মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

একদল রক্তযোদ্ধার গল্প

জরুরি রক্তের প্রয়োজন! এমন খবর শুনলেই তারা অস্থির হয়ে ওঠে। নেমে পড়েন রক্ত জোগাড় করতে। রক্ত জোগাড় হলে রক্তদাতাকে নিয়ে রোগীর ঠিকানায় পৌঁছে যান হাসপাতালে। কখনো কখনো নিজেই রক্ত দিয়ে ফেরেন হাসিমুখে। বিপদে অন্যের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করাই যেন ওদের নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলছিলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনই একদল রক্তযোদ্ধার কথা। রক্ত সংগ্রহ করে দিতে পারলেই তারা আত্মতৃপ্তি পান। তাদেরই অনূভূতির কথা তুলে ধরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী -রুখসানা খাতুন
নতুনধারা
  ২১ মে ২০২২, ০০:০০
অনন্যা রহমান

সাধ্যমতো রক্ত জোগাড় করার চেষ্টা করি

শ্যামলী খাতুন

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

মানুষ যখন খুব বিপদে পড়ে তখন অন্যকারও শরণাপন্ন হয়। বিশেষ করে যখন রক্তের প্রয়োজন হয় তখন মানুষ দিশাহারা হয়ে ওঠে। কোথায় পাবে, কীভাবে পাবে, কার সঙ্গে যোগাযোগ করলে রক্ত পাওয়া যাবে? সেই চিন্তা যেন তখন আকাশ সমান হয়ে দাঁড়ায়।

এরই মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি হয় তখন, যখন কারও বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারি। রক্তের পোস্ট বা মেসেজ পেলেই সাধ্যমতো চেষ্টা করি রক্ত জোগাড় করার জন্য। যখন রক্ত জোগাড় করে দিই তখন রক্ত গ্রহীতা ও তার আত্মীয়-স্বজনের হাসিমুখ দেখতে পাই। তখনকার অনুভূতি বোঝানোর মতো নয়। রক্ত জোগাড় করে দিলে মনে প্রশান্তি কাজ করে। কারও মুখে হাসি ফোটাতে পারার আনন্দ আসলেই অন্যরকম।

রক্তদাতা যেন আবার রক্তদানে অনুপ্রাণিত হয়

নাহারুল আলম

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

রক্ত আর সুচ আমার দারুণ ভীতির কারণ। রক্তদানের কথা সে জন্য কল্পনায় আসেনি। দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালে অনেক অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইদ্রিস ভাইয়ের উৎসাহে হরিণাকুন্ডে প্রথমবার রক্ত দিই। তারপর থেকে নিজেও জড়িত হয়ে গেলাম মানবসেবায়। প্রায় শতাধিক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছি। ডোনারের সঙ্গে হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে রোগী ও তাদের স্বজনের মুখে হাসি ফোটানোর মতো আনন্দের মুহূর্ত আরকি আছে! এ যেন এক স্বর্গীয় প্রশান্তি। অনেক সময় রক্ত সংগ্রহে অপরাগ হলে কেউ কেউ কটু কথা বলে। কিন্তু তাদের কটু কথায় কখনো কিছু মনে হয়নি। চাহিদা অনুযায়ী রক্ত সংগ্রহ করতে পারলে নিজেই আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করি। রক্তদানে সবাইকে উৎসাহিত করা উচিত। রক্তদাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে, যেন তারা রক্তদানে অনুপ্রাণিত হয়। জয় হোক মানবতার, জয় হোক সকল রক্তদাতার।

রক্তের গুরুত্ব বোঝা যায় যখন কাছের কারও রক্তের প্রয়োজন হয়

সাথী খাতুন

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

রক্ত কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বুঝতে পারা যায় যখন নিজের কাছের কারও রক্তের প্রয়োজন হয় এবং তার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হয়।

একদিন আমার এক নিকটাত্মীয় মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। যখন তার রক্তের প্রয়োজন হয় অনেক খোঁজাখুঁজির পরও রক্ত পাচ্ছিলাম না। অবশেষে এক ভাইয়া রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন। তিনি একটি রক্তদান সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেদিনই বুঝেছিলাম এক ব্যাগ রক্তের জন্য মানুষ কতটা অসহায়ভাবে খোঁজাখুঁজি করে। সেই থেকে আমিও রক্তদান সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। অনেক অসহায় মানুষকে রক্ত জোগাড় করে দিয়েছি।

লাল ভালোবাসা দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচিয়ে যেমন মানুষের উপকার করা যায়, তেমনি পাওয়া যায় মানসিক তৃপ্তি। মানুষের রক্তের ব্যবস্থা করে তাদের মুখের হাসি দেখলে অন্যরকম একটা শান্তি কাজ করে।

গ্রহীতার হাসিমুখ দেখলেই তৃপ্তি পাই

অনন্যা রহমান

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

রক্ত সংগ্রহ করা খুব কঠিন না হলেও খুব একটা সহজ নয়। রক্তের জন্য কেউ জানালে বা কল করলে সংগ্রহ না হওয়া পর্যন্ত মনে একটা অস্বস্তি কাজ করে। রক্ত সংগ্রহ করার পর মনের মধ্যে অজানা এক ভালোলাগা কাজ করে। এ ছাড়া রক্ত গ্রহীতার বা তার কাছের মানুষজনের হাসিভরা মুখে তৃপ্তির ঢেঁকুর।

রক্তের অভাবে প্রতি বছর অনেক রোগীর প্রাণ সংকটের মুখে পড়ে। সংকটাপন্ন বা মুমূর্ষু ব্যক্তির জন্য এক ব্যাগ রক্ত তার আপনজনদের কাছে যেন অমূল্য। আপনার এক ব্যাগ রক্তে বাঁচতে পারে একজনের প্রাণ। তাই সবার রক্তদান সম্পর্কে সম্যক ধারণা, রক্তদান ও সংগ্রহে সর্বদা প্রস্তুত থাকা উচিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে