সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৩ চৈত্র ১৪২৯
walton

রক্তই হোক আত্মার বাঁধন

ওমর আসিফ
  ০৯ জুলাই ২০২২, ০০:০০

মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। নিজেদের মধ্যে রক্তারক্তি, খুনোখুনি, যুদ্ধ-বিগ্রহের মতো নিকৃষ্ট ঘটনা রয়েছে মানব-ইতিহাসে। আবার একজনের বিপদে নিজের জীবন বিলিয়ে দেওয়ার মতো বহু ঘটনার সাক্ষী এই পৃথিবী। মানুষের কল্যাণে নিবেদিত রয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তেমনি একটি অরাজনৈতিক, অসাম্প্রদায়িক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'বাঁধন'।

'একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন'- এই সেস্নাগানকে বুকে ধারণ করে একদল উদ্যমী, স্বপ্নবাজ তরুণের হাত ধরে যাত্রা শুরু বাঁধনের। যার মূল লক্ষ্য স্বেচ্ছায় রক্তদানকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করা। ১৯৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহাম্মদ শহীদুলস্নাহ্‌ হলে 'বিনামূল্যে রক্তের গ্রম্নপ নির্ণয় কর্মসূচি'র মাধ্যমে এই সংগঠন কার্যক্রম শুরু করে। বাঁধনের প্রত্যেক কর্মী স্বপ্ন দেখে সেই বাংলাদেশের যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক সব তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসবে, রক্তের অভাবে মারা যাবে না কোনো রোগী। মুমূর্ষু রোগীর রক্তের প্রয়োজনে এগিয়ে আসে নির্ভীক বাঁধন কর্মীরা।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত দেশের সবচেযে বড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাঁধনের কার্যক্রম ছড়িয়েছে দেশব্যাপী। দেশের ৭৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৪০টি ইউনিট ও ১২টি জোন নিয়ে কাজ করছে সংগঠনটি। নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু করা হচ্ছে বাঁধনের নতুন ইউনিট এবং তৈরি হচ্ছে কর্মী। বাঁধনের তথ্যমতে, ২০২০ এবং ২০২১ সালে মোট ১০,৯৭২ জন নতুন রক্তদাতা তৈরি এবং ৪৫,৩৮২ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া সচেতনামূলক কর্মসূচি হিসেবে গত এক বছরে ৮১,৫৪১ জনকে বিনামূল্যে রক্তের গ্রম্নপ জানানোর পাশাপাশি রক্তদানে উৎসাহিত করেছে বাঁধন।

বাঁধনের ১২টি জোনের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জোন অন্যতম। ২০০০ সাল থেকে বাকৃবি বাঁধন জোনাল পরিষদ কার্যক্রম শুরু করে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের নানা প্রান্তের মুমূর্ষু রোগীর রক্তের প্রয়োজন মেটাতে কাজ করে যাচ্ছে এই জোনের কর্মীরা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বাঁধন ট্রান্সফিউশন সেন্টারের মাধ্যমে মোট ৩১৩২৬ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে মুমূর্ষু রোগীদের জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা করা হয়। পাশাপাশি ৫৩৪৫৬ জনের রক্তের গ্রম্নপ নির্ণয়ে সক্ষম হয়েছে বাকৃবি বাঁধন জোনাল পরিষদ।

শুধু রক্তদানে উৎসাহ দেওয়া বা রক্ত সংগ্রহে সীমাবদ্ধ নয় বাকৃবি বাঁধন জোন। বহুমাত্রিক কার্যক্রমেও অনন্য নিজেরা। পথশিশু, দরিদ্র কর্মচারী, হতদরিদ্র ও অসচ্ছলদের মধ্যে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয় বাঁধনের পক্ষ থেকে। অসহায় শীতার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয় শীতবস্ত্র।

বিশ্ব রক্তদাতা দিবস, জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবসে পরিচালনা করা হয় নানা কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে মিল রেখে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, মহান স্বাধীনতা দিবস ও মহান বিজয় দিবসে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করে সংগঠনটি। এ ছাড়া উলেস্নখযোগ্য কর্মকান্ডগুলো হলো- দুর্যোগকালীন সময়ে আর্তের সেবা, ইফতার মাহফিল আয়োজন, মৌসুমি ফল উৎসব ও পহেলা বৈশাখ উদযাপন। বাঁধন কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন কর্মশালা। বাঁধন কর্মীদের মধ্যকার বন্ধনকে শক্তিশালী করতে বনভোজন এবং প্রতিটি হলে চা-চক্রের আয়োজন করা হয়।

সংগঠনের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাইলে বাকৃবি বাঁধন জোনাল পরিষদের সভাপতি এস এম আশিক রায়হান জানান, স্বেচ্ছায় রক্তদানকে উৎসাহিত করতে সংগঠনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যতিক্রমধর্মী কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অতীতের কার্যনির্বাহী পরিষদের মতো রক্ত সংগ্রহের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাবে বর্তমান পরিষদ। রক্তের প্রয়োজনে নতুন নতুন নির্ভীক বাঁধন কর্মী তৈরিতে আমরা কাজ করব।

সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে চলুক বাঁধন। সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে যাক বাঁধনের সেবাগুলো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে