ভারতের সীমানায় প্রবেশ করলে বিএসএফ দূর থেকে চিৎকার করে ওঠে। কিছুক্ষণ জাফলং মনোরম সুশোভিত দৃশ্য উপভোগ করলাম। এরপর একটা ট্রলার ঠিক করলাম মায়াবী ঝর্ণা, চা বাগান ও খাসিয়া পলস্নী যাওয়ার জন্য।

গোয়াইন নদীর বুক চিরে ট্রলার এগিয়ে চললো তার গন্তব্যে। নদীর পানিগুলো ছিল খুবই স্বচ্ছ ও শীতল। কিছুক্ষণ পর পৌঁছে গেলাম খাসিয়া পলস্নীতে। তাদের ঘরগুলো ছিল মাচার উপরে। মাতৃতান্ত্রিক খাসিয়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান, পরিধেয় পোশাক, খাদ্য ও ভাষা আমাদের চেয়ে অনেকটা ভিন্ন প্রকৃতির। তবে তাদের রাজবাড়িটা ছিল আকর্ষণীয়।

এরপর চলে এলাম সংগ্রামপুঞ্জি চা বাগানে। বৃহৎ সুবিশাল সুবিস্তর চা বাগানটি দেখে মনে হচ্ছিল এর হয়তো শেষ নেই। কাছ থেকে প্রথম দেখেছি এরকম চা বাগান। এর আগে কখনো দেখা হয়নি। তবে বাগানটিতে জোঁকের বেশ উপদ্রব ছিল। যার ফলে সেখানে বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব হয়নি। এরপর আসলাম সংগ্রামপুঞ্জি মায়াবী ঝর্ণাতে। সরাসরি কাছ থেকে ঝর্ণাও এই প্রথম দেখেছি। আমার সঙ্গের সবাই এই প্রথম সরাসরি কাছ থেকে ঝর্ণা দেখেছে।

সবাই নেমে পড়লাম ঝর্ণার পানিতে। পাথর বেয়ে আসা পানিগুলো আছড়ে পড়ছিল আমাদের ওপর। শামিম, মাহমুদ ও নাসিমসহ সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল ছবি তোলা নিয়ে। নিষেধ থাকা সত্ত্বেও আমি একটু সাহস করে পাথর বেয়ে উঠে গেলাম ঝর্ণার চূড়ায়। উঠতে কিছুটা ভয়ও পেয়েছিলাম। আমার দেখাদেখি জাহিদ ও আশিকও উঠল। কিছুক্ষণ ঝর্ণার শীতল পানিতে স্নান? করে ফিরে এলাম আমাদের গাড়ির নিকট। এমনিতেই সবাই রোজা ছিলাম। বেশিক্ষণ থাকাটা কষ্টকর ছিল। ফেরার পথে নিচ থেকে উপরে উঠতে সবার বেশ কষ্ট হয়েছিল।

এরই মধ্যে ফটোগ্রাফার ভাই প্রায় ৯৫০টি ফটো তুলে ফেললো। এবং ফটো বাবদ ২০০০ টাকা দাবি করে। এতগুলো ফটো আর টাকার পরিমাণ দেখে সবাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। পরে স্যার বুঝিয়ে-শুনিয়ে ১৬০০ টাকা দিয়ে আসে।

এরপর আমরা রওনা হলাম শাহ পরাণের (রহ.), শাহ জালালের (রহ.) মাজার ও জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর সমাধির উদ্দেশ্যে?। শাহ পরাণ (রহ.) মাজার ও শাহ জালাল (রহ) মাজার জিয়ারতসহ গজাল মাছ, জালালী কবুতর ও এমজি ওসমানীর সমাধি পরিদর্শন করে সন্ধ্যায় ফেরে মাদ্রাসায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে